Lok Sabha Election 2024

কর্নাটকে কড়া টক্কর, মোদীকে চ্যালেঞ্জ ‘কোহলি-ধোনি’ জুটির

বেঙ্গালুরুর কুইনস রোডে প্রদেশ কংগ্রেস দফতরে যখন ডি কে শিবকুমারের দেখা মিলল, তখন তাঁর মুখে অত্যধিক পরিশ্রমে ক্লান্তির ছাপ। কিন্তু চোখে আগুন ঝরছে।

Advertisement

প্রেমাংশু চৌধুরী

বেঙ্গালুরু শেষ আপডেট: ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ০৯:২৭
Share:

(বাঁ দিকে) ডি কে শিবকুমার এবং সিদ্দারামাইয়া (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।

সাদা পাঞ্জাবি ঘামে ভিজেছে। গলায় ঝোলানো উত্তরীয় দিয়ে মুখের ঘাম মুছে নিচ্ছেন বার বার। সামনের মাসে বাষট্টিতে পা দেবেন। মাথা ভর্তি এলোমেলো কাঁচা-পাকা চুল, মুখ ভর্তি অযত্নের দাড়ি। কে বলবে, ভদ্রলোক দেশের সব থেকে ধনী বিধায়ক। ঘোষিত সম্পত্তির মূল্যই ১৪০০ কোটি টাকার বেশি।

Advertisement

বেঙ্গালুরুর কুইনস রোডে প্রদেশ কংগ্রেস দফতরে যখন ডি কে শিবকুমারের দেখা মিলল, তখন তাঁর মুখে অত্যধিক পরিশ্রমে ক্লান্তির ছাপ। কিন্তু চোখে আগুন ঝরছে। কঠিন চোয়ালে ঠিকরে বার হয়ে আসছে জেতার খিদে। ঠিক যেন এই বেঙ্গালুরুরই চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর বিরাট কোহলি। যাঁর দল আইপিএলে বার বার মুখ থুবড়ে পড়েছে ঠিকই, কিন্তু কেহলির চোখে শুধু জয় নয়, জেতার আগেই ‘স্লেজিং’ করে বিরোধী পক্ষকে পিষে দেওয়ার দুর্দম আকাঙ্ক্ষা। দাঁতে দাঁত চেপে কংগ্রেসের ‘কোহলি’ শিবকুমার বলে যান, “কর্নাটকের ২৮টি লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে ২০টিই কংগ্রেস জিতবে। নরেন্দ্র মোদীর বিজেপিকে হারিয়ে। মিলিয়ে নেবেন।”

কর্নাটকের প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি তথা উপমুখ্যমন্ত্রী শিবকুমার কোহলি হলে, মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া মহেন্দ্র সিংহ ধোনি। যতই চাপ থাকুক, ঠোঁটের কোণে সর্বদা এক চিলতে হাসি ঝুলছে। কঠিন চ্যালেঞ্জকে তাচ্ছিল্যের ভাব। চোখে-মুখে রসবোধ দেখলে মনে হয়, ‘সিদ্দু’ ডাকনাম সার্থক। লোকসভা ভোটের হাওয়া কোন দিকে প্রশ্ন করলেই বলছেন, “চারশো পার ছেড়ে দিন, এনডিএ গোটা দেশে দু’শো পেরোবে না।”

Advertisement

এই ‘ধোনি-কোহলি জুটি’র হাতেই এ বার লোকসভা নির্বাচনে কর্নাটকে কংগ্রেসের দুর্গ রক্ষার ভার। শুধু লোকসভা নয়, কর্নাটকে কংগ্রেস সরকার রক্ষার ভারও। কারণ, বিজেপি-জেডিএস জোট ভবিষ্যদ্বাণী করেছে, লোকসভায় কর্নাটকে কংগ্রেসের ফল খারাপ ফল হলেই রাজ্যে কংগ্রেস সরকার ভেঙে পড়বে। তাসের ঘরের মতো।

হাতে গুনে সারা দেশের মাত্র তিনটি রাজ্যে কংগ্রেস একার জোরে ক্ষমতায়। কর্নাটক, হিমাচল প্রদেশ, তেলঙ্গানা। তেলঙ্গানায় সদ্য কংগ্রেস ক্ষমতায় এসেছে। হিমাচলের সরকার নড়বড় করছে। বাকি থাকে গত বছরের গ্রীষ্মে জয় করা কর্নাটক। বিজেপির সঙ্গে হাত মেলানোর পর থেকেই জেডিএস-এর প্রধান এইচ ডি কুমারস্বামী বলছেন, লোকসভা ভোটের পরেই কংগ্রেস সরকারের পতন হবে। বিজেপি-জেডিএস মিলে আবার কর্নাটকে সরকার গড়বে।

পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছুড়ছেন শিবকুমার। দক্ষিণ ভারতে কর্নাটকই বিজেপির পুরনো ঘাঁটি। উনিশের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি রাজ্যের আঠাশটি আসনের মধ্যে বিজেপি ছাব্বিশটি আসন ঝুলিতে পুরেছিল। কংগ্রেস, জেডিএস মাত্র একটি করে আসন জিতেছিল। সারা দেশে নরেন্দ্র মোদীর জয়ের রথ রুখে দিতে কংগ্রেস কর্নাটকের সিদ্দু-ডিকে জুটির দিকে তাকিয়ে রয়েছে। ডি কে-র চ্যালেঞ্জ, তিনি বিজেপিকে ছাব্বিশ থেকে ছয়ে নামিয়ে আনবেন। কংগ্রেসের কুড়ি জন সাংসদ কর্নাটক থেকে লোকসভায় যাবেন। তাঁর পাল্টা ভবিষ্যদ্বাণী, “লোকসভা ভোটের পরে কংগ্রেসের কর্নাটক সরকারের শক্তি আরও বাড়বে।”

বিজেপি নেতৃত্ব টের পাচ্ছে, ডি কে-সিদ্দু শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী। গত বছরের বিধানসভা ভোটে নরেন্দ্র মোদী সর্বশক্তি দিয়েও তাঁদের রুখতে পারেননি। রাজ্যের বিজেপি নেতারা প্রমাদ গোনেন, লোকসভায় কর্নাটকে বিজেপির আসন কমতে পারে। কর্নাটকের দুই প্রভাবশালী সম্প্রদায় লিঙ্গায়ত ও ভোক্কালিগা। ডি কে ভোক্কালিগা নেতা। ভোক্কালিগাদের সমর্থন পেতে বিজেপি হাত মিলিয়েছে জেডিএস-এর প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী এইচ ডি দেবেগৌড়া ও তাঁর ছেলে কুমারস্বামীর সঙ্গে। নিজেদের সংগঠনেও বিজেপি মুখ বদল করেছে। রাজ্য সভাপতি করা হয়েছে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বি এস ইয়েদুরাপ্পার পুত্র বিজয়েন্দ্রকে। ইয়েদুরাপ্পা, বিজয়েন্দ্ররা লিঙ্গায়ত সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি।

ধোনি-কোহলির বিরুদ্ধে তরুণ নেতা বিজয়েন্দ্রের ভরসা নরেন্দ্র মোদী এবং শুধুই নরেন্দ্র মোদী। তাঁর দাবি, “কর্নাটকের মানুষ সচেতন। তাঁরা জানেন, দেশের উন্নয়ন, মানুষের নিরাপত্তা, রাষ্ট্রের সুরক্ষার স্বার্থে নরেন্দ্র মোদীর ফের প্রধানমন্ত্রী হওয়া প্রয়োজন।” বিজেপি কর্নাটকের প্রচারে শুধু মোদীর নামেই ভোট চাইছে। কংগ্রেস পাঁচটি গ্যারান্টিকে হাতিয়ার করে রাজ্যে ক্ষমতায় এসেছিল। বিজেপি টের পাচ্ছে, মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়ার সরকারের সেই পাঁচটি গ্যারান্টি গরিব মানুষের মধ্যে সাড়া ফেলেছে। বিশেষত মাসে মহিলাদের জন্য দু’হাজার টাকার নগদ সাহায্য ও নিখরচায় বাস ভ্রমণ সিদ্দারামাইয়া সরকারের তুরুপের তাস। সিদ্দারামাইয়ার বিরুদ্ধে বিজয়েন্দ্রের বলার মতো অভিযোগ একটাই। সংখ্যালঘু তোষণ। তাতে নাকি ‘অ্যান্টি-ন্যাশনাল’ শক্তির মনোবল বাড়ছে।

বেঙ্গালুরুর মাল্লেশ্বরমে কর্নাটক বিজেপির সদর দফতর। বিজেপির কোনও নেতাই উনিশের মতো ছাব্বিশটি আসন জেতার গ্যারান্টি দিতে পারছেন না। তাঁদের মতে, জেডিএস যদি শিবকুমারের ভোক্কালিগা ভোটব্যাঙ্কে ভাঙন ধরাতে পারে, তা হলে আঠারোটি আসন মিলতে পারে। তবে সেটাও বিজেপি-জেডিএস মিলিয়ে। বিজেপিকে দুর্বল প্রমাণ করতে সিদ্দারামাইয়া হাসতে হাসতে অভিযোগ তুলে দিয়েছেন, বিজেপি লোকসভা ভোটের আগেই ৫০ কোটি টাকা দিয়ে কংগ্রেসের বিধায়কদের ভাঙানোর চেষ্টা করেছিল। আর ডি কে বলছেন, “বিধানসভা ভোটে ২২৪টি আসনের মধ্যে ১৩৫টি জিতেছিলাম। লোকসভা ভোটে তার পুনরাবৃত্তি হবে।”

আইপিএল মরসুমে কর্নাটক রাজনীতির ধোনি, কোহলি কাঁধে-কাঁধ মিলিয়ে লড়ছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন