দিনহাটায় মমতা

চড়া রোদে অপেক্ষা করে সভায় অসুস্থ ৬

নেত্রীর অপেক্ষায় বসে রয়েছেন কর্মী-সমর্থকেরা। মাঝ বৈশাখের চড়া রোদ উপেক্ষা করেই। হঠাৎ ছন্দপতন। প্রায় অচৈতন্য হয়ে পড়লেন এক মহিলা সমর্থক। তার পরে আরও একজন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কোচবিহার শেষ আপডেট: ০৪ মে ২০১৬ ০৩:৫২
Share:

কাঠফাটা রোদে গলা ভেজানো। নিজস্ব চিত্র।

নেত্রীর অপেক্ষায় বসে রয়েছেন কর্মী-সমর্থকেরা। মাঝ বৈশাখের চড়া রোদ উপেক্ষা করেই। হঠাৎ ছন্দপতন। প্রায় অচৈতন্য হয়ে পড়লেন এক মহিলা সমর্থক। তার পরে আরও একজন। চ্যাংদোলা করে এক-দুজনকে বের করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে হাসপাতালে। চারপাশ থেকে সাধারণ মানুষ ‘জল জল’ করে চিৎকার করছেন। এই ছবি মঙ্গলবার দিনহাটার সংহতি ময়দানে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভার আগে।

Advertisement

সভার পরেও ক্ষোভে ফেটে পড়েন সভায় আসা তৃণমূল কর্মীরা। তাঁদের অভিযোগ, এলাকায় এলাকায় প্রচার চলে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সকাল ১১টায় সভায় পৌঁছবেন। সেই মতো তাঁরা সকাল সকাল বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়েন। কেউ সকাল ৮টায় ও কেউ ৯টায় বাড়ি থেকে বেরোন। অনেকেই জানান, তাঁরা সাড়ে ৯টার মধ্যে মাঠে পৌঁছবেন। মাঠের অল্প অংশে ছাউনির ব্যবস্থা ছিল। প্রথমদিকে যে শিশু মহিলারা আসেন তাঁদের ওই অংশে বসতে দেওয়া হয়। লোক বাড়তে থাকায় রোদের মধ্যেই বসার ব্যবস্থা করা হয় বাকি মহিলাদের।

অসুস্থ এক মহিলাকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
দিনহাটায় ছবিটি তুলেছেন হিমাংশুরঞ্জন দেব।

Advertisement

বেলা সাড়ে ১২টার পর থেকে একের পর এক জন অসুস্থ হতে শুরু করেন। সেই সময় ভিড় উপচে পড়েছিল। মাঠের চারদিকে বাঁশ দিয়ে ব্যারিকেড তৈরি করা হয়। ব্যারিকেডের ফাঁকে রাস্তাও রাখা হয়। রাস্তা দিয়ে বেরনোর মতো পরিস্থিতি ছিল না। সামনের দিকে বাঁশের ব্যারিকেড থাকায় কেউ আসতে পারছিলেন না। তা নিয়ে ক্ষোভে চিৎকার শুরু করেন সভায় আসা জনতার একাংশ। জল নেই কেন সে প্রশ্ন তুলে তাঁরা সরব হন। তড়িঘড়ি কিছু জলের বোতল এনে ওই ভিড়ে দেওয়া হয়। অসুস্থ হয়ে পড়া এক মহিলার মাথায় জল ঢেলে দেওয়া হয়। ওই সামান্য জল নিতে কার্যত মারামারি শুরু হয়ে যায়। এর পরেই আসাতন বেওয়া, মৌমিতা সরকারদের উদ্ধারে নামে পুলিশ। বাঁশের ব্যারিকেডের কিছুটা অংশ খুলে ওই মহিলাদের চ্যাংদোলা করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া শুরু হয়। ওই মহিলাদের একজন বলেন, “এত রোদের মধ্যে তিন ঘণ্টা ধরে বসে আছি। মাথা ঘুরছে। মাথা তুলতে পাচ্ছি না। চোখেওঁ কিছু দেখতে পাচ্ছি না।” আরেক মহিলা বলেন, “জল নেই কোথাও। চার৫ ঘণ্টা কী করে জল ছাড়া বসে থাকব?”

বেলা ২টো নাগাদ সভাস্থলে পৌঁছন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি পরিস্থিতি আঁচ করতে পেরেই বলেন, “বেলা ১২টায় রবি (রবীন্দ্রনাথ ঘোষ) আমাকে ফোন করে জানিয়েছিলেন মাঠ ভরে গিয়েছে। আমি ২টোয় আসব বলে সময় দিয়েছিলাম। আমি সেই সময়ের মধ্যে এসে গিয়েছি।” তৃণমূল নেত্রীর বক্তব্য চলার সময়েই এক মহিলা অসুস্থ হয়ে পড়েন। সেদিকে নজর পড়ে তাঁর। সঙ্গে সঙ্গে তিনি ব্যবস্থা নিতে বলেন। পুলিশ কর্মীরা সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যান। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “একজন অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। অসুবিধের কিছু নেই। তাঁকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতাল নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।” এর পরে তিনি অল্প সময়ের মধ্যে তাঁর বক্তব্য শেষ করেন।

প্রশাসন সূত্রের খবর, এ দিন দিনহাটার তাপমাত্রা ৩৬ ডিগ্রি ছাড়িয়ে গিয়েছিল। সেই সঙ্গে ছিল প্রবল আর্দ্রতা। প্রখর রোদে খালি মাথায় বসে থেকেই তাঁরা অসুস্থ হয়ে পড়েন বলে দিনহাটা হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে। এ দিন ৬ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। তাঁদের নাম আসাতন বেওয়া, মৌমিতা সরকার, সুলিপি বর্মন, জয়ন্তী বর্মন, আলিমা বিবি এবং আলিমা খাতুন। দিনহাটার তৃণমূল প্রার্থী উদয়ন গুহ বলেন, “আমরা সাড়ে ১২টায় সময় দিয়েছিলাম। মানুষ অনেক আগে থেকেই আসতে শুরু করেন। প্রচণ্ড রোদে কয়েক জন মহিলা অসুস্থ হয়ে পড়েন। এখন ভাল আছেন।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন