একটা ছোট রাজ্যে এত রাজা কেন?

‘ভোট দিয়ে যা, আয় ভোটাররা’ খুব ছোটবেলায় শোনা ‘দাদাঠাকুর’ সিনেমার সেই গান। আমার তখনও বয়স হয়নি, তাই ভোট দিতে যাবার অনুমতি ছিল না।

Advertisement

শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৮ এপ্রিল ২০১৬ ১২:০১
Share:

‘ভোট দিয়ে যা, আয় ভোটাররা’ খুব ছোটবেলায় শোনা ‘দাদাঠাকুর’ সিনেমার সেই গান। আমার তখনও বয়স হয়নি, তাই ভোট দিতে যাবার অনুমতি ছিল না। কিন্তু ভোটের আগে থাকতেই দেখতাম, বাড়িতে, পাড়ায় বেশ একটা উৎসবের আয়োজন, কাকে ভোট দেবে, কখন গিয়ে ভোট দেবে— এ সব নিয়ে উত্তেজনার অন্ত নেই। তারপর আসতো সেই দিন। বাড়ির বড়রা যেন দল বেঁধে মর্নিং শো-এ সিনেমা দেখতে যাচ্ছে, ‘ও ন’দি তোমার হল?’ ‘দাঁড়া স্নানটা সেরে নিই। বাসি কাপড়ে ভোট দিলে অমঙ্গল হবে।’ আমরা ছোটরা হাঁ করে দেখতাম, এক ঝাঁক উত্তেজনা স্নান করে পাউডার মেখে ভোট দিতে বেরিয়ে গেল, আমাদের দিকে ফিরেও তাকালো না। খুব অভিমান হত, তবু প্রথম প্রথম একটা আশা থাকত, লেখার প্রথমেই উল্লেখ করা গানটার কথা অনুযায়ী বোধ হয় ‘মাছ কুটলে মুড়ো’ দেবে, হয়তো গরুর দুধও দেবে। বড়রা ভোট দিয়ে বা়ড়ি ফিরলে সেই মাছের মাথা দিয়ে ডাল হবে। হয়তো পায়েসও হবে। কিন্তু না, প্রতি বারই তারা ফিরত খালি হাতে-আঙুলে কালসিটে নিয়ে! পরে বুঝেছিলাম ওটা রং। ওরা যে ভোট দিয়েছে-তার প্রমাণ। এখন যেমন অনেক ডিস্ক-এ ঢোকার সময় হাতে স্ট্যাম্প মেরে দেয় অনেকটা সেই রকম। আর ভোটারদের আঙুলের সেই রং উঠতে উঠতে আমার বয়সও বাড়ছিল।

Advertisement

এখন আমিও ভোটার! বহু বছর ধরে। ভোট দিতে যাবার যে চিত্র বর্ণনা করলাম সেটা হয়তো খুব একটা পাল্টায়নি। আজও হয়তো ‘ন’দি’রা স্নান করেই ভোট দিতে যান। আজও হয়তো রাঙাদাদু তাঁর নাতির কাঁধে ভর দিয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে ভোটের লাইনে গিয়ে দাঁড়ান, আজও নিশ্চয়ই ইস্কুল ছুটি হওয়ার আনন্দে ছেলেরা পাড়ায় পাড়া ক্রিকেট, ফুটবল খেলে।

শুধু পাল্টে গিয়েছে আমার চিন্তা, আমার ভাবনা। ‘রাজনীতি’তো রাজার নীতি। রাজা তাঁর সিংহাসনে বসে প্রজাদের মঙ্গলের জন্য কাজ করবেন, বদলে প্রজারা রাজকোষে তুলে দেবে খাজনা। খুবই পুরনো চিন্তা, খুবই পুরনো ভাবনা, কিন্তু এটাই কি গোড়ার কথা নয়? তাই যদি হবে তা হলে একটা ছোট রাজ্যে এত রাজা কেন? কেন এত রঙের পতাকা? কেন এত মতভেদ? কেন সাধারণ মানুষের উপকার করার এই রাজনীতির কারণে এত সাধারণ মানুষকেই মরতে হয়? মানুষের উপকারই যদি রাজনীতির মূল লক্ষ্য হয়, তা হলে গদিচ্যুত রাজা কেন বর্তমান রাজার সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে মানুষের উপকার করতে পারেন না?

Advertisement

এর উত্তর কিছু সচেতন সাধারণ মানুষ নিশ্চয়ই জানেন। যে জন্য ভোটের মূল মন্ত্র— ‘অনাচার করো যদি, রাজা তবে ছাড়ো গদি।’ এর জন্যই ভোট, আর তাই-‘ভোট দিয়ে যা, আয় ভোটাররা।’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন