ভরসা সেই সবুজেই

জোটের মান রাখল বাঁকুড়া

পাঁচ বছর আগে বিধানসভা দিয়ে যে জয়রথ শুরু হয়েছিল, পঞ্চায়েত থেকে লোকসভা হয়ে পুর-নির্বাচনে তা অব্যাহত ছিল রাঢ়বঙ্গের এই দুই জেলায়। দলের তরফে পুরুলিয়া ও বাঁকুড়ার পর্যবেক্ষক হয়ে দুই জেলার মোট ২৩টি বিধানসভা কেন্দ্রেই জয়ের লক্ষ্যে ঝাঁপিয়েছিলেন যুব তৃণমূলের সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। এ বার বিধানসভা ভোটে রাজ্য জুড়ে ঝড় বইয়ে দিয়েও বাঁকুড়ায় এসে সেই লক্ষ্য কিছুটা হোঁচট খেয়ে গেল!

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২০ মে ২০১৬ ০৩:০৪
Share:

পাঁচ বছর আগে বিধানসভা দিয়ে যে জয়রথ শুরু হয়েছিল, পঞ্চায়েত থেকে লোকসভা হয়ে পুর-নির্বাচনে তা অব্যাহত ছিল রাঢ়বঙ্গের এই দুই জেলায়। দলের তরফে পুরুলিয়া ও বাঁকুড়ার পর্যবেক্ষক হয়ে দুই জেলার মোট ২৩টি বিধানসভা কেন্দ্রেই জয়ের লক্ষ্যে ঝাঁপিয়েছিলেন যুব তৃণমূলের সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। এ বার বিধানসভা ভোটে রাজ্য জুড়ে ঝড় বইয়ে দিয়েও বাঁকুড়ায় এসে সেই লক্ষ্য কিছুটা হোঁচট খেয়ে গেল! আবার এটাও ঠিক, অভিষেকের মুখে হাসি ফুটিয়ে একটি (বাঘমুণ্ডি) বাদে দুই জেলার জঙ্গলমহলের বাকি সব আসনেই জয়ী হয়েছে তৃণমূল।

Advertisement

বাঁকুড়া জেলার ১২টি বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে পাঁচটি তৃণমূলের হাতছাড়া হয়েছে বাম-কংগ্রেস জোটের কাছে। এমনকী, শাসকদলের এই ভরা বাজারে অঘটনও ঘটেছে বেশ কিছু। যেমন, হারের মুখ দেখতে হল বড়জোড়ার তারকা প্রার্থী সোহম চক্রবর্তী, বিষ্ণুপুরের বিদায়ী মন্ত্রী শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় কিংবা সোনামুখীর দাপুটে ও বিতর্কিত তৃণমূল নেত্রী ও বিদায়ী বিধায়ক দীপালি সাহাকে। একই ভাবে তালড্যাংরায় তৃণমূল প্রার্থীর কাছে পর্যদুস্ত হতে হয়েছে সিপিএমের প্রভাবশালী নেতা অমিয় পাত্রকে। এ ছাড়াও জোটের ঝুলিতে গিয়েছে ছাতনা বিধানসভা কেন্দ্রটি। তবে, বড়জোড়া ও বিষ্ণুপুরে জোটের জেতার ব্যবধান যৎসামান্য। অর্থাৎ, ওই দুই কেন্দ্রে যে কেউই জিততে পারত। আবার দক্ষিণ বাঁকুড়ার জঙ্গলমহলের সব আসনই জিতেছেন শাসকদল। গত বিধানসভা ভোটেও রাইপুর, রানিবাঁধ ও তালড্যাংরা সিপিএমের দখলে ছিল। এ বার জোট গড়েও তিন আসনই হাতছাড়া হয়েছে তাদের।

সিপিএমের জেলা সম্পাদক অজিত পতি বলেছেন, ‘‘জঙ্গলমহলে যেমন সাংগঠনিক শক্তিক্ষয় হয়েছে, তেমনই জেলার উত্তরে তৃণমূলের প্রতি ক্ষোভ এবং জোটের সংগঠন ইভিএমে জয় এনেছে। জেলায় সামগ্রিক ফলাফলে জোটের অবদান কম নয়।’’ জেলা পরিষদের সভাধিপতি তথা তৃণমূল নেতা অরূপ চক্রবর্তী মানছেন, পাঁচটি কেন্দ্র তাঁদের দলের হার ‘অপ্রত্যাশিত’। কারণ তাঁরা পর্যালোচনা করবেন। ‘‘তবে জঙ্গলমহলের তিনটি আসন প্রাপ্তিও কম নয়।’’—বলছেন তিনি।

Advertisement

বাঁকুড়ার তুলনায় পড়শি জেলা পুরুলিয়ায় জোটের ফল অনেকটাই খারাপ। এই জেলায় ১১টি আসনের মধ্যে ৯টি জিতেছে তৃণমূল। যেখানে গত লোকসভা ভোটের পরিসংখ্যানেও বাম-কংগ্রেস জোটের মিলিত ভোট ধরলে বাঘমুণ্ডি, পাড়া, জয়পুর ও বলরামপুর—এই চারটি কেন্দ্রে চেয়ে পিছিয়ে ছিল তৃণমূল! এ বার জোট বাঘমুণ্ডি আসন ধরে রাখতে পারলেও বাকি তিনটিতেই হার স্বীকার করতে হয়েছে জোটকে। বরং নতুন করে পেয়েছে পুরুলিয়া কেন্দ্রটি। বাঘমুণ্ডি থেকে এই নিয়ে পরপর চার বার জিতলেন জেলা কংগ্রেস সভাপতি নেপাল মাহাতো। যদিও লোকসভা ভোট ধরল জয়ের যে ব্যবধান ছিল প্রায় ৫১ হাজার, এ বার তা এক ধাক্কায় কমে হয়েছে ৮ হাজারের কিছু বেশি!

এ দিনের ফল নিয়ে দৃশ্যতই উচ্ছ্বসিত পুরুলিয়া জেলা তৃণমূল সভাপতি শান্তিরাম মাহাতো। তাঁর বক্তব্য, ‘‘ভাল ফলাফল আমাদের প্রত্যাশিতই ছিল। আমরা বরাবর মানুষের হয়েই কথা বলি। তাই তাঁরা এ বারও আমাদের উপর ভরসা রেখেছেন। জেলাবাসীকে ধন্যবাদ।’’ অন্য দিকে, নেপালবাবুর কথায়, ‘‘কর্মীরা চেষ্টা করেছেন। কেউ ময়দান ছেড়ে পালাননি, এটাই বড় কথা। হার-জিত তো থাকবেই। তবে জোটের কর্মীদের এই লড়াই পঞ্চায়েত নির্বাচনে ঠিক সাফল্যের পথ দেখাবে।’’

এত কিছুর মধ্যেও এ বার ভোটের ফল থেকে একটা বিষয় দিনের আলোর মতো স্পষ্ট। পাঁচ বছর আগে সেই যে রক্তক্ষরণ শুরু হয়েছিল বামেদের, তা থামার কোনও লক্ষণ নেই এ বারও। বরং জোট হওয়ার বেশি ফায়দা তুলেছে কংগ্রেসই। পুরুলিয়ায় যে দু’টি আসন জোট জিতেছে, সেই দু’টিই কংগ্রেসের। বাঁকুড়াতেও জোটের পাঁচ জয়ী প্রার্থীর মধ্যে দু’জন রাহুল-সনিয়া গাঁধীর দলের। অর্থাৎ, সাতটি জেতা আসনের মধ্যে চারটিই গিয়েছে কংগ্রেসের ঝুলিতে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন