Lok Sabha Election 2024

পথে-প্রচারে ভরসা ডাব আর ওআরএস, তাপমাত্রা নিয়ে চিন্তায় ভোটকর্মীরাও

এত গরমে ভোট প্রচারে কষ্ট হচ্ছে না? ঘাটালের তৃণমূল প্রার্থী দেব বলছেন, ‘‘কেউ এক ঘন্টা, কেউ তারও বেশি সময় ধরে গরমের মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকছে রাস্তায়। আমি জানি, এই গরমে দেড়-দু’ঘন্টা বসে থাকাটা কত বড় চাপ।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৩ এপ্রিল ২০২৪ ০৮:২৭
Share:

রোদের তাপ থেকে রেহাই পেতে। ঘাটালের কলেজ মোড়ে। —নিজস্ব চিত্র।

তাপমাত্রা দিন দিন বাড়ছে। তাপপ্রবাহের আশঙ্কাও রয়েছে। তবে ভোট বড় বালাই। তাই রোদ-গরমেও খামতি নেই প্রচারে। সকাল হোক কিংবা দুপুর— প্রচার চলছে সব প্রার্থীর। গরমে শরীর ঠিক রাখতে প্রচারের ফাঁকে কেউ শসা, ডাব, আখের রস খাচ্ছেন, কারও সঙ্গী ছাতা, তোয়ালে, সুতির উত্তরীয়। ভোট করাতে পুলিশ-প্রশাসনের প্রস্তুতিও এখন তুঙ্গে। গরম নিয়ে চিন্তা বাড়ছে ভোটকর্মীদেরও।

Advertisement

এত গরমে ভোট প্রচারে কষ্ট হচ্ছে না? ঘাটালের তৃণমূল প্রার্থী দেব বলছেন, ‘‘কেউ এক ঘন্টা, কেউ তারও বেশি সময় ধরে গরমের মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকছে রাস্তায়। আমি জানি, এই গরমে দেড়-দু’ঘন্টা বসে থাকাটা কত বড় চাপ। ওদের ওই ভালবাসা দেখে আমার আর ক্লান্তি থাকছে না। আমার এখন পরিশ্রম করাটা অভ্যাস হয়ে গিয়েছে। বয়সটাও কম সে রকম ভাবে দেখতে গেলে, অনেক কম। এখনও ক্লান্তি ব্যাপারটা আসেনি।’’ মেদিনীপুরের তৃণমূল প্রার্থী জুন মালিয়া, বিজেপি প্রার্থী অগ্নিমিত্রা পাল প্রমুখকে প্রচারে শাড়িতেই দেখা যাচ্ছে। দুপুরে শাড়ির আঁচলে মাথা ঢাকছেন তাঁরা। কটনের শাড়ি পরছেন নিশ্চয়ই? অগ্নিমিত্রা বলছেন, ‘‘আমি তো কটনই পড়ি। প্রতিদিনই শাড়ি পড়ি। কটন শাড়ি হালকা রঙের মধ্যে।’’

তৃণমূল প্রার্থী জুনকে আবার প্রতিদ্বন্দ্বী বিজেপির প্রার্থী 'বন্ধু' অগ্নিমিত্রাকে ডাবের জল বেশি করে খাওয়ার পরামর্শ দিতে শোনা গিয়েছে। গরম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে গরমে ডাবের দামও এখন বেশ চড়া। গত বছর যে ডাব ৩৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে ভোটের বাজারে তার দাম বেড়ে হয়েছে ৫০ টাকা। খড়্গপুর শহরের তৃণমূলের এক কর্মী বলছেন, ‘‘প্রার্থীর সঙ্গে তো আমাদেরও সুস্থ থাকতে হবে। দল থেকে প্রচারের জন্য টাকাই দেওয়া হয়নি। মহার্ঘ্য ডাব কে খাওয়াবে! ওআরএস খাচ্ছি।’’

Advertisement

তৃণমূলের ঘাটাল সাংগঠনিক জেলা সভাপতি আশিস হুতাইত এবং বিজেপি বিধায়ক শীতল কপাট দু’জনেই বলেন, “গরমের জন্য ভোট প্রচারে কোনও খামতি থাকছে না। কর্মীরাও তৎপর।” গড়বেতায় প্রচারে বেরিয়ে তোয়ালে, গামছা নিচ্ছেন তৃণমূলের কর্মীরা। খাচ্ছেন শসা আর জল। গোয়ালতোড়ের মিষ্টির দোকানদার দীপঙ্কর দত্ত বলেন, ‘‘ভোটের প্রচারে বেরিয়ে দুপুরের দিকে অনেকে টক দই কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। ঠান্ডা পানীয়ও নিচ্ছেন।’’ কেশিয়াড়ি, দাঁতন, নারায়ণগড়-সহ অন্যান্য এলাকায় রাজনৈতিক দলগুলি গরম এড়াতে কখনও দলীয় কার্যালয় বা অন্য কোনও ঘরের মধ্যে বৈঠকে করছে।

গরম থেকে বাঁচতে মঙ্গলবার সাত সকালে প্রচারে বেরিয়ে পড়েছিলেন ঝাড়গ্রাম লোকসভা আসনের বিজেপি প্রার্থী প্রণত টুডু। মাঝে মধ্যে লেবু-নুন চিনির জলে গলা ভিজিয়েছেন প্রণত। ঝাড়গ্রাম আসনের তৃণমূল প্রার্থী কালীপদ সরেন এদিন ঝাড়গ্রাম শহরের বাড়ি থেকে সকাল দশটায় বেরিয়ে পৌনে ১২ টা নাগাদ বান্দোয়ানে পৌঁছন। সেখানে দলীয় কর্মী সভায় যোগ দেন। প্রার্থীর প্রচার কর্মী গুরুপদ মুর্মু বলছেন, ‘‘গরমের জন্য উনি (কালীপদ) উত্তরীয় দিয়ে বারে বারে ঘাম মুচ্ছিলেন। মাঝে মধ্যে আমি ওআরএস মেশানো জলের বোতল এগিয়ে দিচ্ছিলাম। পরে মুরগির ঝোল-ভাতের ব্যবস্থা ছিল। অত্যধিক গরমের জন্য উনি কম খেয়েছেন।’’ ঝাড়গ্রাম লোকসভা আসনের বামফ্রন্ট মনোনীত সিপিএম প্রার্থী সোনামণি টুডু এদিন গরম থেকে বাঁচতে সিপিএমের রাজ্য কমিটির সদস্য পুলিনবিহারী বাস্কের কাছ থেকে গামছা চেয়ে নেন। রোদ চশমাও ছিল তাঁর চোখে।

গরমে ভোট নিয়ে চিন্তায় ভোটকর্মীরাও। প্রশাসনের অবশ্য আশ্বাস, তাঁরা যাতে গরমে সমস্যায় না পড়েন, তার জন্য নানা পদক্ষেপ করা হচ্ছে। পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলাশাসক তথা জেলা নির্বাচনী আধিকারিক খুরশিদ আলি কাদেরি বলেন, ‘‘ভোটের প্রস্তুতিতে যে সব দিকে খেয়াল রাখার, রাখা হচ্ছে।’’ শীঘ্রই ভোটকর্মীদের প্রশিক্ষণ শুরু হওয়ার কথা। প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলিতে পানীয় জলে থাকবে। ঘাটালে ৬ এপ্রিল থেকে ভোটকর্মীদের প্রশিক্ষণ শুরু হবে। কেউ অসুস্থ হয়ে গেলে দ্রুত যাতে চিকিৎসা শুরু করা যায়, তার জন্য থাকবে মেডিকেল টিম।

প্রশাসন সূত্রে খবর, ভোটারের বাড়ি থেকে ভোটকেন্দ্র দু’কিলোমিটারের মধ্যেই থাকবে। ভোটকেন্দ্রে পানীয় জলের ব্যবস্থা থাকবে। ভোটগ্রহণকেন্দ্রে যাঁরা লাইনে দাঁড়াবেন, তাঁদের মাথার উপর ছাউনি থাকবে। যে সব মায়েরা শিশুদের নিয়ে ভোট দিতে যাবেন, তাঁদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা থাকবে। জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘গরমে ভোট দিতে গিয়ে কেউ যাতে অসুস্থ হয়ে না পড়েন, তার জন্য সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন