Lok Sabha Election 2024

‘পাঠানকে না-সরালে নির্দল হয়ে দাঁড়াব বহরমপুরে’! দলকে হুমকি ছুড়ে দিলেন তৃণমূল বিধায়ক হুমায়ুন

তৃণমূল তাঁর বিরুদ্ধে শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে পদক্ষেপ করলে তাঁর কোনও যায়-আসে না বলছেন বিধায়ক হুমায়ুন কবীর। অধীর চৌধুরীর বিরুদ্ধে নিজেকে ‘যোগ্য প্রার্থী’ বলে মনে করেন ভরতপুরের বিধায়ক।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

বহরমপুর শেষ আপডেট: ১২ মার্চ ২০২৪ ১৮:৪৬
Share:

(বাঁ দিকে) ইউসুফ পাঠান এবং হুমায়ুন কবীর। —ফাইল চিত্র।

বহরমপুর কেন্দ্রে দলের প্রার্থী নিয়ে আগেই অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন ভরতপুরের তৃণমূল বিধায়ক হুমায়ুন কবীর। ইনিয়ে-বিনিয়ে বোঝাতে চান কংগ্রেসের অধীর চৌধুরীর বিরুদ্ধে লড়ার জন্য তিনিই যোগ্য। বস্তুত, রবিবার ব্রিগেড ময়দানে তৃণমূল প্রার্থিতালিকা ঘোষণার পর থেকেই ক্ষুব্ধ ছিলেন হুমায়ুন। প্রার্থী ঘোষণার ৭২ ঘণ্টার মধ্যে এ বার দলকেই চ্যালেঞ্জ ছুড়ে বসলেন তৃণমূল বিধায়ক। তাঁর ঘোষণা, ‘‘ভোট ঘোষণার আগে প্রার্থী পরিবর্তন না হলে নিজেই বহরমপুর কেন্দ্রে নির্দল প্রার্থী হিসাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করব।’’ শুধু তাই নয়, দলীয় প্রার্থীর থেকে বেশি ভোট পাওয়ারও খোলা চ্যালেঞ্জও দিলেন হুমায়ুন। যার প্রেক্ষিতে স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের কটাক্ষ, ‘‘দল কারও পৈতৃক সম্পত্তি নয়।’’

Advertisement

বহরমপুর থেকে তৃণমূল প্রার্থী করেছে প্রাক্তন ক্রিকেটার ইউসুফ পাঠানকে। যার প্রেক্ষিতে হুমায়ুন যুক্তি দেন, খেলোয়াড় দিয়ে দুঁদে রাজনীতিকের সঙ্গে লড়া যাবে না। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি তথা বিদায়ী সাংসদের বিরুদ্ধে লড়ার জন্য ‘অভিজ্ঞ’ কাউকে প্রয়োজন। ‘বহিরাগত’কে দিয়ে সেটা সম্ভব নয়। মঙ্গলবার কেন্দ্রে জাতীয় কংগ্রেস প্রার্থী অধীর চৌধুরীর জয়ের সম্ভাবনা দেখেছিলেন তৃণমূল বিধায়ক হুমায়ুন। দলীয় প্রার্থী ইউসুফ পাঠানকে বহিরাগত বলে কটাক্ষ করেছিলেন। মঙ্গলবার এক মাত্রা বাড়িয়ে নিজেই বহরমপুর কেন্দ্রের নির্দল প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার কথা জানালেন। জানালেন, ভোট ঘোষণার দিন পর্যন্ত প্রার্থী বদলের সুযোগ দিয়েছেন দলকে। মঙ্গলবার হুমায়ুন বলেন, ‘‘ভেবে দেখলাম, মুর্শিদাবাদের রাজনৈতিক সচেতন ভোটার যাঁরা, তাঁরা বহিরাগত প্রার্থীকে গ্রহণ করছেন না। জিতলেও তো সাংসদের একটা সই পাওয়ার জন্য মুর্শিদাবাদ থেকে গুজরাত যেতে হবে। আমি এই ভাবনার সঙ্গে সহমত পোষণ করছি।’’ এর পর তৃণমূলকে হুঁশিয়ারি দিয়ে ভরতপুরের বিধায়ক বলেন, ‘‘ভোট ঘোষণা হলেই আমি নির্দল প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ব্যাপারে ৯০ শতাংশ মনস্থির করেছি।’’ বাকি ১০ শতাংশ? হুমায়ুনের জবাব, ‘‘সেটা দলকে ভাববার জন্য সময় দিলাম।’’ আর দল যদি শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা ভাবে? প্রশ্ন শুনে আবার তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বকে চ্যালেঞ্জ করে হুমায়ুনের মন্তব্য, ‘‘আমি এ সবের জন্য তৈরি আছি। আমি তৃণমূলে থাকার চেষ্টা করেছিলাম। তাই বলে মানুষের মতামতের বিরুদ্ধে যেতে পারব না। কারও সঙ্গে আলোচনা না করে যিনি প্রার্থী ঘোষণা করেছেন, তিনি চাইলেই কারও সঙ্গে আলোচনা-না করে প্রার্থী প্রত্যাহার করতে পারেন। আর যদি তা না করেন তা হলে আমাকে সাসপেন্ড করে দিক। ও নিয়ে আমার কোনও ভ্রুক্ষেপ নেই।’’

হুমায়ুনের এই ক্ষোভ এবং চ্যালেঞ্জ প্রসঙ্গে মুর্শিদাবাদ তৃণমূলের বর্ষীয়ান নেতা এবং সংসদ আবু তাহের খান বলেন, ‘‘তৃণমূল তো কারও পৈতৃক সম্পত্তি নয়। দিদি যখন হুমায়ুনকে ভরতপুরের প্রার্থী করেছিলেন, তিনিও তখন সেখানকার বহিরাগত ছিলেন। উচ্চ নেতৃত্ব যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার নেবেন।’’ আর কংগ্রেসের তরফে জয়ন্ত দাস বলেন, ‘‘কোন দলের কে কী করবেন, তা নিয়ে আমরা চিন্তিত নই। অধীর চৌধুরী জননেতা। মানুষই তাঁকে নির্বাচিত করেন। আবার করবেনও।’’

Advertisement

কংগ্রেস থেকে তৃণমূল ঘুরে বিজেপি হয়ে আবার তৃণমূলে ফিরেছিলেন হুমায়ুন। এক সময় অধীর চৌধুরীর ‘ডান হাত’ ছিলেন তিনি। ২০১১ সালে বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের টিকিটে বিধায়ক হন। কিন্তু অধীরের সঙ্গে মনোমালিন্যের জেরে ২০১২ সালের ২০ নভেম্বর তৃণমূলের তৎকালীন মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের হাত ধরে ঘাসফুল শিবিরে যোগ দেন। পরবর্তী কালে আবার তৎকালীন তৃণমূলের জেলা পরিদর্শক শুভেন্দু অধিকারী এবং প্রাক্তন তৃণমূল নেতা মান্নান হোসেনের সঙ্গে মতানৈক্য হয় হুমায়ুনের। ২০১৫ সালে দল তাঁকে তৃণমূল থেকে সাসপেন্ড করে। ২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটে টেবিল চিহ্নে নির্দল প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন হুমায়ুন। অল্প ভোটের ব্যবধানে কংগ্রেস প্রার্থী রবিউল আলম চৌধুরীর কাছে পরাজিত হন।

২০১৮ সালেও কংগ্রেসের হয়ে পঞ্চায়েত ভোট পরিচালনা করেন হুমায়ুন। কিন্তু, সেখানেও স্থায়ী হননি। ২০১৮ সালে দিল্লিতে গিয়ে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনা করে কৈলাস বিজয়বর্গীয়র হাত ধরে বিজেপিতে যোগদান করেন। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে মুর্শিদাবাদ কেন্দ্রে বিজেপির প্রার্থীও হন। কিন্তু ২০২০ সালে এনআরসি আন্দোলনের পটভূমিতে বিজেপি ত্যাগ করে আবার তৃণমূলে যোগ দেন হুমায়ুন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন