Lok Sabha Election 2024

কথায় কথায় জুন, নেত্রীর ইঙ্গিতে কি প্রার্থী-সম্ভাবনা

পশ্চিম মেদিনীপুরে লোকসভার আসন দু’টি। মেদিনীপুর এবং ঘাটাল। গতবার মেদিনীপুর থেকে জিতেছিলেন বিজেপির দিলীপ ঘোষ।

Advertisement

বরুণ দে

মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ০৬ মার্চ ২০২৪ ০৬:৫৯
Share:

মেজাজে: মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে নাচের তালে তালে জুন মালিয়া। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল।

কথায় আছে, সকাল দেখলে বোঝা যায়, দিনটা কেমন যাবে। লোকসভা ভোটে মেদিনীপুরে তৃণমূলের প্রার্থী কে হবেন, সেই ইঙ্গিত কি দিয়েই গেলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুরু হয়েছে চর্চা। মঙ্গলবার মেদিনীপুরে মমতার প্রশাসনিক সভা শেষে একাংশ কর্মীর মতে, এ দিন মমতার কথায় আকারে হলেও এ নিয়ে ইঙ্গিত মিলেছে। প্রার্থী হতে পারেন জুন মালিয়াই।

Advertisement

জুন মেদিনীপুরের বিধায়ক। তবে এ দিন কেশিয়াড়ির সঙ্গেও তাঁকে জুড়েছেন মমতা। উল্লেখ্য, কেশিয়াড়ি এলাকা মেদিনীপুর লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত। কেশিয়াড়ি ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের উন্নীতকরণ হবে। এর ‘কৃতিত্ব’ স্থানীয় বিধায়কের পাশাপাশি জুনকেও দিয়েছেন মমতা। অনেকে মনে করছেন, লোকসভায় প্রার্থী হলে এর সুফল কেশিয়াড়ি থেকে পেতে পারেন জুন। মেদিনীপুরের অভিনেত্রী-বিধায়ককে এ দিনের সভায় বক্তৃতা করারও সুযোগ করে দেন মুখ্যমন্ত্রী। তাৎপর্যপূর্ণ হল, সভায় দ্বিতীয় বক্তা ছিলেন তিনি। শুরুতে মন্ত্রী মানস ভুঁইয়া বক্তৃতা করেছেন। মানসের পরে জুন বক্তৃতা করেছেন। জুনের পরে আরও দুই মন্ত্রী বক্তৃতা করেছেন। যথাক্রমে, শ্রীকান্ত মাহাতো এবং শিউলি সাহা। বক্তৃতায় জুন বলেছেন, ‘‘আজকে আমাদের বলার দিন নয়। আজকে যিনি বলবেন, তিনি হচ্ছেন আমাদের নয়নের মণি, আমাদের মুখ্যমন্ত্রী, আমাদের দিদি।’’ মমতা তাঁকে একুশের বিধানসভা ভোটে এখানে প্রার্থী করেছিলেন। এ জন্য ‘দিদি’কে ধন্যবাদ জানিয়েছেন জুন। বক্তৃতার শেষের দিকে তাঁকে বলতে শোনা গিয়েছে, ‘‘শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষা- দিদিই আমাদের ভরসা। দিদি আছে, চিন্তা নেই।’’

পশ্চিম মেদিনীপুরে লোকসভার আসন দু’টি। মেদিনীপুর এবং ঘাটাল। গতবার মেদিনীপুর থেকে জিতেছিলেন বিজেপির দিলীপ ঘোষ। ঘাটাল থেকে জিতেছিলেন তৃণমূলের দেব। এ বারও যে দেব ঘাটাল থেকে লড়বেন, তা একপ্রকার নিশ্চিত। এমনকি, দেবের নামে দেওয়াল লিখনও শুরু হয়েছে। বস্তুত, মমতা বরাবরই বুঝিয়ে এসেছেন, তিনি দেবকে দলের সাংসদ হিসেবে দেখতে আগ্রহী। দেব আর ভোটে লড়বেন কি না, সে নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছিল এক সময়ে। পরে অবশ্য দেবকে বলতে শোনা গিয়েছিল, ‘‘আমি ছাড়তে চাইলেও রাজনীতি আমাকে ছাড়বে না।’’ দেব যে ঘাটাল থেকেই ভোটে লড়বেন, সেই ইঙ্গিত স্পষ্ট। এই সময়ের মধ্যে তাঁকে বলতেও শোনা গিয়েছে, ‘‘আমি যদি ভোটে দাঁড়াই, তাহলে ঘাটাল থেকেই দাঁড়াব। আমি জিতি বা হারি, ঘাটাল আমার সারা জীবন মনে থাকবে।’’

Advertisement

মেদিনীপুরে তৃণমূলের প্রার্থী কে হবেন, তা অবশ্য পুরোপুরি স্পষ্ট নয়। তবে মেদিনীপুরের বিধায়ক জুন মালিয়ার নাম চর্চায় ছিলই। আরও এক তারকার নাম নিয়েও জল্পনা রয়েছে। জেলা তৃণমূলের একাংশ নেতা মনে করাচ্ছেন, দেব-জুন, এঁরা সাংস্কৃতিক মঞ্চের। মুখ্যমন্ত্রী এঁদের ভালবাসেন। এঁদের সঙ্গে কেউ ঝগড়া করলে, তিনি তা বরদাস্ত করবেন না— নানা সময়েই ঘুরেফিরে এ কথা স্পষ্ট করে দিয়েছেন তিনি। এঁদের বিরুদ্ধ গোষ্ঠীর নেতাদেরও মুখ্যমন্ত্রীর প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে। সোমবার মেদিনীপুরে এসে এক বৈঠকে তৃণমূলের জেলা সভাপতি সুজয় হাজরাকে মমতার নির্দেশ, জুনের সঙ্গে ভাল ব্যবহার করতে হবে। জুনের সঙ্গে সুজয়ের সম্পর্ক ‘শীতল’। জুন এবং সুজয়ের সম্পর্কে না কি ‘মিষ্টতা’ চেয়েছেন নেত্রী? মন্ত্রী মানস ভুঁইয়ার অবশ্য দাবি, ‘‘জুন এবং সুজয়, খুবই ভাল সম্পর্কের দিদি এবং ভাই।’’

এদিনের সভার শেষ দিকে মমতার অনুরোধে গান করেন মন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেন। ঝুমুর নৃত্য হয়। মমতা পা মিলিয়েছেন। ডেকে নিয়েছেন জুনকেও। মমতাকে বলতে শোনা গিয়েছে, ‘‘ঝুমুর নাচ হবে। জুন চলে এসো। পায়ে পায়ে মেলাব।’’ সভা শেষে মমতা মেদিনীপুর ছাড়েন। আকাশপথে। জুন চলে যান সভাস্থলে থাকা আনন্দধারার স্টলে। স্বনির্ভর দলের হাতের কাজের নানা সামগ্রী দেখতে। মেদিনীপুরের প্রার্থী নিয়ে তাহলে ইঙ্গিত মিলল ‘দিদি’র কথায়? হাসিমুখে জুনের মন্তব্য, ‘‘আমি কিছু জানি না। আমাকে তো কিছু বলা হয়নি এখনও। যতক্ষণ না ঘোষণা হচ্ছে, আমি বলি কী করে (কে প্রার্থী হচ্ছেন)!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন