Lok Sabha Election 2024

সরানো হল জেলাশাসককে, কারণ নিয়ে চর্চা

জেলায় ভোট-পরিচালন ব্যবস্থার শীর্ষে থাকেন জেলাশাসক। অবাধ, শান্তিপূর্ণ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করানোর দায়িত্ব থাকে মূলত তাঁর উপরেই।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বর্ধমান শেষ আপডেট: ২২ মার্চ ২০২৪ ০৯:১৫
Share:

জেলাশাসককে সরাল নির্বাচন কমিশন। —ফাইল চিত্র।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ‘মা দুর্গা’র সঙ্গে তুলনা করেছিলেন পূর্ব বর্ধমানের জেলাশাসক বিধানচন্দ্র রায়। বৃহস্পতিবার তাঁকে ওই পদ থেকে সরিয়ে দিল জাতীয় নির্বাচন কমিশন। কমিশনের পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছে বিরোধীরা। অন্য দিকে, এই সিদ্ধান্তের নেপথ্যে ‘রাজনৈতিক প্রতিহিংসা’ দেখছে তৃণমূল।

Advertisement

জেলায় ভোট-পরিচালন ব্যবস্থার শীর্ষে থাকেন জেলাশাসক। অবাধ, শান্তিপূর্ণ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করানোর দায়িত্ব থাকে মূলত তাঁর উপরেই। ভোট-পর্বে যে সব অভিযোগ ওঠে, সেগুলির তদন্ত করে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে হয় তাঁকে। জেলায় তিনি মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক হিসেবে (রিটার্নিং অফিসার) কাজ করেন। রাজ্য নির্বাচন দফতরের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা ও কমিশনের নির্দেশ কার্যকর করানোর গুরুদায়িত্ব পালন করতে হয় তাঁকেই। শাসক ও বিরোধী— উভয় পক্ষই যাতে নির্বাচন প্রক্রিয়ায় সমান গুরুত্ব পায়, তা নিশ্চিত করতে হয় জেলাশাসককে। এমন আধিকারিককে সরিয়ে দেওয়া তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে প্রশাসন ও রাজনীতিকদের একাংশ।

এই পদক্ষেপের কারণ কী, তা নির্বাচন কমিশনের তরফে জানানো না হলেও রাজনীতিক এবং প্রশাসনের কর্তারা যে যার মতো করে ওই সিদ্ধান্তের কারণ বিশ্লেষণ করেছেন। গত ৫ মার্চ বর্ধমানের স্পন্দন মাঠে সৃষ্টিশ্রী মেলার উদ্বোধনে জেলাশাসককে বলতে শোনা গিয়েছিল, ‘‘আমাদের রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এক জন মহিলা। তিনি মা দুর্গার মতো সমস্ত দিকেই... আমি আপনাদের বলব, মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মা দুর্গার মতো কার্যক্রম গ্রহণ করতে পারেন। একটা জ্বলন্ত উদাহরণ আছে আপনাদের কাছে। আমি অনুরোধ করব, সেই উদাহরণকে সামনে রেখে আপনারা এগিয়ে চলুন।’’ এই মন্তব্যের কারণেই বিধানকে সরিয়ে দেওয়া হল কি না, তা নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছে প্রশাসনে।

Advertisement

আধিকারিকদের একাংশের মতে, বিধান এক জন ডব্লিউবিসিএস আধিকারিক। নির্বাচনের সময় ছাড়া যাঁর ক্যাডার কন্ট্রোলিং অথরিটি রাজ্য সরকার। ভোটের চার মাস আগে পূর্ব বর্ধমানের জেলাশাসক পূর্ণেন্দু মাজিকে বীরভূমের জেলাশাসক করা হয়েছিল। তিনিও ডব্লিউবিসিএস আধিকারিক। উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, এ দিন তাঁকেও জেলাশাসকের পদ থেকে সরিয়ে দিয়েছে কমিশন। ডব্লিউবিসিএস সংগঠন নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দিয়ে বদলির বিরোধিতা করেছে। পূর্ব বর্ধমানের জেলাশাসক পদে যোগ দেওয়ার আগে বিধান বীরভূমের জেলাশাসক ছিলেন। ঘটনাচক্রে বীরভূমের বোলপুর লোকসভা কেন্দ্রের অধীনে পড়ে পূর্ব বর্ধমানের আউশগ্রাম, কেতুগ্রাম ও মঙ্গলকোট বিধানসভা কেন্দ্র। সে কারণেও তাঁকে সরানো হয়ে থাকতে পারে বলে মত প্রশাসনের আর এক অংশের।

রাজনৈতিক দলগুলি তাদের মতো করে কমিশনের এই সিদ্ধান্তের ব্যাখ্যা করেছে। সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অপূর্ব চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, ‘‘প্রশাসন দলদাসে পরিণত হয়েছে। জাতীয় নির্বাচন কমিশন এই সব অফিসারদের বিশ্বাস করতে পারছে না। এই জেলাশাসক মুখ্যমন্ত্রীকে দেবী দুর্গার সঙ্গে তুলনা করেছিলেন। এ ভাবে নিরপেক্ষ ভোট করা অসম্ভব।’’ একই যুক্তি বিজেপিরও। দলের বর্ধমান-দুর্গাপুর সাংগঠনিক জেলার অন্যতম সাধারণ সম্পাদক আশিস পালের বক্তব্য, "প্রশাসনের কী অবস্থা, নির্বাচন কমিশন তা বুঝতে পারছে। সুষ্ঠু ভাবে নির্বাচন করার জন্যই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা।’’ কমিশনের পদক্ষেপকে ‘রাজনৈতিক প্রতিহিংসা’ বলে কটাক্ষ করে জেলা তৃণমূল সভাপতি রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এই সিদ্ধান্ত ঠিক নয়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন