Lok Sabha Election 2024

চুটিয়ে প্রচার বিরোধীদের, খড়দহে অন্তর্দ্বন্দ্বেই জেরবার তৃণমূল

এখনও ওই এলাকায় সে ভাবে প্রচার শুরুই করতে পারেননি শাসকদলের প্রার্থী সৌগত রায়। প্রশ্ন উঠেছে, গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের ‘কাঁটা’র খোঁচা ভোটবাক্সে প্রভাব ফেলবে না তো?

Advertisement

শান্তনু ঘোষ

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ এপ্রিল ২০২৪ ০৮:০৪
Share:

—প্রতীকী ছবি।

গোষ্ঠী-কোন্দলের ‘কাঁটা’য় বিদ্ধ খড়দহ!

Advertisement

পরিস্থিতি এমনই যে, দমদম লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত ওই বিধানসভা এলাকায় বিরোধী নয়, নিজেদের অন্তঃকলহ মেটাতেই হিমশিম খাচ্ছে তৃণমূল। যার জেরে এখনও ওই এলাকায় সে ভাবে প্রচার শুরুই করতে পারেননি শাসকদলের প্রার্থী সৌগত রায়। প্রশ্ন উঠেছে, গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের ‘কাঁটা’র খোঁচা ভোটবাক্সে প্রভাব ফেলবে না তো? আড়াআড়ি ভাবে বিভক্ত শাসকদলের নেতারা অবশ্য প্রত্যেকেই দাবি করছেন, তাঁরা দলকে জেতাতে
বদ্ধপরিকর। কিন্তু বিধায়ক তথা মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে ভোটের কাজ করতে নারাজ খড়দহ শহর ও গ্রামীণের নেতাদের বড় অংশ।

তবে, এটা যে শুধু তাঁদের কথার কথা, তা কিন্তু নয়। দিনকয়েক আগে রীতিমতো সৌগতের কাছে গিয়ে নিজেদের ক্ষোভের কথা তাঁরা জানিয়ে এসেছেন বলে খবর। বাস্তবেও তার প্রমাণ পেয়েছেন তৃণমূল প্রার্থী। গত রবিবার খড়দহের রবীন্দ্র ভবনে নির্বাচনের প্রস্তুতির লক্ষ্যে কর্মিসভা ডেকেছিলেন শোভনদেব। সেখানে ২০ জন (২২টি ওয়ার্ডের মধ্যে একটিতে নির্দল এবং এক জন প্রয়াত) পুরপ্রতিনিধির মধ্যে ১১ জন অনুপস্থিত ছিলেন। যাঁদের মধ্যে উপ-পুরপ্রধান, চেয়ারম্যান পারিষদ ও শহরের সভাপতিও রয়েছেন। পাশাপাশি, ২২টি ওয়ার্ডের তৃণমূল সভাপতি, ব্লক সভাপতি এবং পঞ্চায়েত স্তরের নেতারাও গরহাজির ছিলেন। গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কথা অস্বীকার করে শোভনদেব শুধু বলেন, ‘‘ওঁরা কেন আসেননি, তা বলতে পারব না। অনুপস্থিতির কথা দলের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাব।’’

Advertisement

আর সৌগত বলছেন, ‘‘কারও কারও অভিযোগ আছে। ইতিমধ্যেই কয়েক বার ওঁদের সঙ্গে কথা বলেছি। তবে মিটিংয়ে অনুপস্থিত থাকলেও ওঁদের বাতিল করিনি।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘ওঁদের সঙ্গে আবারও কথা বলে বোঝাব, এই নির্বাচন ব্যক্তি নয়, দলের বিষয়।’’ সূত্রের খবর, বিধায়কের প্রতি ক্ষুব্ধ গোষ্ঠীর নেতাদের ডাকা আলাদা একটি কর্মিসভাতেও সৌগত সময় দেবেন বলে জানিয়েছেন। আরও জানা যাচ্ছে, বিধায়কের প্রতি ক্ষোভের সূত্রপাত, খড়দহ বিধানসভা উপনির্বাচনে শোভনদেব জেতার মাসকয়েক পর থেকেই। লোকসভা ভোট ঘোষণার পরে তা আরও বেশি মাত্রায় প্রকাশ্যে এসেছে বলেই স্থানীয় রাজনৈতিক মহলের পর্যবেক্ষণ। সম্প্রতি রহড়া বাজার এলাকায় দলীয় একটি সভার মঞ্চে স্থানীয় এক নেতার সঙ্গে প্রকাশ্যেই তর্কে জড়াতে দেখা গিয়েছিল শোভনদেবকে। তার পরে বিধায়ক ও পুরপ্রধান নীলু সরকারের নেতৃত্বে নাগরিক সমাজের নামে একটি মিছিলও হয়েছিল। যা নিয়ে বিতর্কও তৈরি হয়েছিল। রাজনৈতিক মহলের পর্যবেক্ষণ, বিক্ষুব্ধ নেতৃত্বকে বার্তা দিতেই ওই মিছিলের আয়োজন হয়েছিল।

সূত্রের খবর, খড়দহ পুরসভা এলাকা এবং চারটি পঞ্চায়েতের (বিলকান্দা ১, ২, পাতুলিয়া ও বন্দিপুর) যে নেতারা বিক্ষুব্ধ, তাঁদের অভিযোগ, বিধায়ক হওয়ার কয়েক মাস পর থেকেই দেখা গিয়েছে, দলের পুরনো কর্মীরা ব্রাত্য শোভনদেবের কাছে। ছাত্র-রাজনীতি থেকে উঠে আসা এবং দীর্ঘদিন সিপিএমের বিরুদ্ধে লড়াই করা নেতাদের প্রাধান্য দেওয়ার বদলে কতিপয় স্বার্থান্বেষীকে সব কিছুতে এগিয়ে রাখছেন বিধায়ক। এক নেতার কথায়, ‘‘নতুনেরা অবশ্যই আসবেন। কিন্তু অরাজনৈতিক লোকজনকে প্রাধান্য দেওয়া কোনও ভাবেই মানা যায় না।’’

খড়দহে রীতিমতো ঢাকঢোল বাজিয়ে প্রচারে নামতে দেখা গিয়েছে বিজেপি প্রার্থী শীলভদ্র দত্তকে। কম যাচ্ছেন না সিপিএম প্রার্থী সুজন চক্রবর্তীও। দু’জনেই খড়দহে চুটিয়ে প্রচার শুরু করেছেন। সেখানে সৌগত অনেকটাই পিছিয়ে রয়েছেন বলে দাবি স্থানীয়দেরও। শীলভদ্র বলছেন, ‘‘শুধু খড়দহ নয়, গোটা দমদম জুড়েই এক হাল। মানুষ এ বার জবাব দেবে।’’ শাসকদলের গোষ্ঠী-কোন্দলের মাসুল সাধারণ মানুষকে দিতে হচ্ছে বলেও অভিযোগ সুজনের।

তবে, পাড়ায় পাড়ায় ঘুরে কিংবা সভা করে প্রচার এখন শুরু না হলেও সৌগতের সমর্থনে দেওয়াল লেখার ক্ষেত্রে তাঁরা কোনও খামতি রাখছেন না বলেই দাবি বিধায়কের প্রতি ক্ষুব্ধ নেতাদের। কিন্তু তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বের নির্দেশ অনুযায়ী, প্রতিটি বিধানসভা এলাকার বিধায়ক নির্বাচন কমিটির প্রধান হবেন। রাজনৈতিক মহলের প্রশ্ন, ‘‘তা হলে খড়দহে কী হবে? মুখে যে যা-ই বলুন, বিধায়কের নেতৃত্ব কি শেষ পর্যন্ত মানবেন বিক্ষুব্ধ নেতারা?’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন