দুই প্রার্থীর মনোনয়ন পেশ

উচ্ছ্বাসে ভেসে অশোক, ভাইচুং এলেন নীরবে

সকাল দশটা বাজতে না বাজতেই রোদ এখন চড়া। তবে তার ছাপ নেই ভিড়টার চোখেমুখে। সোল্লাসে সেখান থেকে উঠছে, ‘ইনকিলাব জিন্দাবাদ’ ‘বন্দেমাতরম’ স্লোগান। মিছিলের রংও লাল-তেরঙ্গায় মাখামাখি। শনিবারের হিলকার্ট রোডে এমন ছবি দেখে আশপাশ থেকে দৌড়ে এসে যোগ দিলেন বাম-কংগ্রেস সমর্থকদের অনেকেই।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ২৭ মার্চ ২০১৬ ০১:৪৬
Share:

‘‘শঙ্কর, জল খাও।’’ মনোনয়ন পেশ করতে যাওয়ার পথে জেলা কংগ্রেস সভাপতি শঙ্কর মালাকারকে এ ভাবেই জলের বোতল এগিয়ে দিলেন অশোক ভট্টাচার্য। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক।

সকাল দশটা বাজতে না বাজতেই রোদ এখন চড়া। তবে তার ছাপ নেই ভিড়টার চোখেমুখে। সোল্লাসে সেখান থেকে উঠছে, ‘ইনকিলাব জিন্দাবাদ’ ‘বন্দেমাতরম’ স্লোগান। মিছিলের রংও লাল-তেরঙ্গায় মাখামাখি।

Advertisement

শনিবারের হিলকার্ট রোডে এমন ছবি দেখে আশপাশ থেকে দৌড়ে এসে যোগ দিলেন বাম-কংগ্রেস সমর্থকদের অনেকেই। জোটের এমন আবহেই মনোনয়নপত্র জমা দিলেন শিলিগুড়ির সিপিএম প্রার্থী, তথা শহরের মেয়র অশোক ভট্টাচার্য। কংগ্রেস নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে হাসতে হাসতে মহানন্দা সেতু লাগোয়া এয়ারভিউ মোড় থেকে শিলিগুড়ির কোর্ট পর্যন্ত হেঁটেও এতটুকুও ক্লান্তির চিহ্ন নেই ষাটোর্ধ্ব অশোকের চোখেমুখে। বরং, হাসিমুখে সকলকে কখনও শঙ্কর মালাকরকে জলের বোতল এগিয়ে দিয়েছেন। আবার কখনও প্রাক্তন মেয়র গঙ্গোত্রী দত্তকে ডেকে কথা বলেছেন শিলিগুড়ির বর্তমান মেয়র। এমন দৃশ্য দেখে উদ্দীপ্ত বামেরা ঘনঘন স্লোগান দিলেন আদালতের অদূরেই। বামেদের স্লোগান শেষ হতেই ‘বন্দেমাতরম’ ধ্বনি দিয়ে এলাকা কাঁপিয়ে অশোকবাবুকে ভোটে জেতানোর আর্জি জানালেন কংগ্রেসের নেতা-কর্মীরা। বেলা ১টায় মনোনয়ন জমার পরে অশোকবাবু যখন ফিরছেন, তখন তাঁর চেহারায় যেন একটা তৃপ্তির ছাপ।

ঘণ্টাখানেক বাদে ওই আদালত চত্বরের সামনেই হুসহাস করে থামল কয়েকটি গাড়ি। দেখা গেল, সপরিবারে মনোনয়ন জমা করতে পৌঁছেছেন ভাইচুং ভুটিয়া। আগেই তৃণমূল নেতা গৌতম দেব সহ জেলার নেতা কৃষ্ণ পাল, রঞ্জন সরকারকে পৌঁচে গিয়েছিলেন। ভাইচুং তাঁর স্ত্রী মাধূরী টিপনিস এবং ছোট দুই মেয়ে এবং এক ছেলেকে নিয়ে পৌঁছলে স্বাগত জানান দলের নেতারা। ভাইচুং বলেন, ‘‘পরিবার, দলের সকলেই আমার পাশে রয়েছেন। ভোটে জিতে শিলিগুড়ির সমস্তস্তরের মানুষের জন্য কাজ করতে চাই।’’

Advertisement

দলের একাংশের পক্ষ থেকে মিছিল করে মনোনয়নের প্রস্তাব দিলেও ভাইচুং তা গ্রহণ করেননি বলে দল সূত্রেই দাবি করা হয়েছে। কেন? ভাইচুংয়ের জবাব, ‘‘মিছিল হলে সাধারণ বাসিন্দাদের সমস্যা হতে পারে।’’ তা মনোনয়ন পেশের দিনে কিছুটা হলেও ব্যাকফুটে থাকতে হল কি না বাইচুংকে, সেই প্রশ্ন উঠেছে তৃণমূলের অন্দরেই। তা নিয়ে একান্তে তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের কয়েকজনকে ক্ষোভ প্রকশও করতে দেখা গিয়েছে। শেষ পর্যন্ত কর্মীদের উদ্দীপ্ত করতে দলের প্রবীণ নেতা গৌতমবাবুকে বলতে শোনা যায়, ‘‘বিরোধী জোটের মিছিল হলেও তা মানুষের গ্রহণযোগ্য হবে বলে মনে হয় না। তা ছাড়া ১৯৯৪ সালে পুর নির্বাচনের আগের রাতে কংগ্রেস প্রার্থী উদয় চক্রবর্তীকে হত্যার রক্তে যাদের হাত লাল হয়ে রয়েছে দিনের শেষে মানুষ তাদের গ্রহণ করবে না। আমরা মিছিল কেন করব? মিছিল করে যানজট বাড়াতে চাই না। তৃণমূল মিছিল করলে শহর অবরুদ্ধ হয়ে পড়বে।’’ তবে দলের কয়েকজন প্রবীণ নেতা জানান, শিলিগুড়িতে গত বিধানসভা ভোটেও ঘটা করে মনোনয়ন পত্র পেশ করেছিলেন তৃণমূল প্রার্থী রুদ্রনাথ ভট্টাচার্য।

অশোকবাবু অবশ্য মনোনয়নের প্রস্তুতি নিয়েছিলেন গুছিয়ে। মুড়ি-চা খেয়ে সোজা বাড়ি থেকে পার্টি অফিস যান অশোকবাবু। মিছিলের জন্য ততক্ষণে হিলকার্ট রোডে মহানন্দা সেতু লাগোয়ো মোড়ে ভিড় জমতে শুরু করেছে। পার্টি অফিসে ঢুকেও কিছু পরেই হিলকার্ট রোডে নেমে এলেন অশোকবাবু। ফোন করে খোঁজ নিলেন কংগ্রেস নেতা-কর্মীরা কতদূরে। তাঁরা রওনা দিয়েছেন শুনেই অশোকবাবুও পৌঁছলেন মিছিল শুরুর জায়গায়। নিজেই হাত নেড়ে মিছিল সাজালেন। কর্মী সমর্থদের মাঝে ঢুকে স্লোগান দিলেন। এক কর্মীকে বললেন, ‘‘নেতারা শুধু পার্টি অফিসে বসে থাকবে, পরে মিছিলের সামনে দাঁড়াবে এমন হয় না।’’ ইতিমধ্যে মিছিলে পৌঁছে যান সিপিএমের জেলা সম্পাদক জীবেশ সরকার, আরএসপি নেতা তথা ডেপুটি মেয়র রামভজন মাহাতো, সিপিআই জেলা সম্পাদক উজ্জ্বল চৌধুরী, কংগ্রেসের কাউন্সিলর পিন্টু ঘোষ-সহ অনেকেই। ততক্ষণে সিপিএমের লাল ঝান্ডা এবং কংগ্রেসের তেরঙ্গা ঝান্ডা মিলেমিশে একাকার। কর্মীরা নিজেদের ছন্দমতো মিশে গিয়েছেন ভিড়ে। শুরু হয়ে গিয়েছে স্লোগান। মহকুমাশাসকের দফতরে যাওয়ার পথে ফাঁসিদেওয়ার বিদায়ী কংগ্রেসী বিধায়ক সুনীল তিরকি, প্রাক্তন মেয়র গঙ্গোত্রী দত্ত, কুন্তল গোস্বামী, কংগ্রেস কাউন্সিলর সীমা সাহার মতো নেতানেত্রীরাও যোগ দেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন