পৌঁছেই মেজাজ হারালেন মমতা

সকাল থেকেই টিভির সংবাদ চ্যানেল এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় নারদ ফুটেজ নিয়ে হইহই শুরু হয়ে গিয়েছিল। তিনটে বাজতে পাঁচ মিনিট আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাগডোগরা বিমানবন্দর থেকে বের হয়েই তা নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়লেন। তারপরে দৃশ্যতই মেজাজ হারালেন। হাত নেড়ে বলেন, ‘‘আমি এ বিষয়ে এখন কিছু বলব না।’’

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ১৫ মার্চ ২০১৬ ১৩:০১
Share:

ভিড় সামলাতে ব্যস্ত পুলিশ। —নিজস্ব চিত্র।

সকাল থেকেই টিভির সংবাদ চ্যানেল এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় নারদ ফুটেজ নিয়ে হইহই শুরু হয়ে গিয়েছিল। তিনটে বাজতে পাঁচ মিনিট আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাগডোগরা বিমানবন্দর থেকে বের হয়েই তা নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়লেন। তারপরে দৃশ্যতই মেজাজ হারালেন। হাত নেড়ে বলেন, ‘‘আমি এ বিষয়ে এখন কিছু বলব না।’’ তারপরেই মুখ ঘুরিয়ে গাড়িতে উঠে পড়েন।

Advertisement

শিলিগুড়িতে তখন ফুটছে। মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রথম মিছিল শিলিগুড়িতে। রাজনৈতিক উত্তাপ যেমন ছিল, তেমনই যাবতীয় বন্দোবস্ত করতে পুলিশ-প্রশাসনের কর্তাদের ত্রাহি রবও যেন শোনা গিয়েছে। দার্জিলিং মোড় থেকে হাসমিচক পর্যন্ত প্রায় চার কিলোমিটার পথ হাঁটবেন। পদে পদে নিরাপত্তা নিয়ে আশঙ্কা। আইনশৃঙ্খলা সামলাতে কলকাতা থেকেও আইপিএস অফিসারদের উড়িয়ে আনা হয়েছিল। উত্তাপ-উৎকন্ঠায় ছিলেন তৃণমূলের নেতারাও। বিকেলে চড়া রোদের পরিবর্তে আকাশ কিছুটা মেঘলা থাকায় দুপুরেই ভিড় নিয়ে আশ্বস্ত হয়েছিলেন তাঁরা।

কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর মেজাজে তখনও চড়া তাত। সূত্রের খবর, বাগডোগরায় বিমানবন্দরে মুখ্যমন্ত্রী অর্তকিতে নারদ-প্রশ্ন শুনতে হওয়ায়, পুলিশ অফিসার থেকে তৃণমূল নেতাদের অনেকেই ধমকও শুনতে হয়েছে। মেজাজ হারানোর রেশ দেখা গেল এ দিন দুপুরে ফাঁসিদেওয়ার ঘোষপুকুরের সভাতেও। সভায় তৃণমূল নেত্রী বলেন, ‘‘যাদের কিছু করার নেই তারা শুধু কুৎসাই করে। কুৎসা করা মিথ্যে প্রচার আমি ঘৃণা করি।’’

Advertisement

সংবাদমাধ্যমকে এরপরে তফাতে রাখার তৎপরতা দেখা গিয়েছে মিছিলেও। সাংবাদিক এবং চিত্র সাংবাদিকদের জন্য ব্যবস্থা করা হয়েছিল দু’টি ম্যাটাডর। দার্জিলিং মোড়ে মিছিল শুরুর জায়গায় পৌঁছতেই সংবাদমাধ্যমের কাছে ‘অনুরোধ’ আসে ম্যাটাডরে উঠে যান। মিছিল শুরুর পরে ভিড়ের ঠেলাঠেলিতে গাড়ি থেকে নেমে যতবারই মুখ্যমন্ত্রীর দিকে এগোনোর চেষ্টা করা হয়েছে, শীতল গম্ভীর গলায় নিরাপত্তা রক্ষীরা বলেছেন, ‘প্লিজ আর এগোবেন না’।

তবে মিছিলে মুখ্যমন্ত্রীর মুখে হাসি দেখা গিয়েছে। রাস্তার দু’পাশে পুলিশের ব্যরিকেডে আটকে ছিল কালো মাথার ভিড়। কেউ মোবাইল দিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর ছবি তোলার জন্য মিছিলের পাশে ছুটেছেন, কেউ বা মুখ্যমন্ত্রীকে হাত নেড়ে বিনিময়ে নমস্কার বা হাত নাড়া পেয়েই খুশি। তৃণমূল নেত্রী গৌতম দেবের কথায়, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীকে ঘিরে মানুষের যে উন্মাদনা রয়েছে, তা এ দিনের মিছিলই প্রমাণ করেছে।’’

শনিবার সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অশোক ভট্টাচার্য দাবি করেছিলেন, মুখ্যমন্ত্রীর মিছিলে যানজটের আশঙ্কা নেই, কারণ মিছিলে ভিড় হবে না। এ দিন অবশ্য ভিড় যানজটের জেরে কিছু কর্মসূচি পিছিয়ে দিয়েছিল সিপিএম। অশোকবাবুর দাবি, ‘‘মিছিলে ভিড় দেখাতে ইচ্ছে করে বিশৃঙ্খলা তৈরি করা হয়েছিল।’’

মিছিলের উদ্দেশ্য ছিল নন্দীগ্রাম দিবস পালন। যদিও, তৃণমূল প্রার্থী ভাইচুং ভুটিয়াকে পাশে নিয়ে ভোট প্রচারই চালালেন তৃণমূল নেত্রী। মিছিল শেষে হাসমিচকে নন্দীগ্রামের শহিদ বেদিতে ফুলও দিলেন তিনি। যদিও শহিদ বেদির পঞ্চাশ ফুট দূরেই লোহার ব্যারিকেড ঘিরে দেওয়া হয়েছিল। সাংবাদিক তো বটেই, ক্যামেরাও যেতে দেওয়া হয়নি ব্যারিকেডের ভিতরে। মিনিট দেড়েকের মধ্যে ফুল দিয়ে, একবার কর্মী-সমর্থকদের দিকে হাতজোড় করে গাড়িতে উঠে পড়েন। ফিরে যাওয়ার আগে এ দিন সন্ধ্যায় একবারও সংবাদমাধ্যমের দিকে তাকাননি বিদায়ী মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন