ঢাকের শব্দের সঙ্গে বাঙালির আজন্ম আনন্দের যোগ। ঢাক মানেই শরত্, ঢাক মানেই শিউলি, ঢাক মানেই আগমনী, ঢাক মানেই উত্সবে মেতে ওঠা। সাম্বত্সরিক বাদ-বিবাদ-দুঃখ-ক্লেশ-ঘৃণা ভুলে একে অন্যকে জড়িয়ে ধরার সময়। ঢাক মানেই দূর প্রবাসে থাকা আত্মীয়ের ফিরে আসা, ঢাক মানে নিকোনো উঠোন, নতুন পোশাক, চরাচরব্যাপী মিলনের আবহ।
সেই ঢাকও আজ চুরি হয়ে গেল বাঙালির হৃদয়-মনন থেকে। আজন্মলালিত ঢ্যামকুড়কুড় স্মৃতিকে ভুলিয়ে এখন ঢাকের নতুন চড়াম চড়াম বাদ্যির আহ্বান। ধ্বনি বদলায়, মুহূর্তে বদলে যায় আবহ। মিলনের প্রাঙ্গনে শুরু হয়ে যায় রণগর্জন। শাঁখ-আজানের ভূমিতে দুন্দুভিনাদ, কলরব, আতর্নাদ, হ্রেষাধ্বনি, হাহাকার, সজন হারানোর বেদনা।
প্রজাদের কর্তব্য শেষ। রাজা নির্বাচনের দীর্ঘ পর্ব অতিক্রান্ত। এ বার কর্তব্যের পালা রাজযুদ্ধে অংশগ্রহণকারীদের। ১৯ মে আর মাত্রই কয়েকটা দিনের প্রান্তে। বিজেতা অথবা বিজিত, দুই পক্ষেরই ভাবনার কেন্দ্রে থাকুক ওই নিতান্ত নিরীহ প্রজা। শুক্রবার বাম পক্ষের তরফে যে বার্তা এসেছে তা স্বাগতযোগ্য। জয় হোক বা বিজয়, রাজ্যে শান্তির পরিবেশ যাতে বিঘ্নিত না হয়, সেই আহ্বান এসেছে গত পাঁচ বছরের বিরোধী শিবির থেকে। এক স্বর আসা উচিত প্রতিপক্ষ শিবির থেকেও। ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে অথবা চড়াম চড়াম এই ধ্বনিতে শুধুই দ্বেষ-হিংসা-বদলা-কলহের আবাহন।
উলুখাগড়া শেষ পর্যন্ত শান্তিই চায়। ফল প্রকাশের প্রাক্ মুহূর্তে বিবদমান রাজারা এই আপ্তবাক্যটাকে স্মরণ করে নিন। যে পক্ষেরই জয় আসুক না কেন, তারা মনে রাখুক ঢাকের ঢ্যামকুড়কুড় বাদ্যির ধ্বনি চায় এ বাংলা।