চাচার জন্য যৌথ প্রচার। হাজির অভিনেতা রাজ বব্বরও। মঙ্গলবার খড়্গপুরে। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল।
রেলশহরের রাজনীতিতে তিনিই তারকা। ৯২ বছরের সেই ‘তরুণ’ জ্ঞানসিংহ সোহনপালের প্রথম প্রচারের দিনে হাজির হলেন বলিউডের আর এক তারকা। মঙ্গলবার খড়্গপুরের ‘চাচা’-র রোড শোতে দেখা গেল অভিনেতা রাজ বব্বরকে। আর সেই প্রচারেও সব ছাপিয়ে ধরা দিল জোটের ছবি। প্রবীণ কংগ্রেস প্রার্থীর প্রচারে মিলেমিশে গেল তেরঙ্গা আর লাল-পতাকা। মঙ্গলবার বিকেল চারটে। খড়্গপুরের বড়বাতি মোড়ে বাম ও কংগ্রেস কর্মীদের জমায়েত। লাল পতাকার সংখ্যা তুলনায় বেশি। প্রথমে গাড়িতে এলেন চাচা। হেলিকপ্টারে আয়মায় নেমে গাড়িতে বড়বাতি মোড়ে পৌঁছতে একটু দেরি হল এক সময়ের দাপুটে নায়ক রাজ বব্বরের। বোঝা গেল বুড়ো বয়সেও তাঁকে ঘিরে উন্মাদনা কমেনি। স্মার্টফোনে ছবি তোলার হিড়িক পড়ে গেল। সেই দলেই ছিলেন ওল্ড সেটলমেন্টের যুবতী পল্লবী মোদলিহার। বললেন, “আমি কংগ্রেস সমর্থক। কিন্তু এখানে এসেছি একমাত্র রাজ বব্বরকে কাছ থেকে দেখতে। রাজ বব্বর আসায় চাচার প্রচারের ভালই হল।’’
হুডখোলা গাড়িতে রাজ বব্বরকে সঙ্গে নিয়ে উঠলেন চাচা। শুরুতেই চাচার পা ছুঁয়ে প্রণাম করলেন নায়ক। শুরু হল প্রচার-যাত্রা। গাড়িতে ছিলেন কংগ্রেসের জেলা সভাপতি বিকাশ ভুঁইয়া, মহিলা নেত্রী হেমা চৌবে। রোড-শোর সামনে হাঁটলেন পুরসভার বিরোধী দলনেতা রবিশঙ্কর পাণ্ডে, কংগ্রেসের শহর সভাপতি অমল দাস। সঙ্গে ছিলেন সিপিএমের জোনাল সম্পাদক অনিতবরণ মণ্ডল, সদস্য অনিল দাস। কংগ্রেস ও বামেদের বেশ কয়েকজন কাউন্সিলরও রোড-শোতে সামিল হন।
এ দিন যে পথেই রোড-শো এগিয়েছে দু’ধারে বাড়ি থেকে বেরিয়ে এসেছেন মহিলারা। অনেকেই রাজ বব্বরের সঙ্গে একবার করমর্দন করার চেষ্টায় ছুটছেন হুডখোলা গাড়ির পিছনে। রোড-শো দেখতে বাড়ি থেকে ছুটে বেরিয়ে আসা মালঞ্চর বাসিন্দা পরবজ্যোতি কৌর বললেন, “চাচা এই শহরের তারকা। তবে রাজ বব্বরকে দেখার উৎসাহ নিয়েই বাড়ি থেকে বেরিয়ে এলাম। চাচার জয় নিশ্চিত।’’ এ দিন রোড-শো ঘিরে উৎসাহ দেখা দিয়েছে শহরে। খরিদা, অতুলমণি স্কুল, মালঞ্চ বিস্কুট ফ্যাক্টরির কাছে ভিড় উপচে পড়ে। একটিবার চিত্রতারকা রাজ বব্বরকে দেখতেই যে মানুষ ভিড় জমিয়েছিল তা বলার অপেক্ষা রাখে না। লালবাংলো এলাকার বাসিন্দা সোমা মণ্ডলের কথায়, ‘‘চাচাকে তো সবসময়ই দেখি। এখন রাজ বব্বরকে দেখতে দাঁড়িয়ে আছি।
দু’দিন আগেই রেলশহরে প্রচারে এসেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বলেছিলেন, “কেরলে বামেদের সঙ্গে কুস্তি আর এখানে দোস্তি করছে কংগ্রেস।’’ সেই সূত্র ধরে কংগ্রেস নেতা রাজ বব্বর এ দিন বলেন, “মোদীকে জব্দ করতে আমরা সূর্যের (নক্ষত্র) সঙ্গেও হাত মেলাতে প্রস্তুত আছি।’’ আর তৃণমূলের সমালোচনায় তাঁর বক্তব্য, “মা-মাটি-মানুষের সরকারে এই রাজ্যে মা ধর্ষিত, মাটিতে শিল্প হয়নি, মানুষ কাজ পায়নি।”
টানা ন’বারের বিধায়ক জ্ঞানসিংহ সোহন পাল এ দিনই প্রথম প্রচার করলেন। প্রথম প্রচারেই তারকার উপস্থিতি ঘিরে অবশ্য বিঁধছে কংগ্রেস বিরোধীরা। বিজেপির জেলা সহ-সভাপতি প্রেমচাঁদ ঝাঁ বলেন, ‘‘এখন চাচার বিশ্রাম নেওয়ার সময়। চাচার পাশে ওঁর দলের অনেকেও নেই। মানুষও চাচাকে আর চাইছে না। তাই ভয় পেয়েই চিত্রতারকা এনে প্রচার করতে হচ্ছে।’’ তৃণমূল প্রার্থী রমাপ্রসাদ তিওয়ারিরও কটাক্ষ, ‘‘চাচা মানুষের আস্থা হারিয়েছেন। তাই সিপিএমের হাত ধরতে হচ্ছে, প্রচারে আনতে হচ্ছে চিত্রাভিনেতাকে।’’
বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ লড়ছেন এই কেন্দ্রে। তাঁর সমর্থনে দু’দিন আগেই প্রচার করে গিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। লড়াইয়ের ময়দানে আছে তৃণমূলও। নিয়েলসেনের সমীক্ষাও বলছে এই আসনে লড়াই হবে ত্রিমুখী। যদিও চাচা নিশ্চিন্ত। বলছেন, “প্রতিদ্বন্দ্বী তো কাউকে দেখছি না। আর তারকাদের আসা প্রচারের অঙ্গ।’’