Lok Sabha Election 2024

২৩৪ বার ঘায়েল হয়েও আবার প্রার্থী পদ্মরাজন!

নিজের শহর থেকে ১৯৮৮ সালে প্রথম বার বিধানসভা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলেন মেট্টুরের এই বৃদ্ধ টায়ার ব্যবসায়ী। তার পরে দেশ জুড়ে নানা ভোটে প্রার্থী হয়েছেন।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

মেট্টুর শেষ আপডেট: ৩১ মার্চ ২০২৪ ০৬:৩৭
Share:

কে পদ্মরাজন। ছবিঃ এএফপি।

নরেন্দ্র মোদী, রাহুল গান্ধী, মনমোহন সিংহ, অটলবিহারী বাজপেয়ী— সবার কাছে হেরেছেন তিনি। গত চার দশকে ২৩৮ বার ভোটে পরাজিত কে পদ্মরাজন বলছিলেন, “সব প্রার্থীই জিততে চায়।” তার পরেই বছর পঁয়ষট্টির বৃদ্ধ জুড়ে দেন, “তবে আমি নই।” আসন্ন লোকসভা ভোটে তামিলনাড়ুর ধর্মপুরী আসনের জন্য তিনি মনোনয়ন জমা করেছেন। প্রথম দফায়, ১৯ এপ্রিল ভাগ্যপরীক্ষা। এ বার যদি জিতে যান? পেল্লায় গোঁফজোড়ার আড়াল থেকে চলকে ওঠে একগাল হাসি। পদ্মরাজন বলেন, “হার্টফেল হয়ে যাবে।”

Advertisement

তা হলে কেন? ভোটে লড়ার সাধ মনে নিয়েও মনোনয়ন জমা করতে গিয়ে দ্বিধায় পড়েন যাঁরা, পদ্মরাজন চান তাঁদের পথপ্রদর্শক হয়ে উঠতে। বোঝাতে চান, চাইলে যে কেউ পারেন নির্বাচনে প্রার্থী হতে। নিশ্চিত করতে চান, গণতন্ত্রের গ্রন্থিগুলো আলগা না হয় যেন। তিনি বলেন, “সেই দিক থেকে দেখলে জয়-পরাজয়ের মাঝের দূরত্বটাই তুচ্ছ হয়ে যায়।” পদ্মরাজন মনে করেন, ভোটাধিকারের প্রয়োগ দেশে বর্তমান সময়েই সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

নিজের শহর থেকে ১৯৮৮ সালে প্রথম বার বিধানসভা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলেন মেট্টুরের এই বৃদ্ধ টায়ার ব্যবসায়ী। তার পরে দেশ জুড়ে নানা ভোটে প্রার্থী হয়েছেন। পঞ্চায়েত ভোট থেকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন— সর্বত্র। তাঁর কথায়, “উল্টো দিকে কে আছে, তাতে আমার বয়ে গেছে।” লোকে তাঁর নাম দিয়েছে, ভোটের রাজা। আর ভারতের সব থেকে ব্যর্থ প্রার্থী হিসাবে তাঁর নাম উঠেছে ‘লিমকা বুক অব রেকর্ডস’-এ। ব্যবসার সঙ্গে সঙ্গে হোমিওপ্যাথি চর্চা আছে, সঙ্গে স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের সম্পাদনার দায়িত্ব। তবে নির্বাচনে লড়াটাই পদ্মরাজনের কাছে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিবারের মনোনয়নপত্র, নির্বাচন কমিশনের দেওয়া পরিচয়পত্র গুছিয়ে রেখেছেন, ল্যামিনেট করে।

Advertisement

এ যাবৎ লক্ষাধিক টাকা গচ্চাও দিতে হয়েছে পদ্মরাজনকে। এ বার যেমন ১৬% ভোট না পেলে জামানত বাজেয়াপ্ত হবে। এখন থেকেই সেটা খরচের খাতায় রেখে দিয়েছেন তিনি। এ পর্যন্ত পদ্মরাজনের সব থেকে বেশি ভোটপ্রাপ্তি ২০১১ সালের বিধানসভা ভোটে, মেট্টুর আসনে, ৩.৭ শতাংশ। বিজয়ী প্রার্থী ৭৫ হাজারের বেশি ভোট পেয়েছিলেন। ৬২৭৩টি ভোট পেয়ে পদ্মরাজন ছিলেন তৃতীয় স্থানাধিকারী। তাঁর বক্তব্য, “জেতার কথা ভাবিই না। হারই ভাল। মন সেটা বুঝে গেলে আর কোনও চাপ থাকে না।”

একটা সময়ে সবার হাসির খোরাক ছিলেন অদম্য এই বৃদ্ধ। এখন অনেকে ডেকে নিয়ে যাচ্ছে। ছাত্রছাত্রীদের তিনি বলছেন, পরাজয়কে পরাভূত করে কী ভাবে আবার উঠে দাঁড়াতে হয়। তাঁর কথায়, “একটা ভোটেরও প্রত্যাশা আমি করি না। তবে ইদানীং দেখছি, মানুষ ক্রমশ আমায় মেনে নিচ্ছে।”

মাছ, আংটি, টুপি, টেলিফোন— নানা প্রতীকে তিনি লড়ে এসেছেন এই প্রতীকী লড়াই। এ বারের নির্বাচনে পদ্মরাজনের চিহ্ন টায়ার। ইঞ্জিনের জোরে নয়, এগিয়ে চলা যে আসলে চাকায় ভর করে, যেন সেটাই দেশকে ভুলতে না দেওয়ার পণ করেছেন বৃদ্ধ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন