Lok Sabha Election 2024

গোষ্ঠীকোন্দলই মাথাব্যথা তৃণমূলের

২০২১ সালে গোসাবার প্রাক্তন বিধায়ক জয়ন্ত নস্করের মৃত্যুর পর থেকেই এই বিধানসভা এলাকা জুড়ে তৃণমূলের আড়াআড়ি বিভাজন স্পষ্ট হয়ে যায়।

Advertisement

প্রসেনজিৎ সাহা

শেষ আপডেট: ২৮ মার্চ ২০২৪ ১০:১৭
Share:

—প্রতীকী চিত্র।

দিল্লির দৌড়ে কে কোথায়? কোন দল কী ভাবে ঘর গোছাচ্ছে? কোথায় কোন কাঁটা বেগ দিচ্ছে কাকে? লোকসভা ভোটের আগে বিধানসভা ভিত্তিক খোঁজখবর। সেই সঙ্গে কোন বিষয়গুলি মাথায় রেখে বুথমুখী হবেন ভোটার, সে দিকে নজর রাখল আনন্দবাজার। আজ গোসাবা

Advertisement

২০২১ সালে গোসাবার প্রাক্তন বিধায়ক জয়ন্ত নস্করের মৃত্যুর পর থেকেই এই বিধানসভা এলাকা জুড়ে তৃণমূলের আড়াআড়ি বিভাজন স্পষ্ট হয়ে যায়। বর্ষীয়ান নেতা জয়ন্তের নেতৃত্বে তার আগে এই সমস্যা ছিল না দলের অন্দরে। ২০২১ সালে বিধানসভা নির্বাচনের পরে কোভিডে আক্রান্ত হয়ে মারা যান জয়ন্ত। ব্লক তৃণমূলের দায়িত্ব কার হাতে থাকবে, তা নিয়ে শুরু হয় বিবাদ। ২০২১ সালের উপ নির্বাচনে বিজেপিকে প্রায় দেড় লক্ষ ভোটে হারিয়ে গোসাবা বিধানসভায় জয় পান তৃণমূলের সুব্রত মণ্ডল।

এ পর্যন্ত সব মোটামুটি ঠিকঠাকই চলছিল। কিন্তু সুব্রতের নেওয়া বেশ কিছু সিদ্ধান্ত দলের মধ্যে মতান্তরের জন্ম দেয়। জেলা পরিষদের সদস্য অনিমেষ মণ্ডলের অনুগামীদের সঙ্গে বিবাদ শুরু হয় বিধায়ক-গোষ্ঠীর লোকজনের। তার উপরে এখনও প্রলেপ দেওয়া যায়নি বলে দলের অন্দরেই খবর। ঊর্ধ্বতন নেতৃত্বের মধ্যস্থতাতেও মেলেনি সমাধান।

Advertisement

শাসক দলের অন্দরে এই বিবাদ লোকসভা ভোটে বিজেপিকে বাড়তি সুবিধা করে দিতে পারে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক মহল।

২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে জয়নগর লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত গোসাবা বিধানসভায় বিজেপিকে ২৯,২৮৬ ভোটে পরাজিত করেছিল তৃণমূল। তৃণমূল প্রার্থী প্রতিমা মণ্ডল পেয়েছিলেন ১,০১,৫২২টি ভোট। বিজেপি প্রার্থী অশোক কান্ডারি পান ৭২,২৩৬টি ভোট। ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির ভোট আরও আরও দশ হাজারের মতো বেরেছিল। তৃণমূলের ভোট সেখানে বেড়েছিল মাত্র চার হাজারের মতো। তবু বিজেপি প্রার্থী বরুণ প্রামাণিককে ২৩,৭০৯ ভোটে হারিয়ে দিয়েছিলেন তৃণমূল প্রার্থী জয়ন্ত নস্কর। ফল প্রকাশের কিছু দিনের মধ্যেই মারা যান জয়ন্ত।

