জোটে ভর করে প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসই

হাতে ছিল ৩১। বেড়ে দাঁড়াল ৪৪। আর এই সংখ্যার জোরেই জোটসঙ্গী বামকে পিছনে ফেলে কংগ্রেস এ বার বিধানসভায় প্রধান বিরোধী দল।

Advertisement

দেবারতি সিংহ চৌধুরী

কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ মে ২০১৬ ০৩:১১
Share:

জয়ের পরে শান্তিপুরের জোটপ্রার্থী কংগ্রেসের অরিন্দম ভট্টাচার্য। — নিজস্ব চিত্র।

হাতে ছিল ৩১। বেড়ে দাঁড়াল ৪৪।

Advertisement

আর এই সংখ্যার জোরেই জোটসঙ্গী বামকে পিছনে ফেলে কংগ্রেস এ বার বিধানসভায় প্রধান বিরোধী দল।

গত বিধানসভা ভোটে তৃণমূলের সঙ্গে জোট গড়ে একক ভাবে সিপিএমের থেকে বেশি আসনে জিতেছিল কংগ্রেস। এ বার রাজ্যের এক তৃতীয়াংশেরও কম আসনে লড়েছে কংগ্রেস, তবে ফলাফলে দেখা গেল বামফ্রন্টের থেকেও বেশি আসন পেয়েছে তারা। বলা যেতেই পারে আগের তুলনায় সামান্য হলেও কংগ্রেসের রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক মানচিত্রের প্রসার হল এ রাজ্যে।

Advertisement

২০১১ সালের ভোটে কংগ্রেস জিতেছিল ৪২টি আসন। পরের চার বছরে দলবদলের ফলে বিধায়ক সংখ্যা কমে দাঁড়ায় ৩১। আর এ বার বাম-জোটে লড়ে কংগ্রেসের প্রাপ্তি হল ৪৪। ২০১৪ সালের লোকসভায় একক ভাবে কংগ্রেসের প্রাপ্তি হয়েছিল ৯.১৬ শতাংশ ভোট। প্রায় তিন শতাংশ বেড়ে এ বার তা হয়েছে ১২.৩। জোট-সৌজন্যেই তাঁদের এই ফল-প্রাপ্তি বলে মেনে নিচ্ছেন কংগ্রেসের নেতারা। মালদহ, মুর্শিদাবাদ বা উত্তর দিনাজপুরের পাশাপাশি দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলাতেও এ বার ‘খাতা খুলেছে’ কংগ্রেস। আর তাতে প্রত্যাশিত ভাবেই উৎসাহী কংগ্রেস শিবির। বামেদের সঙ্গে জোটের ফলে এ বার হাফ সেঞ্চুরির কাছাকাছি আসন তারা নিজেদের দখলে রাখতে পারবে বলে আশা করেছিল কংগ্রেস। ৫০ না হলেও কংগ্রেসের সন্তোষজনক এই ফলের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি মানস ভুঁইয়া, আব্দুল মান্নান, শঙ্কর সিংহের মতো তাবড় নেতার জয়।

জোটের বিরোধিতা করেছিলেন মানসবাবু। কিন্তু সেই জোটের ফায়দায় নিজের গড় সবংয়েই ভোট বেড়েছে ছ’বারের এই বর্ষীয়ান বিধায়কের। প্রায় ৫০ হাজার ভোটের ব্যবধানে তৃণমূলকে পরাস্ত করেছেন মানসবাবু। আর প্রায় এক দশক পরে জোটের হাত ধরেই বিধানসভায় ফিরে এসেছেন মান্নান ও শঙ্করবাবু। ১৯৯১, ১৯৯৬ এবং ২০০১ সালে পরপর তিন বার হুগলির চাঁপদানি থেকেই বিধায়ক হয়েছিলেন মান্নান। রণক্ষেত্র চেনা হলেও দশ বছরের ‘বিরতি’র পরে আদৌ ‘সহজ’ ছিল না চাঁপদানি বিজয়। কিন্তু জোট-বলে সেই চাঁপদানিই আবার তাঁকে বিধানসভার অলিন্দে নিয়ে এল বলে স্বীকার করলেন অঙ্কের প্রাক্তন শিক্ষক মান্নান। বললেন, ‘‘জোট না হলে কিছুতেই জিততে পারতাম না। আমার এলাকায় সিপিএম এবং ফরোয়ার্ড ব্লক প্রাণপণে চেষ্টা করেছেন আমাকে জেতাতে। ওঁদের আন্তরিকতাতেই এই সাফল্য।’’ বর্ষীয়ান এই নেতার জয়ে বৃহস্পতিবার বিকেলে তাঁকে ফোনে অভিনন্দন জানান প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী।

এক সময়ে রাজনীতি থেকে সন্ন্যাস নিতে চাওয়া মান্নানের মতোই রাজনীতি-বৃত্তের আলো থেকে দূরত্বে থাকা শঙ্করবাবুর জয়েও এ বার উচ্ছ্বসিত কংগ্রেস কর্মীরা। রানাঘাট উত্তর-পশ্চিম কেন্দ্রে শঙ্করবাবুর প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন ওই কেন্দ্রের তৃণমূল বিধায়ক ও রানাঘাট পুরসভার চেয়ারম্যান পার্থসারথি চট্টোপাধ্যায়। তাঁকে হারাতে কংগ্রেসের ভাঙাচোরা সংগঠনের পাশাপাশি বাম শক্তিকে পুরোদমে ময়দানে নামিয়ে শঙ্করবাবুর জয় সম্ভব হয়েছে, মানছেন কংগ্রেস নেতারাই। কংগ্রেসের ‘দুর্গ’ শান্তিপুরে গত বার জিতেও তৃণমূলে চলে গিয়েছিলেন কংগ্রেসের অজয় দে। সেই অজয়বাবুর প্রতাপকে প্রতিহত করে সেখানে কংগ্রেসের পতাকা ফের ওড়ালেন দলের যুব সভাপতি অরিন্দম ভট্টাচার্য।

দিনের শেষে এত প্রাপ্তিযোগ থাকলেও সকাল থেকেই হতাশায় নিঝুম ছিল কংগ্রেসের সদর দফতর বিধান ভবন। সকাল থেকে কোনও নেতার দেখা নেই সেখানে। বেলা ১টা নাগাদ এলেন অধীরবাবু। বিকেল পর্যন্ত সুনসান বিধান ভবনে অধীরবাবু নিজের ঘরে বসে ব্যাখ্যা করলেন জোটের পরাজয়। বললেন, ‘‘অনেক বেশি আশা করেছিলাম। তা-ও যেটুকু হয়েছে, কংগ্রেসের জন্য তাকে সন্তোষজনকই বলব।’’ ভোটের মুখে জোট-গঠন বাংলার মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়নি বলে তিনি মনে করছেন। আর সে জন্যই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-বিরোধী জোট এ বার ভোটে ফলপ্রসূ হয়নি বলেই তাঁর ধারণা। আরও বেশি আসনে প্রার্থী দিতে পারলে কংগ্রেসের ফল আরও ভাল হওয়ার সম্ভাবনা ছিল বলে তাঁর অভিমত। কিছুটা ক্ষোভ নিয়েই অধীর বললেন, ‘‘মুর্শিদাবাদে ১০টি আসনে বামেরা প্রার্থী দিয়ে দিল! ওই ১০টি আসনে বন্ধুত্বপূর্ণ লড়াই না হলে কংগ্রেস আরও ভাল ফল করত।’’

দলগত সাফল্য এলেও জোটের পরাজয়‌ের হতাশা নিয়েই অধীর বললেন, ‘‘হার-জিত চিরস্থায়ী নয়। এখন আমাদের লক্ষ্য একটাই। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে আমাদের সংগঠনকে বাড়িয়ে শক্তিশালী লড়াই করা।’’ সেই লড়াইয়ে ফের বাম-সঙ্গ থাকবে কি না, তা নিয়ে প্রত্যাশিত ভাবেই নিশ্চিত নন অধীর। তাঁর বক্তব্য, ‘‘লোকসভায় জোট হবে কি হবে না, তা ঠিক করবে দিল্লি। আমি কী করে তা নিয়ে এখনই মন্তব্য করব!’’

জোট-ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা থাকলেও বিরোধী দলনেতার পদের বিষয়ে কংগ্রেস নিঃসন্দেহে এগিয়ে। কে বিরোধী দলনেতা হবেন, তা স্থির করতে দিন কয়েকের মধ্যেই নবনির্বাচিত বিধায়কদের নিয়ে বিধান ভবনে আলোচনায় বসবেন অধীর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন