Lok Sabha Election 2024

বিজেপির তালিকা ঘোষণার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে নাটকীয় ধাক্কা! ‘দাঁড়াব না’, জানালেন আসানসোলের প্রার্থী পবন

আসানসোল লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী হিসাবে পবন সিংহের নাম ঘোষিত হতেই মাঠে নামে তৃণমূল। অভিযোগ করে, বাংলার মেয়েদের তাঁর ভোজপুরি গানে অসম্মান করেছেন পবন।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ মার্চ ২০২৪ ১৩:২৪
Share:

পবন সিংহ। — ফাইল চিত্র।

শনিবারই পশ্চিমবঙ্গের আসানসোল লোকসভা কেন্দ্রে তাঁর নাম ঘোষণা করেছিল বিজেপি। সেই প্রার্থিতালিকা পরে নিজেও সমাজমাধ্যমে পোস্ট করেছিলেন। এক দিন পরেই সেই পবন সিংহ জানিয়ে দিলেন, আসানসোল কেন্দ্রে প্রার্থী হতে পারছেন না তিনি। বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বকে ‘কৃতজ্ঞতা’ জানিয়ে এই ঘোষণা করেন ভোজপুরি নায়ক-গায়ক। তার পরেই প্রার্থিতালিকা প্রকাশের এক দিনের মাথায় পশ্চিমবঙ্গে ধাক্কা খেল বিজেপি। এই নিয়ে সমাজমাধ্যমে মুখ খুলেছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি পশ্চিমবঙ্গের মানুষের ‘অদম্য ইচ্ছাশক্তি এবং ক্ষমতা’-কে কুর্নিশ জানিয়েছেন। আসানসোল লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী শত্রুঘ্ন অবশ্য এই নিয়ে মন্তব্য করতে চাননি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রকাশ্য সভা থেকে শত্রুঘ্নকে আসানসোল কেন্দ্রের প্রার্থী হিসাবে উল্লেখ করেছিলেন।

Advertisement

রবিবার এক্স (সাবেক টুইটার)-এ পোস্ট করে পবন লেখেন, ‘‘আমি বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বকে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। দল আমার উপর ভরসা করেছিল এবং আমাকে আসানসোল থেকে প্রার্থী করেছিল। কিন্তু বিশেষ কারণের জন্য আমি আসানসোল থেকে ভোটে দাঁড়াতে পারছি না।’’ প্রসঙ্গত, আসানসোল লোকসভা কেন্দ্রে পবনের নাম প্রার্থী হিসাবে ঘোষিত হতেই তার বিরোধিতা করে প্রচার চালিয়েছিল তৃণমূল। অভিযোগ করেছিল, বাংলার মেয়েদের অসম্মান করেছেন পবন তাঁর ভোজপুরি গানে। বিজেপির এক নেতাও পবনের প্রার্থিপদ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। ঘটনাচক্রে, পবনকে নিয়ে যখন এই বিতর্ক দানা বাঁধছে, তখনই এক্সে জানালেন, আসানসোলে প্রার্থী হচ্ছেন না তিনি।

বিতর্ক কী ভাবে দানা বেঁধেছিল? শনিবার সন্ধ্যায় আসানসোল কেন্দ্রের প্রার্থী হিসাবে পবনের নাম ঘোষিত হতে মাঠে নামে বাংলার শাসকদল তৃণমূল। বাংলার মহিলাদের প্রতি পবনের ‘দৃষ্টিভঙ্গি’ নিয়ে প্রশ্ন তোলে। তৃণমূল মুখপাত্র অরূপ চক্রবর্তী নিজের এক্স হ্যান্ডেলে (সাবেক টুইটার) লেখেন, ‘‘ভোজপুরিতে প্রকাশিত পবনের বিভিন্ন গান এবং ভিডিয়োতে বাংলার মহিলাদের প্রতি অশালীনতা প্রকাশ পেয়েছে।’’ তৃণমূলের আর এক মুখপাত্র ঋজু দত্ত আবার নিজের এক্স হ্যান্ডেলে এক ভোজপুরি অভিনেত্রীর কথা উল্লেখ করেছেন। তিনি লেখেন, ‘‘ভোজপুরি অভিনেত্রী অক্ষরা সিংহ আসানসোলের মানুষকে কিছু বলতে আসবেন। অপেক্ষা করুন।’’

Advertisement

এই নিয়ে সরব হন তৃণমূলের টিকিটে রাজ্যসভায় সদ্যজয়ী সাগরিকা ঘোষ। বলেছিলেন, ‘‘নহম হাসিনা বাঙ্গাল কি। আসানসোলের বিজেপি প্রার্থীর একটি গানের ভিডিয়োতে বাংলার নারীদের নিচু করে দেখানো হয়েছে। আমরা কি এই ধরনের জনপ্রতিনিধি পেতে চাইব?’’ রাজ্যে এসে শুক্র এবং শনিবার সন্দেশখালিতে মহিলা ‘নির্যাতন’ নিয়ে শাসকদল তৃণমূলকে বিঁধেছিলেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। তার পর পবনকে প্রার্থী ঘোষণা করা মাত্র মহিলাদের ‘অসম্মান’-এর অভিযোগই তুলে ধরেছে তৃণমূল।

এই বিতর্ক আরও উস্কে দিয়েছেন বিজেপি নেতা তথাগত রায়। ত্রিপুরার প্রাক্তন রাজ্যপাল নিজের এক্স হ্যান্ডেলে আসানসোলের বিজেপি প্রার্থীবদলের দাবি তুলেছেন। তিনি লেখেন, ‘‘আসানসোল কিন্তু বিহারে নয়।’’ যদিও বিজেপির রাজ্যসভার সাংসদ তথা মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য তৃণমূলকেই একহাত নেন। তিনি বলেন, ‘‘আসানসোলের ভোটের লড়াইয়ের আগেই তৃণমূল হেরে গিয়েছে। তারা বুঝে গিয়েছে যে, বিহারীবাবুকে দিয়ে এ বার আর ভোট বৈতরণী পার হবে না। তাই আগে থাকতেই ব্যক্তিগত কুৎসা করতে নেমে পড়েছে ওরা। তৃণমূল নেতৃত্বের কাছে ব্যক্তিগত কুৎসা কোনও নতুন বিষয় নয়। যে পথ ধরে তাঁরা এগিয়ে চলেছেন, এটা তার নতুন সংযোজন। এই পথ ধরে তাঁরা যত বেশি এগোবেন ততই তাঁদের বাংলা থেকে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার দিন এগিয়ে আসবে।’’ তাঁর আরও দাবি ছিল, ‘‘২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি প্রার্থী হিসেবে বাবুল সুপ্রিয় যে ব্যবধানে জিতেছিলেন, পবন তার চেয়ে অনেক বেশি ভোটের ব্যবধানে তৃণমূল প্রার্থীকে হারিয়ে জয়ী হবেন।’’ তবে দলের বর্ষীয়ান নেতা তথাগতের মন্তব্য প্রসঙ্গে কোনও জবাব দিতে চাননি শমীক।

তবে এই বিতর্ক দানা বাঁধতে না বাঁধতেই পবন ঘোষণা করেন, তিনি আসানসোলে প্রার্থী হচ্ছেন না। এই খবর পাওয়ার পর তৃণমূল প্রার্থী শত্রুঘ্ন বলেন, ‘‘পবন ভাল লোক। পরিবারেরই লোক। যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, এটা ওঁর এবং ওঁর দলের নিজস্ব বিষয়। তিনি বলবেন এবং দল বলবে। এই নিয়ে মন্তব্য করব না।’’ পবনের ঘোষণার পর সমাজমাধ্যমে সরব হয়েছেন তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ সাগরিকা ঘোষও। তিনি লিখেছেন, ‘‘বিজেপি পশ্চিমবঙ্গে নারীশক্তি নিয়ে যে ডাক দিয়েছিল, তা ভেঙে পড়েছে এখন। তা অর্থহীন, ফাঁকা, স্পষ্ট হয়ে গেল।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement