আবার একটা মর্মান্তিক ঘটনা। তাকে ঘিরে আবার উত্তাল, উত্তপ্ত দিন।
কালী পুজোয় বলি দেওয়ার জন্য মোষ কেনা হয়েছিল। খুঁজে না পেয়েই বলিদানের হোতারা ধরে নিলেন, চুরি গিয়েছে মোষ। চোর খুঁজতে রাস্তায় বেরিয়ে যাকে সামনে পাওয়া গেল, তাকেই বলি দেওয়া হল।
ডায়মন্ড হারবারের ঘটনাটা নাড়িয়ে দিয়েছে সংবেদনশীলতার শিকড় পর্যন্ত! অচেনা, অজানা এক তরুণ। নাম, গোত্র, পরিচয় কিছুই জানা নেই। অথচ এক দল উন্মত্তের মনে হল, সে-ই চোর। অতএব, বেদম প্রহার শুরু। অতএব, ছেলের মুক্তি চেয়ে আছাড়িপিছাড়ি কাঁদতে থাকা মাকে চুলের মুঠি ধরে হিড়হিড় করে সরিয়ে দেওয়া। অতএব, মৃতপ্রায় হয়ে আসা তরুণকেও ততক্ষণ হাসপাতালে নিয়ে যেতে না দেওয়া, যতক্ষণ না মোষ চুরির দায় স্বীকার করে লক্ষাধিক টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার মুচলেকায় অশ্রুবিহ্বল মা সই করে দিচ্ছেন।
গোটা কর্মকাণ্ডের নেতৃত্বে কে? তৃণমূলের নেতা তথা পঞ্চায়েতের উপপ্রধান।
পুলিশ কী বলছে? খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না মূল অভিযুক্তকে।
জনরোষ আছড়ে পড়েছে অভিযুক্তের বাড়িতে, আশপাশেও। আইন হাতে তুলে নিয়ে আর এক দল মানুষ উন্মত্ত ক্রোধে ভাঙচুর চালিয়েছে, আগুন লাগিয়ে দিয়েছে।
আইনের রক্ষকদের উপর কি ফের ভরসা কমতে শুরু করল? মাত্র ক’দিন আগেই তো হৃত গৌরব পুনরুদ্ধার করেছিল বাংলার পুলিশ! ভোটের বাংলায় পুলিশের ঋজু মেরুদণ্ড তো যথেষ্ট প্রশংসা কুড়িয়েছিল! পরের কয়েক দিনে গঙ্গা দিয়ে যেটুকু জল গড়াল, তাতেই সব সঙ্কল্প ভেসে গেল নাকি?
নচেৎ এই জনরোষ তৈরি হওয়ার কথা তো ছিল না! অভিযুক্তকে আদালতের কাঠগড়া পর্যন্ত টেনে নিয়ে যাওয়া কি খুব শক্ত কাজ ছিল? পুলিশ ব্যর্থ হল? নাকি এ ব্যর্থতা ইচ্ছাকৃত?
পুলিশ ব্যর্থ হলেই আইন হাতে তুলে নিতে পারে জনসাধারণ, এমন কথা মোটেই বলছি না। কিন্তু এমন ভয়ঙ্কর ঘটনা ঘটিয়েও অভিযুক্ত আইনের তথাকথিত লম্বা হাতের নাগালের বাইরে চলে যাবে কেন?
পুলিশ কি সব গৌরবগাথা জলাঞ্জলি দিয়ে ১৯ মে-র দিকে তাকিয়ে রয়েছে? রাশি রাশি ইভিএমে বন্দি হয়ে থাকা জনরায় কোন দিকে, তা বুঝে নেওয়ার জন্যই কি এই অপেক্ষা? রায় জেনে তবেই কি স্থির হবে পুলিশের ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা? ডায়মন্ড হারবার কাণ্ডের মূল অভিযুক্তকে পুলিশ খুঁজে পাবে কি না, তা কি ১৯ মে স্থির হবে?
যদি তা-ই হয়, তা হলে আমরা এক পা-ও এগোতে পারিনি। সেই তিমিরেই রয়ে গিয়েছি। মাঝের ক’টা দিনে পুলিশের যে ভূমিকা দেখলাম, তাকে ‘নিয়মের’ ব্যতিক্রম ছাড়া কিছু বলতে পারব না সে ক্ষেত্রে।