Rachana Banerjee

দলের টানা পরামর্শে সংযম অভ্যাসে ‘দিদি নম্বর ওয়ান’, হুগলির ‘নতুন’ রচনা নিয়ে খানিক স্বস্তি ফিরছে তৃণমূলে

প্রচারের শুরু থেকেই একের পর এক মন্তব্যে নানা বিতর্ক তৈরি করছিলেন রচনা। সমাজমাধ্যমে তাঁর বক্তব্য নিয়ে তৈরি হচ্ছিল নানা মিম। যা ভোটের প্রচারে তৃণমূলের ‘অস্বস্তি’র কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল।

Advertisement

অমিত রায়

শেষ আপডেট: ১৩ মে ২০২৪ ১১:৪৬
Share:

অভিনেত্রী তথা তৃণমূল প্রার্থী রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ছবি: পিটিআই।

হুগলি লোকসভা কেন্দ্রে প্রচারে নামার পর থেকেই সমাজমাধ্যমে মিমের ঝড় বইছিল অভিনেত্রী তথা তৃণমূল প্রার্থী রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ঘিরে। শেষমেশ দল থেকেই তাঁকে সংযত হওয়ার বার্তা দেওয়ায় বাধ্য ছাত্রীর মতো তা মেনে নিয়েছেন ‘দিদি নম্বর ওয়ান’। সম্ভবত সে কারণেই তাঁকে নিয়ে গত এক সপ্তাহে আর কোনও নতুন মিমের তরঙ্গ ওঠেনি সমাজমাধ্যমে। যা দেখে আপাতত স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। হুগলি লোকসভা নিয়ে আবার আশাবাদী হতে শুরু করেছেন তাঁরা।

Advertisement

২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে হুগলি আসন হাতছাড়া হয়েছিল তৃণমূলের। দু’বারের সাংসদ রত্না দে নাগকে হারিয়ে চমক দিয়ে জয়ী হয়েছিলেন অভিনেত্রী তথা বিজেপি প্রার্থী লকেট চট্টোপাধ্যায়। এ বারের লোকসভা ভোটে সেই আসন ফিরে পেতে আরও এক অভিনেত্রীর ওপরই বাজি ধরেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ব্রিগেড সমাবেশে হুগলি লোকসভায় তৃণমূলের প্রার্থী হিসেবে অভিনেত্রী রচনার নাম ঘোষণা করেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তখনই এই মর্মে আলোচনা শুরু হয়েছিল যে, ছোট পর্দার ‘দিদি নম্বর ওয়ান’কে হুগলিতে প্রার্থী করে ‘মোক্ষম চাল’ দিয়েছে তৃণমূল।

কিন্তু প্রচারের শুরু থেকেই দেখা যায়, একের পর এক মন্তব্য করে নানা বিতর্ক তৈরি করছেন রচনা। সমাজমাধ্যমে তাঁর বক্তব্য নিয়ে তৈরি হচ্ছে নানা মিম। যা ভোটের প্রচারে তৃণমূলের ‘অস্বস্তি’র কারণ হয়ে দাঁড়ায়। রচনার আলগা মন্তব্যে ‘রাশ’ টানতে হুগলিতে তাঁর সঙ্গে সর্ব ক্ষণের প্রতিনিধিদল রাখার সিদ্ধান্ত নেয় তৃণমূল। কলকাতা থেকে প্রতিনিধি পাঠিয়ে বেশ কিছু পরামর্শ দেওয়া হয় রচনাকে। যেমন সংবাদমাধ্যমের সব প্রশ্নের উত্তর বিস্তারিত ভাবে না দেওয়া। অযথা কোনও বিষয় নিয়ে কথা না বলা। তাঁর নিজের আচরণ ‘সংযত’ করার পাশাপাশি বিদায়ী সাংসদ লকেটের যে কোনও রাজনৈতিক আক্রমণকে এড়িয়ে না গিয়ে রাজনৈতিক জবাব দেওয়ার পরামর্শও দেওয়া হয়। হুগলি জেলার তৃণমূল নেতৃত্ব সূত্রের খবর, বাধ্য ছাত্রীর মতো দলের নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছেন রচনা। দেখা যাচ্ছে, গত এক সপ্তাহে নতুন করে রচনাকে নিয়ে কোনও মিম তৈরি হয়নি। পাশাপাশিই প্রার্থী হিসেবে বিদায়ী সাংসদের সঙ্গে তাঁর ‘তুলনামূলক যোগ্যতা’ নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারছে না বিজেপি। ফলে হুগলি নিয়ে আবার ‘আশাবাদী’ হচ্ছেন তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব।

Advertisement

গত লোকসভা নির্বাচনে হুগলি লোকসভার অন্তর্গত সাতটি বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে পাঁচটিতেই এগিয়ে ছিলেন বিজেপির লকেট। তৃণমূল নেতৃত্বের লক্ষ্য সে সব বিধানসভা থেকেই রচনাকে যতটা সম্ভব এগিয়ে দেওয়া। তাই তাঁকে নিয়ে নতুন পরিকল্পনা সাজিয়ে এগোতে চাইছে তৃণমূল। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী তাঁর কথাবার্তা থেকে বক্তৃতায় বদল আনা হয়েছে। পঞ্চম দফায় ২০ মে হুগলি লোকসভায় ভোটগ্রহণ। তার আগে রচনাকে ঘিরে তৈরি বিতর্কের অবসান চাইছিলেন তৃণমূল নেতৃত্ব। সেই কাজে মে মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকেই ‘সাফল্য’ আসায় স্বস্তি জোড়াফুল শিবিরে।

রচনার প্রচারের প্রথম দিন থেকেই বিতর্ক তাঁর সঙ্গী। হুগলি লোকসভা এলাকার বিভিন্ন কারখানা থেকে নির্গত ধোঁয়ায় আকাশ কালো হয়ে যেতে দেখছেন তিনি, রচনার এমন মন্তব্য নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। সেই বক্তব্য নিয়ে মিম হতে থাকে। তার জবাব দিতে গিয়ে আবার নিজের ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে একটি ভিডিয়ো ‘শেয়ার’ করেন রচনা। সেখানে দেখা যায়, দূরবর্তী চিমনি থেকে ধোঁয়া বেরোচ্ছে। পরে জানা যায়, সেই ধোঁয়া বার হচ্ছিল একটি রাইস মিল থেকে। তা নিয়েও সমালোচনা শুরু হয়। এর পর হুগলি জেলার দই-মিষ্টির উৎকর্ষ বোঝাতে গিয়ে স্থানীয় গরুদের খাদ্যাভ্যাস নিয়ে মন্তব্য করেন তিনি। মমতার ‘কর্মদক্ষতা’ বোঝাতে গিয়েও তাঁর মন্তব্য তৃণমূলের একাংশের কাছে ‘অস্বস্তিকর’ পর্যায়ে পৌঁছয়। ধারাবাহিক এমন ঘটনায় নড়েচড়ে বসেন তৃণমূল নেতৃত্ব। তার পর কলকাতা থেকে ‘বিশেষ দল’ পাঠিয়ে তাঁকে রাজনৈতিক আদবকায়দা শেখানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement