বিজেপিতে প্রার্থী-বিক্ষোভ চলছেই, রাগ সেই রাহুলেই

গত লোকসভা এবং পুরসভা নির্বাচনের সময়েও প্রার্থী তালিকা নিয়ে বিক্ষোভ হয়েছে বিজেপির অন্দরে। তার নিশানায় ছিলেন দলের তৎকালীন রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ। এ বারের বিধানসভা ভোটেও ব্যতিক্রম হল না।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ মার্চ ২০১৬ ০৩:১৭
Share:

গত লোকসভা এবং পুরসভা নির্বাচনের সময়েও প্রার্থী তালিকা নিয়ে বিক্ষোভ হয়েছে বিজেপির অন্দরে। তার নিশানায় ছিলেন দলের তৎকালীন রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ। এ বারের বিধানসভা ভোটেও ব্যতিক্রম হল না। দ্বিতীয় দফার প্রার্থী তালিকা বৃহস্পতিবার প্রকাশিত হওয়ার পর থেকেই বিজেপির রাজ্য দফতরে বিক্ষোভ অব্যাহত। এবং তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে রাজ্য সভাপতি পদে আর না থাকা সত্ত্বেও এখনও দলের একাংশের অভিযোগের তির রাহুলবাবুরই দিকে! তবে রাহুলবাবুর শিবিরের পাল্টা অভিযোগ, দলে এখন যাঁরা দায়িত্বে রয়েছেন, তাঁরাই কর্মীদের ক্ষোভ থেকে বাঁচতে প্রাক্তন রাজ্য সভাপতির ঘাড়ে দায় চাপাচ্ছেন।

Advertisement

হাওড়া উত্তর, কামারহাটি, পূর্ব মেদিনীপুরের ময়না, নন্দকুমার, পাঁশকুড়া পূর্ব, পাঁশকুড়া পশ্চিম, ভগবানপুর, তমলুক, মহিষাদল এবং ব্যারাকপুরের প্রার্থী নিয়ে বিজেপি কর্মীদের মধ্যে অসন্তোষ রয়েছে। ওই ১০ কেন্দ্রের মধ্যে হাওড়া উত্তর ছাড়া বাকিগুলি থেকে কর্মীরা দলের রাজ্য দফতরে এসে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। কামারহাটি বিধানসভায় কৃশানু মিত্রের বদলে মহম্মদ আলমকে প্রার্থী করার দাবিতে আজ তৃতীয় দিনেও বিোক্ষভ হয়েছে রাজ্য দফতরে। আলমের অনুগামীদের অভিযোগ, কৃশানু এলাকায় পরিচিত মুখ নন। তা সত্ত্বেও রাহুলবাবুর প্রভাবে তিনি ওই কেন্দ্রে টিকিট পেয়েছেন। রবিবারের মধ্যে আলমকে প্রার্থী করা না হলে দল ছাড়বেন বলেও হুমকি দিয়েছেন তাঁরা।

পূর্ব মেদিনীপুরের সাতটি বিধানসভা কেন্দ্র এবং ব্যারাকপুরের প্রার্থী অপছন্দ হওয়ায় ওই দুই জেলার কর্মীদের একাংশও এ দিন দলের রাজ্য দফতরে এসে বিক্ষোভ দেখান। ব্যারাকপুরে বিজেপি-র প্রার্থী দলের যুব মোর্চার প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি অমিতাভ রায়। তিনি বরাবরই রাহুলবাবুর ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। রাহুলবাবুই ‘ব্যক্তিগত স্বার্থে’ তাঁকে টিকিট পাইয়ে দিয়েছেন বলে এ দিন বিক্ষুব্ধরা অভিযোগ করেন।

Advertisement

বস্তুত, লোকসভা এবং পুরসভা ভোটেও দলের একাংশের অভিযোগ ছিল, রাহুলবাবু বিভিন্ন আসনে দুর্বল প্রার্থী দিয়ে তৃণমূলের সুবিধা করে দিয়েছেন। এ বার বিধানসভা ভোটেও অভিযোগ, কিছু আসনে দুর্বল প্রার্থী দেওয়ার নেপথ্যে তিনিই।

উত্তরবঙ্গের ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ি কেন্দ্রের প্রার্থী এখনও ঘোষণা করেনি বিজেপি। দলীয় সূত্রের খবর, সেখানে রাহুলবাবু তাঁর ঘনিষ্ঠ রথীন বসুকে প্রার্থী করতে চান। আর ওই কেন্দ্রে সঙ্ঘের পছন্দের মুখ রবীন্দ্রনারায়ণ চৌধুরী। এই নিয়ে দুই পক্ষের টানাপড়েনের জন্যই এখনও সেখানে প্রার্থীর নাম ঘোষণা হয়নি।

এই সব অভিযোগ নিয়ে প্রশ্নের জবাবে রাহুলবাবু অবশ্য বলেন, ‘‘১৫ জনের নির্বাচন কমিটি যথেষ্ট ভাবনাচিন্তা করে প্রার্থী তালিকা ঠিক করেছে। কারও একার সিদ্ধান্তে তালিকা হয়নি।’’ তবে রাহুলবাবুর ঘনিষ্ঠদের অভিযোগ, আসলে দলের ক্ষমতাসীন শিবিরই কর্মীদের ক্ষোভ থেকে বাঁচতে প্রাক্তন রাজ্য সভাপতির নামে দোষ দিচ্ছেন। তাঁদের আরও বক্তব্য, রাহুলবাবু রাজ্য দফতরে থাকলে অন্তত বিক্ষুব্ধদের মুখোমুখি হয়ে ক্ষোভ সামলানোর চেষ্টা করছেন। কিন্তু দলের ক্ষমতাসীন শিবির বিক্ষুব্ধদের এড়িয়ে যাচ্ছেন।

হাওড়া উত্তরে বিজেপি-র প্রার্থী রূপা গঙ্গোপাধ্যায়। তাঁর জায়গায় উমেশ রাইকে প্রার্থী করতে চেয়ে জেলায় বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন দলীয় কর্মীদের একাংশ। বিজেপি-র এক রাজ্য নেতার বক্তব্য, ‘‘রূপার জন্য সাতগাছিয়া-সহ অন্য অনেক ভাল আসন ছিল। কিন্তু ইচ্ছা করে তাঁকে এমন একটা কেন্দ্র দেওয়া হল, যেখানে দলের পুরনো এক নেতা প্রার্থী হতে চান। রূপা বলেছেন, দলে তিনি কাঁকড়ার কামড় খাচ্ছেন। ঠিকই বলেছেন!’’

বিজেপি সূত্রের আরও খবর, যাদবপুরের প্রার্থী স্বরূপপ্রসাদ ঘোষের পছন্দের কেন্দ্র ছিল রাসবিহারী। সেখানে তাঁকে প্রার্থী করা না হলে তিনি ভোটেই লড়বেন না বলে নেতৃত্বকে জানিয়ে দিয়েছেন। স্বরূপবাবুকে এ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি অবশ্য বলেন, ‘‘এ সব কিছুই আমি বলব না। ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ কী করেন, দেখি!’’ প্রসঙ্গত, স্বরূপবাবু লোকসভা ভোটে যাদবপুর কেন্দ্রেই লড়েছিলেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন