Lok Sabha Election 2024

সমন্বয়ে ঘাটতি রয়েছে, মেনে নিচ্ছেন পারভেজ

লোকসভা ভোটে বিধানসভাভিত্তিক কোন দলের কী অবস্থা? প্রচারে কারা কোন বিষয়কে তুলে ধরছে? আজ, পুরশুড়া বিধানসভা কেন্দ্র।

Advertisement

পীযূষ নন্দী

পুরশুড়া শেষ আপডেট: ০১ মে ২০২৪ ০৬:৪৫
Share:

—প্রতীকী চিত্র।

এলাকার সব সমস্যা মেটেনি। সাধারণ মানুষের দাবিও কম নয়। কিন্তু যুযুধান রাজনৈতিক দলগুলির প্রচারে সে সব তেমন আসছে কোথায়?

Advertisement

পুরশুড়া বিধানসভা কেন্দ্রটি দামোদর নদ এবং মুণ্ডেশ্বরী নদী ঘেরা। বিশ্ব ব্যাঙ্কের আর্থিক সহায়তার বন্যাপ্রবণ এ তল্লাটে বন্যা নিয়ন্ত্রণের কাজ অনেকটা হয়েছে। কিন্তু আনাজ এবং আলু উৎপাদক এই এলাকায় আনাজ প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্র এবং আলুকেন্দ্রিক শিল্প গড়ার দাবি মেটেনি। ছত্রশাল-সহ কয়েকটি জায়গায় সেতু নির্মাণের দাবিও রয়েছে। সবচেয়ে বেশি রয়েছে কর্মসংস্থানের চাহিদা।

সাধারণ ভোটারদের ক্ষোভ, প্রচারে বিজেপি ও তৃণমূল পরস্পরের বিরুদ্ধে শুধু দুর্নীতির অভিযোগ তুলে যাচ্ছে। এলাকার সমস্যা সমাধান বা দাবি মেটানোর কথা তেমন শোনা যাচ্ছে না। কেলেপাড়ার অনুপ মালিক, তাঁতিশালের শেখ মইনু্দ্দিন, ডিহিবাতপুরের রতন মান্নার মতো ভোটাররা দিশাহারা। তাঁদের খেদ, তৃণমূল লক্ষ্মীর ভান্ডার আর কেন্দ্রীয় ‘বঞ্চনা’ নিয়ে শোরগোল করছে। বিজেপি সরব তৃণমূল তথা রাজ্য সরকারের ‘দুর্নীতি’ নিয়ে। আর বামফ্রন্ট রাজ্য এবং কেন্দ্রের ‘দুর্নীতি’র কথা বলছে। কাজের কথা বলছে না।

Advertisement

বিজেপি এবং তৃণমূল অবশ্য দাবি করছে, তারা জিতলে সব সমস্যারই সমাধান হবে। তাই প্রচারে তাদের জেতানোর কথাই বেশি বলা হচ্ছে।

পরিসংখ্যান বলছে, গত লোকসভা ভোটে এই বিধানসভায় বিজেপির কাছে তৃণমূলের হার ছিল ২৫ হাজার ৮৪২ ভোটের ব্যবধানে। পরবর্তী বিধানসভা ভোটেও তৃণমূলের সাফল্য মেলেনি। উল্টে হারের ব্যবধান বেড়ে হয় ২৮ হজার ১৭৮ ভোটে। এ বার কতটা সাফল্য মিলবে তা নিয়ে দলের অন্দরেই চর্চা আছে। ১৫টি পঞ্চায়েত নিয়ে পুরশুড়া বিধানসভা। এর মধ্যে পুরশুড়া ব্লকের ৮টি, খানাকুল ১ ব্লকের ৫টি এবং আরামবাগ ব্লকের ২টি পঞ্চায়েত পড়ছে। ২টি পঞ্চায়েত বিজেপির দখলে।

তৃণমূলের অনেকের মতে, এখন প্রচারের বিষয় গুরুত্বপূর্ণ নয়। এখন ভোট করিয়ে নেওয়ার চল। কিন্তু যাঁরা এ তল্লাটে শাসকদলের হয়ে ভোট করিয়ে এসেছেন এতদিন, তাঁদের একাংশের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব মেটেনি। তার উপর গত পঞ্চায়েত ভোটে টিকিট না পাওয়ার ক্ষোভে তাঁদের অধিকাংশ প্রচারেও নামেননি। যদিও তৃণমূলের প্রাক্তন ব্লক সভাপতি কিঙ্কর মাইতির দাবি, “পঞ্চায়েত ভোটে দলের গোষ্ঠীবাজিতে একতরফা টিকিট দেওয়ায় যাঁদের ক্ষোভ ছিল, তাঁদের ভোটের কাজে নামাতে দল চেষ্টা করছে। অনেকে নামছেনও। দল জেতার আশা রাখছে।”

পুরশুড়ার ‘ক্ষত’ মেরামতে সম্প্রতি সেখানকার প্রাক্তন বিধায়ক পারভেজ রহমানকে দায়িত্ব দিয়েছে দল। পারভেজও মানছেন, ‘‘সমন্বয়ের অভাবে প্রচারে গতি বাড়েনি।’’ তিনি বলেন, ‘‘সমন্বয়ের ঘাটতিই কাটাচ্ছি। সবাইকে বলেছি, অযথা কর্মী-বৈঠক না করে অঞ্চলে অঞ্চলে প্রচারে নামতে।’’ একইসঙ্গে তাঁর দাবি, স্থানীয় কিছু নেতার বিরুদ্ধে মানুষের ক্ষোভ থাকলেও দলের উপর কারও রাগ নেই। বরং, লক্ষ্মীর ভান্ডার নিয়ে মহিলারা এমনই খুশি যে পরিবারের অন্যান্য দাবি তেমন উঠছে না।

প্রঝান প্রতিপক্ষ বিজেপির দাবি, এলাকায় বিশেষ উন্নয়ন হয়নি। দলের আরামবাগ সাংগঠনিক জেলা সভাপতি তথা পুরশুড়ার বিধায়ক বিমান ঘোষ বলেন, “আমাদের বুথে বুথে প্রচার চলছে। বিজেপি ক্ষমতায় এলে এলাকায় কৃষিভিত্তিক শিল্প, সেতু নিশ্চিত ভাবেই হবে। সে কথা মানুষকে বলছি।” তাঁর দাবি, গত লোকসভা এবং বিধানসভা ভোটের চেয়েও এ বার জয়ের ব্যবধান বাড়বে।

তবে, তৃণমূল বা বিজেপি নয়, এখানে প্রচারে এখনও বেশি দেখা যাচ্ছে বাম-কংগ্রেসকেই। পুরশুড়ার সিপিএম নেতা তথা জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য ফারুক আহমেদ নস্কর বলেন, ‘‘রুখে দাঁড়ানোর মেজাজ নিয়ে পথে নেমেছি। বিধানসভা এলাকায় মোট ২৯৮টি বুথেই আমাদের ছেলেরা জোর প্রচার চালাচ্ছে। নির্বাচনে ভাল ফলের আশা করছি।” তাঁর অভিযোগ, নিম্নমানের কিছু নির্মাণকাজ ছাড়া ২০১১ সাল থেকে মানুষের রুটি-রুজির মোকাবিলায় বিশেষ কোনও উন্নয়ন হয়নি এখানে। প্রচারে সে সবের পাশাপাশি তৃণমূল-বিজেপির দুর্নীতি এবং বিভাজনের রাজনীতির বিরুদ্ধেও বলা হচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন