—প্রতীকী ছবি।
অনেক অপেক্ষার পরেও আসন সমঝোতার প্রশ্নে ইন্ডিয়ান সেক্যুলার ফ্রন্টের (আইএসএফ) তরফে ‘নমনীয়তা’র ইঙ্গিত পাচ্ছে না সিপিএম। ডায়মন্ড হারবার লোকসভা কেন্দ্রে তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে আইএসএফের চেয়ারম্যান নওসাদ সিদ্দিকীর প্রার্থী হওয়ার প্রস্তাবে সমর্থনের ঘোষণা করে দেওয়া সত্ত্বেও তাঁর তরফে স্পষ্ট জবাব মিলছে না। এমতাবস্থায় আইএসএফ-কে ছাড়াই লোকসভা ভোটের অঙ্ক কষা শুরু করতে চাইছে সিপিএম। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আইএসএফের জন্য ধরে রাখা আসন নিয়ে কংগ্রেসের সঙ্গে কথা বলতে চলেছে তারা।
সমঝোতার প্রক্রিয়া চলাকালীনই রাজ্যের ৮ লোকসভা আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছিল আইএসএফ। তার মধ্যে সিপিএম বা কংগ্রেসের প্রার্থী আছে, এমন কয়েকটি আসনও ছিল। শ্রীরামপুর, উলুবেড়িয়া, মালদহ দক্ষিণের মতো আসন থেকে আইএসএফ-কে প্রার্থী তুলে নেওয়ার বার্তা দেওয়া হয়েছিল সিপিএমের তরফে। দফায় দফায় আইএসএফের সঙ্গে আলোচনা চালিয়েছেন সিপিএমের রাজ্য কমিটির সদস্য ও আইনজীবী-সাংসদ বিকাশ ভট্টাচার্য। বামফ্রন্টের শরিক দল এবং কংগ্রেসের জন্য কেন্দ্র ছেড়ে আইএসএফের জন্য তিনটির বেশি আসন দেওয়া কঠিন, এই কথাই তাদের বোঝানোর চেষ্টা করা হয়েছিল। একই সঙ্গে বলা হয়েছিল, ডায়মন্ড হারবারে নওসাদ প্রার্থী হলে সিপিএম ও কংগ্রেস মিলিত ভাবেই তাঁকে সমর্থন করবে। কিন্তু কোনও কিছুতেই ‘ইতিবাচক’ সাড়া মেলেনি বলে সিপিএম সূত্রের খবর। সেই কারণেই এ বার নওসাদদের জন্য ধীরে ধীরে দরজা বন্ধ করতে চাইছে আলিমুদ্দিন স্ট্রিট।
পরিস্থিতির নাটকীয় পরিবর্তন না হলে ডায়মন্ড হারবারে সিপিএম প্রার্থী করবে দলের রাজ্য কমিটির তরুণ সদস্য এবং এসএফআইয়ের প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি প্রতীক-উর রহমানকে। তিনি আগে বিধানসভায় ডায়মন্ড হারবারে লড়েছিলেন। বাম ও কংগ্রেস মিলিয়ে এখনও পর্যন্ত রাজ্যের ৩১টি আসনে প্রার্থী ঘোষণা হয়েছে। সিপিএম সূত্রের খবর, বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু ফের কংগ্রেসের সঙ্গে কথা বলবেন বাকি আসনে রফার বিষয়ে। দুই বিধানসভা কেন্দ্র ভগবানগোলা ও বরাহনগরের উপনির্বাচনে প্রার্থী দেওয়া নিয়েও আগে কংগ্রেসের সঙ্গে ফয়সালা করা হবে। তার পরে বামফ্রন্টের বৈঠক করে বামেরা তাদের বাকি কয়েকটি আসনের প্রার্থী ঘোষণা করতে পারে। সিপিএমের এক পলিটব্যুরো সদস্যের কথায়, ‘‘বিজেপি ও তৃণমূলের বিরুদ্ধে এই সমঝোতায় আইএসএফ আর আসতে চাইছে না, এটাই এখন বোঝা যাচ্ছে। কেউ কেউ হয়তো ওদের ভুল বোঝাচ্ছে। ওরা হয়তো ভাবছে, বাংলায় এমআইএম-এর মতো একটা শক্তি হয়ে উঠবে! আমরা বোঝানোর অনেক চেষ্টা করেছি। এ বার কংগ্রেসের সঙ্গে আলোচনা করে আমরা যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার, নিয়ে ফেলব।’’
তাঁরা যে নিজেদের জায়গা থেকে সরতে চাইছেন না, নওসাদের বক্তব্যেও তার ইঙ্গিত মিলছে। তিনি বলেছেন, ‘‘আমরা ৮টি আসনে প্রার্থী দিয়েছি। জোটের স্বার্থে ৮টিতেই সীমাবদ্ধ থাকতে চাইছি। দু’টি বড় দল যদি আমাদের ‘সাইড লাইন’ করার চেষ্টা করে, আমাদের ৩-৪টে তেই সীমাবদ্ধ রাখে, তখন আমরা আটের জায়গায় দ্বিগুণ বা তারও বেশি জায়গায় প্রার্থী দেব!’’ মালদহ জেলার কালিয়াচক ও চাঁচলে দলের কর্মিসভা করতে গিয়ে নওসাদ রবিবার ইঙ্গিত দিয়েছেন, দু-এক দিনের মধ্যে সমঝোতা না হলে দক্ষিণ মালদহ আসনেও তাঁরা প্রার্থী দেবেন। কিন্তু তিন-চার আসনের বেশি দাবি করলে সমঝোতা কী ভাবে সম্ভব, তার কোনও স্পষ্ট ব্যাখ্যা মিলছে না আইএসএফের তরফে। আর সমঝোতা না হলে তখন নওসাদ ডায়মন্ড হারবারে দাঁড়াতে চাইলেও বামেদের সমর্থন পাবেন না। যা তিনি পেয়েছিলেন ভাঙড় থেকে বিধায়ক হওয়ার সময়ে।
বাম শরিক ফরওয়ার্ড ব্লককে নিয়ে সমস্যাও মেটেনি বামফ্রন্টের অন্দরে। ফ্রন্ট চেয়ারম্যানের অনুরোধে ফ ব-র রাজ্য সম্পাদক নরেন চট্টোপাধ্যায় পুরুলিয়া গিয়ে দলের জেলা কমিটির বৈঠক করলেও তারা ওই আসনে লড়াইয়ের দাবি থেকে সরেনি। কোচবিহার কেন্দ্রে বামফ্রন্টের তরফে ফ ব-র প্রার্থী থাকলেও সেখানে কংগ্রেস প্রার্থী দিয়েছে, বিমানবাবুর অনুরোধেও কংগ্রেস প্রার্থী মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি। এই ঘটনা ফ ব-র জেদ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে! ফ ব-র ভাগের আর এক কেন্দ্র বারাসতে আইএসএফ প্রার্থী দিয়ে রেখেছে। শেষ পর্যন্ত আইএসএফের সঙ্গে সমঝোতা না হলে বারাসতের ক্ষেত্রে সিপিএম কী করবে, সে দিকে নজর থাকছে বাম শিবিরের।