২০২১ সালের উপনির্বাচনে সুব্রত ১,৪৩,০৫১ ভোটে হারান বিজেপির পলাশ রানাকে। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনেও গোসাবা বিধানসভায় বিজেপির তুলনায় তৃণমূল অনেক ভাল ফল করেছিল। তবে দলের অন্দরে চোরা স্রোত নিয়ে লোকসভা ভোটেও মাথাব্যথা আছে দলের নেতৃত্বের।

পঞ্চায়েত ভোটের পরেও কত কয়েক মাসে অনিমেষ ও সুব্রত গোষ্ঠীর মধ্যে বার বার সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। লোকসভা ভোটের নির্বাচনেও প্রার্থী প্রতিমা মণ্ডলকে দুই পক্ষের সঙ্গে আলাদা করে প্রচার-পর্ব সারতে হচ্ছে।

দলের অন্দরে কোন্দল নেই বলেই অবশ্য দাবি করেছেন তৃণমূলের সুন্দরবন সাংগঠনিক জেলার সভাপতি জয়দেব হালদার। তিনি বলেন, ‘‘ভোটের ময়দানে দলীয় প্রার্থীকে জেতাতে আমরা সকলেই এক হয়ে বিজেপির মতো সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করব।’’

এলাকায় অনুন্নয়ন সহ নানা বিষয়কে সামনে রেখে প্রচারের অস্ত্র শানাচ্ছেন বিজেপি প্রার্থী অশোক কান্ডারি। তিনি বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় সরকার নদীবাঁধ তৈরির জন্য টাকা দিলেও তা ফেরত গিয়েছে, কাজ হয়নি। এত দিনেও গোসাবার মানুষের জন্য পানীয় জলের ব্যবস্থা করা যায়নি। দ্বীপাঞ্চলের মানুষের এখনও একমাত্র ভরসা নদীপথ। সেতু দিয়ে জোড়া হয়নি দ্বীপগুলিকে। বিদায়ী সাংসদ দশ বছর মানুষের ভোটে জিতে ক্ষমতায় রয়েছেন। কিন্তু এই এলাকার মানুষের সমস্যা নিয়ে এক বারও প্রশ্ন তোলেননি সংসদে।’’

প্রতিমার পাল্টা বক্তব্য, ‘‘কেন্দ্র বরাবর রাজ্যের সঙ্গে বিমাতৃসুলভ আচরণ করেছে। একশো দিনের টাকা থেকে শুরু করে আবাস যোজনার টাকা— সবই আটকে রেখেছে। কংক্রিটের নদীবাঁধ তৈরি থেকে শুরু করে সুন্দরবনে রেলপথ সম্প্রসারণ— সব বিষয়ই সংসদে উত্থাপন করেছি।’’

২০১১ সালে রাজ্যে পালা বদলের পরে কংগ্রেস, সিপিএমের এখানে তেমন কোনও সংগঠন চোখে পড়ে না। কিছু কিছু জায়গায় আরএসপির সামান্য মিটিং-মিছিল চোখে পড়লেও ভোটের ময়দানে তা সে ভাবে প্রভাব ফেলতে পারে না বলেই পরিসংখ্যানে দেখা যায়। ২০২১ সালের উপনির্বাচনে গোসাবা বিধানসভায় মাত্র ৩০৭৮টি ভোট পেয়েছিলেন আরএসপি প্রার্থী অনিলচন্দ্র মণ্ডল। ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে যেখানে তৃণমূল, বিজেপি, আইএসএফ, এসইউসি তাঁদের প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেছে, সেখানে এখনও বামেদের তরফে প্রার্থীর নামই ঘোষণা করা হয়নি। ফলে প্রচারও চোখে পড়ছে না। এই ব্লকে আইএসএফও এখনও সে ভাবে নিজেদের সংগঠন বিস্তার করতে পারেনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন