Lok Sabha Election 2024

নিজের বঞ্চনাই প্রচারে আনবেন সোনামনি

ঝাড়খণ্ডের পূর্ব সিংভূম জেলার মানগো থানার কড়িয়ার বাসিন্দা সোনামনি বছর নয়েক আগে বিয়ে করে বান্দোয়ানের আসনপানিতে শ্বশুরবাড়িতে এসেছেন।

Advertisement

রথীন্দ্রনাথ মাহাতো

বান্দোয়ান শেষ আপডেট: ৩১ মার্চ ২০২৪ ০৬:০৩
Share:

ঝাড়গ্রাম লোকসভা কেন্দ্রে সিপিএম প্রার্থী সোনামনি মুর্মু(টূডু)। ছবি-রথীন্দ্রনাথ মাহাতো।

ঝাড়গ্রাম লোকসভা কেন্দ্রের জন্য পাশের জেলা পুরুলিয়ার বান্দোয়ানের এক বধূকে প্রার্থী করে চমক দিল সিপিএম। ২০০৯ সাল থেকে বান্দোয়ান বিধানসভা ঝাড়গ্রাম লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্ভুক্ত হলেও বড় রাজনৈতিক দলগুলির ঝাড়গ্রাম থেকে প্রার্থী নির্বাচন করাই যেন দস্তুর হয়ে উঠেছিল। সেই প্রচলিত ধারণা ভেঙে বামফ্রন্ট প্রার্থী করেছে বান্দোয়ানের কুচিয়া পঞ্চায়েতের আসনপানি গ্রামের বধূ সোনামনি মুর্মুকে (টুডু)। নিজেদের এলাকা থেকে প্রার্থী পেয়ে উজ্জীবিত বান্দোয়ানের বাম নেতা-কর্মীরা।

Advertisement

সিপিএমের পুরুলিয়া জেলা সম্পাদক প্রদীপ রায় বলেন, ‘‘আমাদের বিধানসভারই প্রত্যন্ত এলাকার ওই বধূকে নির্বাচনে লড়াইয়ের জন্য উচ্চ নেতৃত্ব সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কুঁচিয়া পঞ্চায়েতের সদস্য সোনামনি মনস্তত্ত্ব নিয়ে স্নাতকোত্তর করেছেন। সাঁওতালি, বাংলা, ইংরেজি ও হিন্দিতে কথা বলতে পারেন। দলের বিভিন্ন কর্মসূচিতেও তিনি থাকেন। তাঁর জয়ের ব্যাপারে আমরা ১০০ শতাংশ আশাবাদী।’’

ঝাড়খণ্ডের পূর্ব সিংভূম জেলার মানগো থানার কড়িয়ার বাসিন্দা সোনামনি বছর নয়েক আগে বিয়ে করে বান্দোয়ানের আসনপানিতে শ্বশুরবাড়িতে এসেছেন। বাড়িতে স্বামী, এক বছরের ছেলে ও শ্বশুর-শাশুড়ি রয়েছেন। স্বামী মণীশ টুডু বান্দোয়ানের কুমড়া পঞ্চয়েতের চুক্তিভিক্তিক কর্মী।

Advertisement

সোনামনি জানান, তাঁর স্বামীর দাদু সিপিএম কর্মী ছিলেন। সে জন্য মাওবাদীদের অত্যাচারের শিকারও হয়েছেন। রাজ্যে পালাবদলের পরেও উন্নয়ন পৌঁছয়নি তাঁদের গ্রামে। তাঁর দাবি, গ্রামবাসী নিজেদের উদ্যোগে বিদ্যুৎ সংযোগের ব্যবস্থা করেছে, পানীয় জলের সমস্যা মিটিয়েছেন। সেই লড়াইয়ে তিনিও ছিলেন। গত বছর প্রথম সিপিএমের হয়ে তিনি পঞ্চায়েত ভোটে দাঁড়ান এবং জয়ী হন। তবে সোনামনির অভিযোগ, ‘‘বিরোধী পঞ্চায়েত সদস্য হওয়ায় আমার প্রস্তাব তৃণমূলের প্রধান কানে তোলেন না। তবুও লড়াই করার চেষ্টা করছি।’’

দৈনন্দিন জীবনের এই ‘বঞ্চনা’র কথাই লোকসভা ভোটের প্রচারে আনতে চান সোনামনি। তিনি বলেন, ‘‘রাজ্য সরকার বলছে, জঙ্গলমহল হাসছে! অথচ এখনও অনেক গ্রামে জলের সমস্যা রয়েছে। রাস্তার ধারে বাড়ি হওয়ায় দেখতে পাই, রোজ সকালে অন্তঃসত্ত্বা মাকে ঝাড়খণ্ডে কাজে যেতে হচ্ছে। আমার মতো উচ্চশিক্ষিতরা সরকারি চাকরিতে দুর্নীতির জন্য কাজ পাচ্ছেন না। রাজনৈতিক বৈষম্যের কারণে আমার বাড়ির সামনের রাস্তা কাঁচাই রয়ে গিয়েছে। ভাতা দিয়ে কি আর উন্নয়ন সম্ভব? প্রচারে এ সব কথাই বলব।’’

যদিও বান্দোয়ানের তৃণমূল বিধায়ক রাজীবলোচন সরেনের দাবি, ‘‘এলাকার রাস্তা, পানীয় জলের সমস্যা আগের মতো নেই। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রচুর উন্নয়ন করেছেন। আমরা সিপিএমের মতো সরকারি পরিষেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে ‘আমরা-ওরা’ করি না। সিপিএম প্রার্থীও তো লক্ষ্মীর ভান্ডারের টাকা পান। এটাই তো সব চেয়ে বড় উদাহরণ।’’

সোনামনির দাবি, ‘‘লক্ষ্মীর ভান্ডার তো সরকারি টাকা, ওটা আমার প্রাপ্য। কোন দল দিলে নিতাম না। তবে এখানে বৈষম্য রয়েছে বলেই আমার শাশুড়ি আবেদন করেও লক্ষ্মীর ভান্ডারের টাকা পাচ্ছেন না। এমন অনেকে রয়েছেন। সত্যিকারের উন্নয়ন হলে কর্মসংস্থান হত, ভাতা দেওয়ার প্রয়োজন হত না। এলাকাবাসীর কর্মসংস্থানের জন্য় সংসদে সরব হতে চাই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন