Corona

পড়ুয়াদের স্বার্থে অনলাইন ক্লাস গরমের ছুটিতেও

শহরের কয়েকটি স্কুলের প্রধান শিক্ষকেরা জানাচ্ছেন, গ্রীষ্মের ছুটি থাকলেও কয়েক জন শিক্ষক স্বেচ্ছায় অনলাইনে ক্লাস নিতে রাজি হয়েছেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৩ এপ্রিল ২০২১ ০৬:২৫
Share:

প্রতীকী ছবি।

করোনার দাপট বেড়ে চলায় গত ২০ এপ্রিল থেকে রাজ্যের স্কুলগুলিতে গরমের ছুটির কথা ঘোষণা করেছেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়ে দিয়েছেন, গ্রীষ্মাবকাশ চলবে আগামী জুন পর্যন্ত। কিন্তু পড়ুয়া ও অভিভাবকদের একটা বড় অংশের প্রশ্ন, করোনার প্রকোপ না কমলে কি জুনেও স্কুল খোলার সম্ভাবনা আছে? এত দীর্ঘ ছুটির ফলে কি আখেরে এই বিপুল সংখ্যক ছাত্রছাত্রীরই ক্ষতি হবে না? এই পরিস্থিতিতে গরমের ছুটির মধ্যেও অনলাইনে ক্লাস নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বেশ কিছু স্কুল।

Advertisement

অনেক অভিভাবকের মতে, এত দিন কোনও ক্লাস না হলে বহু পড়ুয়া পড়াশোনা থেকে আরও বেশি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়তে পারে। তবে শহরের কয়েকটি স্কুলের প্রধান শিক্ষকেরা জানাচ্ছেন, গ্রীষ্মের ছুটি থাকলেও কয়েক জন শিক্ষক স্বেচ্ছায় অনলাইনে ক্লাস নিতে রাজি হয়েছেন। বিশেষত নবম, দশম ও একাদশ শ্রেণির ক্লাস অনলাইনে করানোর পরিকল্পনা আছে। ভাবনায় আছে পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণির কিছু ক্লাস অনলাইনে নেওয়ারও। পাশাপাশি প্রধান শিক্ষকেরা জানাচ্ছেন, এই বিষয়ে শিক্ষা দফতর থেকে কোনও নির্দেশিকা আসে কি না, সে দিকেও তাঁরা তাকিয়ে আছেন।

সংস্কৃত কলেজিয়েট স্কুলের প্রধান শিক্ষক দেবব্রত মুখাপাধ্যায় জানান, তাঁদের স্কুলে পড়ুয়াদের বিভিন্ন দলে ভাগ করে অনলাইন ক্লাস হয়। কিছু শ্রেণিতে অনলাইন ক্লাস গরমের ছুটিতেও হবে। দেবব্রতবাবু বলেন, “অনেক অভিভাবক অনুরোধ করায় শিক্ষকেরা অনলাইন ক্লাস করাবেন। বিশেষত নবম ও দশম শ্রেণি এবং চলতি বছরের মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের জন্য গরমের ছুটিতে ক্লাস করাতেই হবে।’’ তিনি জানান, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা জুন মাসে হওয়ার কথা। ওই দুই পরীক্ষার শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতিতে অনেকেরই কোনও কোনও বিষয় আটকে যেতে পারে। তাই তাদের জন্য অনলাইন ক্লাস চালু রাখা জরুরি।

Advertisement

কোভিড পরিস্থিতিতে পড়ুয়ারা ঘরের বাইরে বেরোতে পারছে না। অনেক ছাত্রছাত্রী যেখানে গৃহশিক্ষকের কাছে পড়ত, সেখানেও কিছু কিছু জায়গায় পড়া বন্ধ রয়েছে। অভিভাবকদের একাংশের মতে, গরমের ছুটিতে তাই সপ্তাহে যদি কয়েকটা অনলাইন ক্লাসও হয়, পড়ুয়ারা খুবই উপকৃত হবে।

বেলতলা গার্লস স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা অজন্তা মুখোপাধ্যায় বলেন, “শুধু নবম থেকে দ্বাদশই নয়, পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণির পড়ুয়াদের জন্যও অনলাইন ক্লাস জরুরি। দীর্ঘদিন ক্লাস না করলে অনেকে পড়াশোনা থেকে কিছুটা হলেও বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে পারে। অনলাইন ক্লাস কখনওই স্কুলে এসে ক্লাস করার বিকল্প হতে পারে না। তবু এই মাধ্যমে যেটুকু পাঠদান করা যায়, সেটাই পড়ুয়াদের পক্ষে লাভ। আমাদের কিছু শিক্ষক অনলাইনে ক্লাস করাবেন।”

সাখাওয়াত মেমোরিয়াল গভর্নমেন্ট গার্লস হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষিকা পাপিয়া নাগ বলেন, ‘‘হঠাৎ ছুটি পড়ে যাওয়ায় সব ক্লাসেরই কিছু পড়া অসমাপ্ত থেকে গিয়েছিল। বিশেষত নবম থেকে একাদশ শ্রেণির পাঠ্যক্রম খানিকটা এগোতে হবে। তাই আমরা ১৫-২০ দিনের অনলাইন ক্লাসের পরিকল্পনা করেছি। এ ছাড়া, ছোটদের কিছু অ্যাক্টিভিটি ক্লাস করানো হবে ছুটিতে। সেই কাজ তারা মিড-ডে মিলের সামগ্রী নেওয়ার সময়ে জমা দিতে পারবে।’’ প্রয়োজন মতো পড়ুয়াদের সঙ্গে অনলাইনে যোগাযোগ রাখার সব ব্যবস্থাও তাঁরা করেছেন বলে জানিয়েছেন পাপিয়াদেবী।

অনলাইনে ক্লাস চালু রাখার কথা জানিয়েছেন কল্যাণীর বিধানচন্দ্র মেমোরিয়াল গভর্নমেন্ট গার্লস হাইস্কুলের ভারপ্রাপ্ত সহকারী প্রধান শিক্ষিকা সংহিতা পালও। তাঁর কথায়, ‘‘ধরাবাঁধা রুটিন মেনে না হলেও অন্তত যে সব বিষয়ের অ্যাসাইনমেন্ট বাকি রয়েছে, সেগুলি শেষ করার জন্য কিছু ক্লাস নিতে হবে। দেওয়া হবে কিছু ছুটির কাজও।’’ এই পরিকল্পনা মূলত নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির জন্যই নেওয়া হয়েছে বলে জানান সংহিতাদেবী। টাকি বয়েজের প্রধান শিক্ষিকা স্বাগতা বসাক জানান, গত বছরও করোনাকালে গরমের ছুটির সময়ে তাঁরা অনলাইনে ক্লাস নিয়েছিলেন। এ বারও তেমনই পরিকল্পনা রয়েছে। তিনি বলেন, “পুরো ছুটির মরসুমেই
পড়ুয়াদের সঙ্গে শিক্ষকদের যোগাযোগ থাকবে। কোনও নির্দিষ্ট রুটিন হয়তো থাকবে না। তবে পড়ুয়ারা যদি মনে করে কোনও নির্দিষ্ট বিষয়ে অনলাইন ক্লাস দরকার, তারা জানালেই সেই ক্লাস আমরা নেব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন