Lok Sabha Election 2024

নির্দলদের তৃণমূলে ‘ফেরা’র হিড়িক, কটাক্ষ বিরোধীদের

গত মাস দেড়েকে উত্তরপাড়া, রিষড়া, শ্রীরামপুর, বৈদ্যবাটী, চাঁপদানি— পাঁচ পুরসভা মিলিয়ে ১৭ জন নির্দল কাউন্সিলর তৃণমূলের প্রত্যাবর্তন ঘটেছে।

Advertisement

প্রকাশ পাল

শ্রীরামপুর শেষ আপডেট: ০৯ মার্চ ২০২৪ ০৮:১৯
Share:

—প্রতীকী চিত্র।

অনুরোধ, হুঁশিয়ারি, বহিষ্কার— কিছুই বাকি ছিল না। বলা হয়েছিল, দলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে গিয়ে নির্দল হয়ে জিতলেও তৃণমূলের দরজা বন্ধ থাকবে। দু’বছর আগে পুরভোটের সময় নেওয়া এই সিদ্ধান্ত থেকে ঘুরে গিয়ে লোকসভা নির্বাচনের মুখে তখনকার ‘বিক্ষুব্ধ’ নির্দল পুরপ্রতিনিধিদের (কাউন্সিলর) তৃণমূলে ফেরানোর হিড়িক পড়েছে শ্রীরামপুর মহকুমায়।

Advertisement

ওই কাউন্সিলরদের জন্য শাসকদলের দরজা হাট করে খুলে যাওয়ায় বিরোধীদের কটাক্ষ, তৃণমূল যে ‘নীতিহীন’ দল, ফের প্রমাণিত। তৃণমূলের একাংশও অসন্তুষ্ট। তবে শাসকদলের নেতাদের বক্তব্য, দলের শীর্ষ নেতৃত্বের সিদ্ধান্তেই এই পদক্ষেপ। আনুষ্ঠানিক ভাবে ‘ঘরে’ ফিরলেও এত দিন ওই কাউন্সিলররা শাসকদলের সঙ্গে কার্যত মিশেই ছিলেন বলে রাজনৈতিক মহলের পর্যবেক্ষণ।

গত মাস দেড়েকে উত্তরপাড়া, রিষড়া, শ্রীরামপুর, বৈদ্যবাটী, চাঁপদানি— পাঁচ পুরসভা মিলিয়ে ১৭ জন নির্দল কাউন্সিলর তৃণমূলের প্রত্যাবর্তন ঘটেছে। প্রত্যেকটি ক্ষেত্রেই যোগদান অনুষ্ঠানে সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে উপস্থিত ছিলেন।

Advertisement

উত্তরপাড়ায় প্রাক্তন পুরপ্রধান পিনাকী ধামালির নেতৃত্বে বেশ কয়েক জন নির্দল প্রার্থী দাঁড়িয়েছিলেন। পিনাকীকে দল বহিষ্কার করেছিল। ভোটে অন্য নির্দলরা হারলেও পিনাকী জিতেছিলেন। গত ২১ জানুয়ারি পিনাকীকে তৃণমূলে ফিরিয়ে নেওয়া হয়। কয়েক দিন পরে প্রবীণ এই নেতার মৃত্যু হয়। গত ১৭ ফেব্রুয়ারি ‘ঘরে’ ফেরেন শ্রীরামপুরের ২৪ নম্বর ওযার্ডের কাউন্সিলর আকবর আলি এবং রিষড়ার ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ঝুম্পা সরকার।

গত ২৪ ফেব্রুয়ারি চাঁপদানির ১০ এবং বৈদ্যবাটীর ৩ জন নির্দল কাউন্সিলরের ‘ঘর ওয়াপসি’ হয়। স্থানীয় বিধায়ক তথা হুগলি-শ্রীরামপুর সাংগঠনিক জেলা তৃণমূল সভাপতি অরিন্দম গুঁইনও ছিলেন ওই যোগদান অনুষ্ঠানে। চাঁপদানিতে অবশ্য নির্দলদের সমর্থনেই পুরবোর্ড চালাচ্ছিল তৃণমূল। দিন কয়েক আগে শ্রীরামপুরের ১০ নম্বর ওয়ার্ডের নির্দল কাউন্সিলর রাজেশ শা তৃণমূলে ফেরেন। রাজেশের স্ত্রী রেখারানি শা’ও ওই পুরসভার তৃণমূল কাউন্সিলর।

ঘরে ফেরা কাউন্সিলরদের একাধিক জনকে পুরভোটের সময় ‘বহিষ্কার’ করেছিলেন তৃণমূল নেতৃত্ব। পুলিশের খাতায় অভিযোগ ছিল, এমন কাউন্সিলরও ফিরেছেন। তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের একাংশের ক্ষোভ, তাঁরা ফেরায় দলের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে।

কল্যাণ বা অরিন্দম অবশ্য এই ভাবনায় আমল দিচ্ছেন না। তাঁরা জানিয়েছেন, মাসখানেক আগে দলনেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, যাঁরা দলে ফিরে কাজ করতে চান, তাঁদের ফিরিয়ে নিতে। কল্যাণের বক্তব্য, ‘‘ওঁরা দলের কাছে আবেদন করেছেন। দল সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ওঁরা তো তৃণমূলেরই লোক ছিলেন। নিজেদের যোগ্যতা প্রমাণ করে কাউন্সিলর হয়েছেন। কোনও কারণে হয়তো টিকিট পাননি।’’ অরিন্দমের কথায়, ‘‘ওঁরা কেউ অসামাজিক নন। দলের কর্মী হিসেবে আগেও আমাদের সঙ্গে ছিলেন। তাঁরা দলে ফিরতে আগ্রহী হওয়ায় দলীয় নির্দেশে ফিরিয়ে নেওয়া হল। এতে দলের ভাবমূর্তি নষ্ট হওয়ার কোনও কারণ নেই।’’ ঘরে ফেরার খুশিতে নির্দলদের অনুগামীরা উচ্ছ্বাস করেছেন। বাজিও ফেটেছে।

বিজেপির শ্রীরামপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি মোহন আদকের প্রতিক্রিয়া, ‘‘আরাবুল ইসলামকে ছ’বছর সাসপেন্ড করার কথা বলে ছ’মাস কাটতে না কাটতেই দলে ফিরিয়ে এনে দায়িত্ব দিয়েছিল, প্রার্থীও করেছিল তৃণমূল। এমন উদাহরণ অজস্র। তৃণমূল আসলে মুখোশ পরে বসে আছে। নীতিহীন-আদর্শহীন দল। মানুষ এখন বুঝতে পারছে।’’

তথ্য সহায়তা: কেদারনাথ ঘোষ

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন