শোভন-আশ্বাসে নয়, প্রীতিদের ‘স্বস্তি’ বিমানের স্নেহচ্ছায়ায়

বাড়ির দরজায় মঙ্গলবার বিকেলে বিমান বসুকে দেখে ‘স্বস্তি’ প্রকাশ করলেন হরিদেবপুরের ‘নিগৃহীতা’ বালিকা প্রীতির মা, ঠাকুরমা-রা। বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমানবাবুর কাছে তাঁদের কাতর অনুরোধ, ‘‘আমাদের বাঁচান। গ্রামে শান্তি বজায় রাখার ব্যবস্থা করুন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৪ মে ২০১৬ ০১:৫৯
Share:

ফের আদর সেই মেয়েকে, এ বার সিপিএমের বিমান বসু। ছবি: রণজিৎ নন্দী

বাড়ির দরজায় মঙ্গলবার বিকেলে বিমান বসুকে দেখে ‘স্বস্তি’ প্রকাশ করলেন হরিদেবপুরের ‘নিগৃহীতা’ বালিকা প্রীতির মা, ঠাকুরমা-রা। বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমানবাবুর কাছে তাঁদের কাতর অনুরোধ, ‘‘আমাদের বাঁচান। গ্রামে শান্তি বজায় রাখার ব্যবস্থা করুন। খুব আতঙ্কে রয়েছি।’’ সেই অনুরোধে সায় দিয়ে বিমানবাবু বলেন, ‘‘কোনও চিন্তা নেই। আমরা তোমাদের পাশে রয়েছি।’’

Advertisement

মাত্র ২৪ ঘণ্টা আগে সোমবার বিকেলে একই আশ্বাস নিয়ে ওই বাড়ির চৌকাঠে এসে দাঁড়িয়েছিলেন কলকাতার মেয়র এবং বেহালা পূর্ব কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী শোভন চট্টোপাধ্যায়। তাঁকে বাড়ির ভিতরে ঢুকতে না দিলেও গ্রামে শান্তি ফিরিয়ে দেওয়ার আর্জি জানিয়েছিলেন প্রীতির মা বাসন্তী বর। মেয়রও তাঁকে বলেছিলেন, ‘‘তুমি আমার ছোট বোনের মতো। কোনও চিন্তা কোরো না।’’

তবে কি মেয়রের আশ্বাসে ভরসা পাননি নিগৃহীতা মেয়েটির পরিবারের সদস্যেরা? বাসন্তীদেবীর কথায়, ‘‘উনি (শোভনবাবু) বলেছিলেন ঠিকই। কিন্তু কী করে ওঁকে ভরসা করব বলুন তো? বাড়িতে দেখে গেলেন, মেয়েকে কী ভাবে মারা হয়েছে। আর প্রতিবাদ সভার মঞ্চে গিয়ে বললেন, এ সব মিথ্যা, কুৎসা। সাজানো ব্যাপার।’’

Advertisement

ভোটের দিন বেহালা পূর্ব কেন্দ্রের হরিদেবপুরের ফকিরহাট এবং দরিরচক গ্রামে সিপিএমের একাধিক কর্মী-সমর্থকের মারধরের অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের একদল কর্মী-সমর্থকের বিরুদ্ধে। দরিরচক গ্রামে বাম সমর্থক অমূল্য বরের উপর আক্রোশ মেটাতে তাঁর আট বছরের নাতনি প্রীতির উপরে হামলার অভিযোগ ওঠে। ওই ঘটনার সময়ে তার মাথা ফেটে যায়। তা নিয়ে তোলপাড় হয় রাজ্য-রাজনীতি। প্রীতির মা বাসন্তীদেবী জানান, কেন তার পরিবারের লোকেরা ভোট দিতে গিয়েছিলেন, এটাই ছিল তাঁদের অপরাধ। তাই ভোট শেষ হতেই রাতে বাড়িতে হামলা চালানো হয়। একই হাল ওই গ্রামের আর এক বাম সমর্থক গুণধর মণ্ডলেরও। তিনি আবার ওই গ্রামের ভোট কেন্দ্র ঠাকুরনগর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে জোট প্রার্থী অম্বিকেশ মহাপাত্রের এজেন্ট ছিলেন। হামলার অভিযোগ উঠেছে জোটের আর এক এজেন্ট ফকিরহাট গ্রামের অসীম পাত্রের ছেলে ও মেয়ের উপরেও।

এ দিন সেই সমস্ত ঘটনার প্রতিবাদে জোকা লাগোয়া কালীতলা থেকে বামেদের একটি মিছিল ওই দু’টি গ্রামে ঘোরে। প্রায় ৬ কিলোমিটার পথ পায়ে হেঁটেই ঘোরেন বিমানবাবু। এ ছাড়াও মিছিলে অংশ নেন সুজন চক্রবর্তী, মানব মুখোপাধ্যায়, অম্বিকেশ মহাপাত্র প্রমুখ। ফকিরহাটে অসীম মহাপাত্রের মেয়ের মাথায় হাত দিয়ে তাঁকে আরও সাহসী হওয়ার পরামর্শ দেন বিমানবাবু। তাঁর মাকে বলেন, ‘‘যে ভাবে প্রতিবাদ করেছেন, অনেকের মনোবল বাড়াবে।’’

সন্ধ্যায় বিমানবাবুরা পৌঁছন দরিরচকে, প্রীতির বাড়িতে। মেয়েকে নিয়ে বাড়ির চৌকাঠেই দাঁড়িয়েছিলেন মা বাসন্তীদেবী। প্রীতিকে আদর করে কোলে তুলে নেন প্রবীণ নেতা। ঝোলা থেকে ‘খুকুমণির ছড়া’ বইটি বার করে তার হাতে দিয়ে বলেন, ‘‘ভাল করে পড়াশোনা করবি। কোনও ভয় নেই।’’ ছোট্ট মেয়েকে চুমু খেয়ে আদরও করেন তিনি। সোমবার শোভন চট্টোপাধ্যায়ও প্রীতির গালে চুমু খেয়েছিলেন।

এ দিন নিগৃহীত প্রতিটি পরিবারের সঙ্গে দেখা করে সকলকেই অভয় দেন বিমানবাবু। পরে বলেন, ‘‘তৃণমূল তো গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না। মানুষকে চমকে, ধমকে, মারধর করে ভোটদানের সাংবিধানিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করছে। এ বার প্রতিবাদ শুরু হয়েছে। আরও হবে।’’ ওই কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী তথা কলকাতার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ের টিপ্পনি, ‘‘৫ বছর আগে ওই পথে হাঁটতে গেলে তো হোঁচট খেতেন বিমানবাবু। আমাদের আমলে রাস্তার হাল ফিরেছে বলেই এতটা পথ হাঁটতে পারলেন। উন্নতি নিশ্চয়ই দেখেছেন। একই সঙ্গে দলের সংগঠন যে তলানিতে ঠেকেছে, তা-ও নিশ্চয়ই বুঝেছেন।’’

বিমানবাবু আসার আগে এ দিন দুপুরে সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি অশোক গঙ্গোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে ‘সেভ ডেমোক্রেসি’র একদল প্রতিনিধি দরিরচক গ্রামে ঘুরে যান। তাঁদের হামলার বিবরণ শোনান গ্রামের বাসিন্দা গুণধর মণ্ডল। তাঁর অভিযোগ, তৃণমূলের এক দল কর্মী-সমর্থকের হামলা থেকে বাঁচতে বাড়িতে খাটের নীচে লুকিয়ে ছিলেন তিনি। সেখান থেকে টেনে বার করে স্ত্রী ও মেয়ের সামনেই তাঁকে লাঠিপেটা করা হয়।

পাশের বাড়িতে ছোট্ট মেয়ে প্রীতির উপরে হামলার কথা শুনে অশোকবাবু জানিয়ে দেন দু’টি ঘটনার কথাই জাতীয় মানবাধিকার কমিশনে জানাবেন। এক শিশুকন্যার উপরে এই আক্রমণের তদন্ত চেয়ে প্রোটেকশন ফর চিলড্রেনস রাইটস্ কমিশনে অভিযোগ জানানো হবে বলে জানান ভারতী মুৎসুদ্দি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন