বাঘা যতীন এলাকায় ভোট-পরবর্তী সন্ত্রাসের অভিযোগ সংক্রান্ত মামলার কেস ডায়েরি তলব করল কলকাতা হাইকোর্ট। হাইকোর্টের বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত মঙ্গলবার রাজ্যের জিপি-কে (গভর্নমেন্ট প্লিডার) নির্দেশ দিয়েছেন, পাটুলি থানার অন্তর্গত ওই এলাকায় সন্ত্রাস, মারধর, মহিলাদের গায়ে হাত তোলা সংক্রান্ত যে দু’টি এফআইআর দায়ের হয়েছে, তার ভিত্তিতে তৈরি কেস ডায়েরি আগামী শুক্রবার তাঁর আদালতে পেশ করতে।
বিধানসভা ভোট মিটতেই পাটুলি থানার বাঘা যতীনে ১ ও ২ মে একদল দুষ্কৃতী পরিকল্পিত হামলা চালিয়ে এলাকায় সন্ত্রাসের বাতাবরণ তৈরি করেছে বলে বাসিন্দাদের অনেকের অভিযোগ। তাঁদের বক্তব্য, পাটুলি থানার পুলিশের সামনেই হামলা হয়। সন্ত্রাস ঠেকাতে নির্বাচন কমিশনের ব্যর্থতা ও পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তুলে বিচারপতি দত্তের আদালতে মামলা করেছেন বাঘা যতীনেরই বাসিন্দা, ৭১ বছরের মায়ারানি ঘোষ ও তাঁর ছেলে, পেশায় শিক্ষক বুদ্ধদেব ঘোষ। মঙ্গলবার সেই মামলার শুনানিতেই বিচারপতি দত্ত রাজ্যকে ওই নির্দেশ দেন।
শুনানির শুরুতে মামলার আবেদনকারীদের আইনজীবী জয়ন্তনারায়ণ চট্টোপাধ্যায় ও শীর্ষেন্দু সিংহ রায় আদালতে জানান, সন্ত্রাসের শিকার হয়েছেন এক স্বাধীনতা সংগ্রামীর অশীতিপর বিধবা স্ত্রী মায়ারানিদেবী। নির্বাচন কমিশন অবাধ ও শান্তিপূর্ণ ভোটের ব্যবস্থা করেছিল বলেই এলাকার লোকজন নির্ভয়ে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে যান। আর তাতেই বিপত্তি। আইনজীবীরা জানান, কলকাতা পুরসভার ৯৯, ১০০ ও ১১০ নম্বর ওয়ার্ড থেকে খান দশেক মোটরবাইকে চেপে একদল দুষ্কৃতী বাঘা যতীনে আসে। তারা বিশেষ একটি রাজনৈতিক দলের আশ্রিত বলে আদালতে অভিযোগ করেন আইনজীবীরা। আরও অভিযোগ, নির্দিষ্ট ভাবে বিরুদ্ধ রাজনৈতিক দলের কর্মী, সমর্থক ও নেতাদের লোহার রড, হকি স্টিক, বাঁশ দিয়ে বেধড়ক পেটানো হয়। মহিলাদের গায়েও হাত তোলে তারা। পরপর বাড়ি ভাঙচুর হয়। আইনজীবীরা অভিযোগ করেন, পাটুলি থানায় একাধিক বার ফোনে হামলার কথা জানানো হয়। প্রথমে পুলিশ আসেনি। পরে পুলিশ এলেও ততক্ষণে দুষ্কৃতীরা সাতটি মোটরবাইক ফেলে এলাকা থেকে পালিয়েছে। ২মে রাতেও ফের এক দফা হামলা হয়।
জয়ন্তনারায়ণবাবু আদালতে জানান, সিপিএম নেতা তথা মামলার অন্যতম আবেদনকারী বুদ্ধদেববাবু নির্দিষ্ট ভাবে বেশ কয়েক জনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ জানান। কিন্তু অভিযুক্তেরা জামিন পেয়ে যায়। পুলিশ মামলা দায়ের করে বেআইনি অস্ত্র আইনের ধারা দিলেও অস্ত্র বাজেয়াপ্ত করার চেষ্টা করেনি।
রাজ্যের বক্তব্য পেশ করতে গিয়ে জিপি অভ্রতোষ মজুমদার দাবি করেন, হামলা, গুরুতর আঘাত করা, ভাঙচুর, বেআইনি ভাবে জড়ো হওয়ার মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। তদন্ত শেষ হয়নি। জিপি-র আরও দাবি, ঘটনার সময়ে পাটুলি থানায় যে ডিউটি অফিসার ছিলেন, তাঁর সঙ্গে অভিযোগকারীর মোবাইলে যে সব বার্তা (মেসেজ) বিনিময় হয়েছে, তা-ও নথিভুক্ত আছে। তা জেনে বিচারপতি দত্ত জিপি-কে নির্দেশ দেন, ওই বার্তার প্রতিলিপিও আদালতে পেশ করতে হবে।
তার পরে বিচারপতি দত্ত জিপি-র উদ্দেশে বলেন, ‘‘পুলিশের সামনে মহিলাদের গায়ে হাত তোলার অভিযোগ রয়েছে। সেই অনুযায়ী ধারা প্রয়োগ হয়নি কেন?’’ ওই অভিযোগ অবশ্য জিপি অস্বীকার করেন। তিনি আদালতে জেনারেল ডায়েরি দাখিল করে বলেন, ‘‘এতে সবই রয়েছে।’’ বিচারপতি দত্ত জিপি-কে নির্দেশ দেন, ‘‘মামলার কেস ডায়েরিও পেশ করতে হবে।’’ একই সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের আইনজীবী জয়দীপ করকে বিচারপতি দত্ত নির্দেশ দেন, ওই এলাকায় ভোট-পরবর্তী গোলমাল, সংঘর্ষ নিয়ে কমিশনের সঙ্গে পুলিশের যে কথোপকথন হয়েছিল, সেই নথিও পেশ করতে হবে আগামী শুক্রবার।