Mamata Banerjee on INDIA

আমিই গড়েছি, নাম দিয়েছি ‘ইন্ডিয়া’! ভোটের পরেরটাও আমিই দেখে নেব, বললেন ফলাফল নিয়ে প্রত্যয়ী মমতা

সোমবার কৃষ্ণনগর থেকে প্রথম প্রচারে নেমেই ঝোড়ো ব্যাটিং করলেন মমতা। মঞ্চে দাঁড়িয়ে বলেন, ‘‘বাংলার মানুষের জন্য আমরা একাই লড়ছি। আর সিপিএম-কংগ্রেস-বিজেপি লড়ছে আমার বিরুদ্ধে।’’

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ৩১ মার্চ ২০২৪ ২০:৪৫
Share:

গ্রাফিক— সনৎ সিংহ

বাংলায় বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র শরিকেরা তাঁর দিকে কাদা ছুড়তে পিছপা হচ্ছেন না। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলার সমীকরণের সঙ্গে দেশের জোট সমীকরণকে মেলাতে নারাজ। বরং বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র অভিভাবকত্ব দাবি করে মমতা বললেন, ‘‘ইন্ডিয়া অ্যালায়েন্স আমি তৈরি করেছি। নামটা আমারই দেওয়া। ভোটের পরও আমিই দেখে নেব।’’

Advertisement

সোমবার কৃষ্ণনগর থেকে লোকসভা ভোটের প্রথম প্রচার শুরু করলেন মমতা। আর প্রচারে নেমেই মঞ্চে ঝোড়ো ব্যাটিং করলেন তিনি। মঞ্চে দাঁড়িযে বাংলার বিরোধী দল বিজেপি এবং কংগ্রেস-সিপিএমকে একই বন্ধনীতে রেখে মমতা বলেন, ‘‘বাংলার মানুষের জন্য আমরা একাই লড়ছি। আর সিপিএম-কংগ্রেস-বিজেপি লড়ছে আমার বিরুদ্ধে। তাই একটি ভোটও ওদের দেবেন না। ভোট তৃণমূলকে দিন। তবেই তৃণমূল দেখাবে দেশের সরকার কী ভাবে গড়তে হয়।’’

ওঁদের বলে দাও...

Advertisement

বাংলায় গত বছর ডিসেম্বরের পর থেকেই বিরোধী জোট ইন্ডিয়া শরিকদের সঙ্গে তৃণমূলের সমীকরণ তলানিতে এসে ঠেকেছে। তবে ভোটের মুখে সিপিএম এবং কংগ্রেসের সঙ্গে বাংলার শাসকদলের কটাক্ষ এবং পাল্টা কটাক্ষের পালা তুঙ্গে উঠেছে। রবিবার বিরোধীদের পাল্টা আক্রমণ করে মমতা বলেন, ‘‘শুনছি, সিপিএম, কংগ্রেস বলছে, বাংলায় তারা ‘ইন্ডিয়া’র হয়ে লড়াই করছে। ওদের বলে দাও অল ইন্ডিয়ায় ইন্ডিয়া অ্যালায়ন্স আমি তৈরি করেছি। নামটা আমার দেওয়া। কিন্তু বাংলায় জোট হয়নি ঘোঁট হয়েছে। এখানে সিপিএম-কংগ্রেস-বিজেপি আমাদের বিরুদ্ধে লড়াই করছে। মনে রাখবেন, সিপিএমকে ভোট দেওয়া মানে বিজেপিকে ভোট দেওয়া, কংগ্রেসকে ভোট দেওয়া মানেও বিজেপিকে ভোট দেওয়া। লড়ছি আমরা একলা। যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চলো রে।’’

আমি চাই না হোক!

রাজ্যে সন্দেশখালি থেকে শুরু করে শাহজাহান শেখ, তৃণমূলের নেতা মন্ত্রীদের বাড়িতে ইডি তল্লাশি— সমস্ত বিষয়েই তৃণমূলের বিরুদ্ধ অবস্থান নিয়েছে কংগ্রেস এবং সিপিএম। এমনকি, মমতার সঙ্গে লোকসভা ভোটের আগে দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সেটিং তত্ত্বের কথাও বলেছে দুই দল। মমতা রবিবার পাল্টা এই দুই দলকে বিজেপির পাশে রেখে আক্রমণ করেছেন। তাঁর প্রশ্ন, ‘‘বাংলায় তো কই সিপিএমের কোনও নেতার বাড়িতে ইডি-সিবিআই তল্লাশি হয় না। আমি চাই না হোক। কিন্তু বাংলায় তো কোনও কংগ্রেসের নেতার বাড়িতে তল্লাশি হয় না, আমি তা-ও চাই না হোক। কিন্তু বাংলায় তৃণমূল বিজেপির সঙ্গে কোনও রকম আপস করেনি, করবেও না।’’

কেরল বনাম বাংলা!

বরং মমতা পাল্টা প্রশ্ন তুলেছেন, ‘‘কেরলে তো কংগ্রেস এবং সিপিএম পরস্পরের বিরুদ্ধে লড়ছে। বাংলায় তারা একজোট হচ্ছে কী ভাবে? তাঁর বক্তব্য, বাংলার বাইরেও তো আমরা কিছু কিছু রাজ্যে লড়ছি। উত্তরপ্রদেশে অখিলেশ যাদবের অনুমতি নিয়ে প্রার্থী দিয়েছে তৃণমূল। অসমে আমরা চারটি কেন্দ্রে প্রার্থী দেব। মণিপুরেও আমরা লড়ব।’’ মমতার বক্তব্য কোথাও আঞ্চলিক ক্ষমতাসীন দলগুলির সঙ্গে বাংলার মতো সমস্যা হয়নি তৃণমূলের।

বিজেপিকে সাঁতার পরামর্শ

তবে রাজ্যের ‘ইন্ডিয়া’র সমীকরণের সঙ্গে দেশের সমীকরণকে এখনও মেলাতে রাজি নন মমতা। কিছুদিন আগেই দিল্লিতে মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীওয়ালের গ্রেফতারির বিরুদ্ধে যখন ইন্ডিয়া শক্তি প্রদর্শনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, তখন সিপিএম, কংগ্রেসের মতোই তৃণমূলও সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েনকে পাঠিয়েছিল দিল্লিতে। একযোগে নির্বাচন কমিশনের কাছে গিয়ে অভিযোগ জানিয়ে এসেছিলেন তাঁরা। রবিবারও সে কথা বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। একই সঙ্গে বিজেপিকে চ্যালেঞ্জও ছুড়ে দিয়েছেন। রবিবার তাঁর প্রচারমঞ্চ থেকে মমতা বলেন, ‘‘ওরা বিধানসভা ভোটের সময়ও ২০০ পার বলে আওয়াজ তুলেছিল। শেষে থমকে গিয়েছিল ৭৭ আসনে। পরে ওদের থেকে আরও ১৫ জন আমাদের দিকে চলে আসে। বিজেপিকে বলব আগে তো ২০০ পার হ, তার পর ৪০০-র জন্য সাঁতার কাটার কথা ভাববি।’’

মোদী জিরো তৃণমূল হিরো

বিজেপির বিরুদ্ধে ১০০ দিনের টাকা থেকে শুরু করে সিএএ, এনআরসি, গ্যাসের দাম-সহ একাধিক বিষয়ে আক্রমণ চালিয়েছেন মমতা। তার পরেই বলেছেন, আঙুল নাড়িয়ে শূন্যে একটা বড় গোল্লা পাকিয়ে বলেছেন ওরা শূন্য পাবে। ওঁরা মানুষকে বঞ্চিত করে ভাঁওতা দেয়, প্রতারণা করে, মিথ্যা কথা বলে। ভাঁওতাবাজির দলের নাম বিজেপি। মোদীর গ্যারান্টি নিয়ে কটাক্ষ করে মমতা বলেন, ‘‘কিছু দিন আগে দেখলাম ব্রেকিং নিউজ় দিয়েছে, ১০০ দিনের কাজের টাকা বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। আরে ১০০ দিনের কাজই দাও না তো টাকা কী দেবে! মোদীর গ্যারান্টি আসলে মিথ্যা কথার গ্যারান্টি। মোদীর গ্যারান্টি জিরো আর আমাদের গ্যারান্টির মানুষই হিরো।’’ পরে আরও একবার মমতা একই কথা বলেন, তখন অবশ্য লব্জ বদলে হয়ে যায়, ‘‘ওরা হচ্ছে জিরো। আর তৃণমূল হিরো।’’

সকল দেশের সেরা নয়

বিজেপির সমালোচনা করতে গিয়ে দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের গানের কলিও উদ্ধৃত করেছেন মমতা। মঞ্চে ‘ধনধান্য পুষ্পে ভরা’ গানটি আবৃত্তি করেন তিনি। কিন্তু ‘তাহার মাঝে আছে দেশ এক সকল দেশের সেরা’ বলেই থেমে গিয়ে মমতা বলেন, ‘‘আগে ছিল এখন আর নেই। আমাদের দেশ আর সকল দেশের সেরা নেই। তবে আমি দেশের ভাল চাই। বাংলার ভাল চাই। তাই আপনাদের বলছি, ‘‘আপনারাও যদি দেশের ভাল চান, তবে বিজেপিকে তাড়ান।’’

ক্যা মাথা, এনআরসি ল্যাজা

সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন নিয়ে প্রথম থেকেই বিজেপির বিরুদ্ধে কথা বলে আসছে তৃণমূল। মতুয়াদের মতো অন্য দেশ থেকে এ দেশে আসা মানুষের নাগরিকত্ব নিশ্চিত করতেই এই সিএএ বলে জানিয়েছিল কেন্দ্রে বিজেপি সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। রবিবার মতুয়াদের আশ্বস্ত করে মমতা বলেছেন, ‘‘আপনারা ভয় পাবেন না। এ রাজ্যে কেউ আপনাদের ক্ষতি করতে পারবে না। কিন্তু ভুলেও ক্যা (সিএএ কে এই ভাবেই অভিহিত করে থাকেন মমতা)-তে নাম নথিভুক্ত করাবেন না। মনে রাখবেন ক্যা হচ্ছে মাথা আর এনআরসি ল্যাজা। ক্যা-তে গেলেই এনআরসিতে পড়বে।

মহুয়ার উপর অত্যাচার

টাকা নিয়ে প্রশ্নের মামলায় সংসদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল তৃণমূলের প্রাক্তন লোকসভা সাংসদ মহুয়া মৈত্রকে। রবিবার সেই প্রসঙ্গও এসেছে মমতার কথায়। এ বারের লোকসভা ভোটের প্রচার মহুয়ার কেন্দ্র কৃষ্ণনগর থেকেই শুরু করেছেন মমতা। সেখানকার মঞ্চে দাঁড়িয়েই মমতা বলেন, ‘‘মহুয়ার উপর দেখেছেন কী অত্যাচার হয়েছে? কারণ বিজেপির উপর চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে কথা বলেছিল। ওকে সংসদ থেকে বের করে দিয়েছে ওরা।’’ মমতা বলেন মহুয়াকে ভোট দিয়ে আবার ফিরিয়ে এনেই এর জবাব দিতে হবে কৃষ্ণনগরের মানুষকে।

মিথ্যা কথার কাঁঠালিকলা

বিজেপিকে সর্বঘটে মিথ্যাকথার কাঁঠালি কলা বলেও কটাক্ষ করেছেন মমতা। আবাস যোজনার জন্য বিজেপি থেকে ফোন করে বাংলার সাধারণ মানুষকে নতুন করে নাম লেখাতে বলা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন মমতা। বলেন, ‘‘যে তালিকা থেকে ওরা নাম আর ফোন নম্বর পাচ্ছে, সেই তালিকা আমরাই তৈরি করে দেওয়া। ওরা সেখানে ফোন করে এখন বলছে নতুন করে নাম লেখালে বাড়ি পাবেন। তাই যদি হবে, তা হলে এত দিন দিসনি কেন? আসলে ওরা মিথ্যাকথার কাঁঠালি সর্বঘটে সেই মিথ্যার কাঁঠালি কলা দিয়ে বেড়াচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
আরও পড়ুন