Lok Sabha Election 2024

শাহজাহানকে সামনে রেখে ভোটের ময়দানে ডান-বাম

২০২১ সালেও জয়ে ধারা অব্যাহত। শাহজাহানের সুবাদে এ বার সুকুমার জেতেন ৫৪.৬৪ শতাংশ ভোট পেয়ে। সিপিএমের ভাস্কর সর্দার পেয়েছিলেন ৩৫.৩৬ শতাংশ ভোট।

Advertisement

ঋষি চক্রবর্তী

সন্দেশখালি শেষ আপডেট: ০১ মার্চ ২০২৪ ০৯:৫৭
Share:

—প্রতীকী চিত্র।

শাহজাহান যার, সন্দেশখালি তার!

Advertisement

শেষ তিনটি বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফলের নিরিখে এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকেরই দাবি অনুযায়ী, সন্দেশখালির ভোটে শাহজাহানই ছিলেন মূল ‘ফ্যাক্টর।’

নির্বাচন কমিশন সূত্রের খবর, ২০০৯ সালে লোকসভা ভোটে বসিরহাট কেন্দ্রে তৃণমূল জিতলেও সন্দেশখালি বিধানসভা কেন্দ্রে পিছিয়ে ছিল। ২০১১ সালে তৃণমূলের ঝড়ের মুখেও এই বিধানসভা কেন্দ্র ধরে রেখেছিল সিপিএম। নিরাপদ সর্দার ৪৩.২১ শতাংশ ভোট পেয়ে জিতেছিলেন। তৃণমূলের পদ্মা মাহাতো পেয়েছিলেন ৪৩.৪৭ শতাংশ ভোট। চার হাজারের কাছাকাছি ভোটে হারেন তিনি। শোনা যায়, শেখ শাহজাহান এই সময়ে ছিলেন সন্দেশখালিতে বামেদের বড় বলভরসা।

Advertisement

ছবিটা বদলে যেতে থাকে তারপর থেকে। কারণ, তত দিনে ‘হাওয়া বুঝে’ শিবির বদলে ফেলেছেন শাহজাহানও।

২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটে সন্দেশখালি কেন্দ্রে জেতেন তৃণমূলের সুকুমার মাহাতো। ৫১.৪৯ শতাংশ ভোট পেয়ে নিরাপদকে হারান তিনি। সিপিএমের প্রার্থী সে বার পেয়েছিলেন ৩১.১৩ শতাংশ ভোট। ৩৮,১৯০ ভোটে জেতে তৃণমূল।

২০২১ সালেও জয়ে ধারা অব্যাহত। শাহজাহানের সুবাদে এ বার সুকুমার জেতেন ৫৪.৬৪ শতাংশ ভোট পেয়ে। সিপিএমের ভাস্কর সর্দার পেয়েছিলেন ৩৫.৩৬ শতাংশ ভোট। সন্দেশখালির গ্রামে কান পাতলে শোনা যায়, সুকুমারকে পর পর দু’বার জিতিয়ে এনে এলাকায় শাহজাহানের দাপটে শিলমোহর পড়ে দলের চোখেও। সুকুমার কার্যত শাহজাহানের ‘হাতের পুতুল’ হিসাবে থেকে যান।

তৃণমূল সূত্রের খবর, ২০১৪ সালে লোকসভা ভোটের আগে বসিরহাটের তৎকালীন সাংসদ নুরুল ইসলাম দলের জেলা নেতৃত্বকে জানিয়েছিলেন, সন্দেশখালিতে জিততে গেলে শেখ শাহজাহানকে চাই। সে বার তৎকালীন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক সহ কিছু নেতার তাতে আপত্তি ছিল। যদিও ২০১৬ সালে বিধানসভা ভোটের আগে জ্যোতিপ্রিয়ই শেখ শাহজাহানের হয়ে তব্দির করেছিলেন দলের কাছে। প্রায় একই সময়ে সন্দেশখালি ২ ব্লকের জেলিয়াখালির স্থানীয় সিপিএম নেতা শিবু হাজরাকেও তৃণমূলে যোগদান করান জ্যোতিপ্রিয়। কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেন উত্তম সর্দার। শাহজাহানের নেতৃত্বে শিবু-উত্তম সন্দেশখালি ২ ব্লকে ভোটের দায়িত্ব পান বলে জানাচ্ছে তৃণমূলের একটি সূত্র।

কী ভাবে ভোট করাতেন শাহজাহান?

সন্দেশখালির লস্করপাড়ার কয়েক জন জানালেন, অধিকাংশ বুথে শাহজাহানের লোকেরাই বসে থাকে। কাকে ভোট দিচ্ছেন গ্রামবাসী, তা দেখে নেন দলের পোলিং এজেন্ট। গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগে এখানে শাহজাহানের মর্জিই শেষ কথা। ভোটের আগে গ্রামে গ্রামে হুমকি, সন্ত্রাস চালাত শাহজাহান বাহিনী, জানালেন নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক গ্রামের অনেকে।

বিজেপির বসিরহাট সাংগঠনিক জেলার যুব সভাপতি পলাশ সরকার বলেন, ‘‘শেখ শাহজাহানের নেতৃত্বে সিপিএম ও তৃণমূল ভোট লুট করেছে। ভোটারদের স্বাধীনতা কেড়ে নিয়েছিল।’’

ভোটে শাহজাহানের ভূমিকা নিয়ে কী বলছেন নিরাপদ? তাঁর দাবি, শাহজাহানের সঙ্গে তাঁর পরিচয় থাকলেও কোও দিন ভোটের কাজে তাঁকে ব্যবহার করেনি দল। নিরাপদের কথায়, ‘‘শেখ শাহজাহান আমাদের দলের সদস্য ছিলেন না। দলের বাইরের কমিটিতেও শাহজাহানের কোনও ধরনের যোগদান ছিল না। তৃণমূলের শাসনকালেই ওঁর উত্থান। তৃণমূলের মতো আমাদের ভোট মেশিনারি নেই।’’

তৃণমূলের বসিরহাট সাংগঠনিক জেলার নেতা তথা জেলা পরিষদের সদস্য একেএম ফারহাদ বলেন, ‘‘মানুষ ভোট দিয়েছেন তৃণমূলকে। ২০১১ সালে অল্প ব্যবধানে হেরেছিলাম আমরা। পরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়ন দেখে মানুষ ভোট দিয়েছেন। এর পিছনে শাহজাহানের কোনও ভূমিকা ছিল না।’’ সুকুমারেরও দাবি, শাহজাহান দলের বহু দায়িত্ব সামলালেও তৃণমূল কখনও মানুষের ভোটাধিকার ছিনিয়ে নেয়নি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন