ভোট বৃদ্ধির ঘোষণায় পুরভোটের অভিজ্ঞতার ছোঁয়া নেই তো?

নির্বাচন কমিশন বিগত কয়েকটি নির্বাচনের মতো এ বারের পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনেও প্রিসাইডিং অফিসারদের কাছ থেকে এসএমএস-এর মাধ্যমে ভোটপ্রদানের হার সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহের ব্যবস্থা করেছে। প্রতি ঘণ্টায় কত শতাংশ ভোটার ভোট দিয়েছেন নির্বাচন কমিশনের কাছে তা পৌঁছানোর ব্যবস্থা দু’টি।

Advertisement

বিশ্বনাথ চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ০৭ এপ্রিল ২০১৬ ১১:৪৭
Share:

নির্বাচন কমিশন বিগত কয়েকটি নির্বাচনের মতো এ বারের পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনেও প্রিসাইডিং অফিসারদের কাছ থেকে এসএমএস-এর মাধ্যমে ভোটপ্রদানের হার সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহের ব্যবস্থা করেছে। প্রতি ঘণ্টায় কত শতাংশ ভোটার ভোট দিয়েছেন নির্বাচন কমিশনের কাছে তা পৌঁছানোর ব্যবস্থা দু’টি।

Advertisement

১) প্রিসাইডিং অফিসারদের কাছ থেকে এসএসএস মারফত
২) সেক্টর অফিসার মারফত।

এই ভোট শতাংশ জানার পদ্ধতি গত কয়েকটি নির্বাচন ধরেই চলে আসছে। রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনও তার ব্যতিক্রম নয়। গত ৪ এপ্রিল জঙ্গলমহলে যে ১৮টি বিধানসভা কেন্দ্রে ভোট হয়েছে তার অধিকাংশই মাওবাদী উপদ্রুত অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় নির্বাচন কমিশন ১৪টি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণের সময় নির্ধারণ করেছিল সকাল ৭টা থেকে বিকেল ৪টে অবধি। মাত্র ৪টি কেন্দ্রে ভোট নেওয়া হয়েছে সন্ধে ৬টা পর্যন্ত। নির্বাচনের দিন নির্বাচন কমিশন প্রতি দু’ঘণ্টা অন্তর সংবাদমাধ্যমকে ভোটের হার জানিয়েছিল। অধিকাংশ কেন্দ্রে বিকেল ৪টের মধ্যে ভোট শেষ হয়ে যাওয়ার পর রাজ্য মুখ্য নির্বাচন কমিশনার সন্ধে সাড়ে ৬টা নাগাদ যে সাংবাদিক সম্মেলন করেন, তাতে তিনি প্রায় ৮১% ভোট পড়েছে বলে জানান। যে সময়ে তিনি এই সাংবাদিক সম্মেলন করছেন তখন সমস্ত কেন্দ্র থেকেই ভোটের হারের তথ্য কমিশনের হাতে চলে আসার কথা, অন্তত অতীত অভিজ্ঞতা এবং নির্বাচন কমিশনের তথ্য সংগ্রহের পদ্ধতি সেই কথাই বলছে। ৪ তারিখ প্রথম দফার ভোটগ্রহণ হয়ে যাওয়ার পর, গতকাল ৬ এপ্রিল রাজ্য মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের দফতর থেকে জানানো হয় তিন জেলা পশ্চিম মেদিনীপুর, বাঁকুড়া এবং পুরুলিয়ায় গড়ে ভোট পড়েছে ৮৪.২২%। এর মধ্যে সব থেকে বেশি ভোট পড়েছে শালবনীতে, ৯০.১১%। দ্বিতীয় গোপীবল্লভপুর, ৮৭.৬৭%। পশ্চিম মেদিনীপুরের যে ৬ বিধানসভা কেন্দ্রে গড়ে ভোট পড়েছে ৮৫.৯২%। পুরুলিয়ায় ৯টি বিধানসভা কেন্দ্রে ভোটের হার ৮২.৬০%। বাঁকুড়ায় ৩ টি কেন্দ্রে ৮৫.৬৮%। গতকালের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে বলা যায় ভোট শেষ হওয়ার পর ভোট প্রদানের যে শতাংশের হিসেব নির্বাচন কমিশন ৪ তারিখ দিয়েছিল, ‘বাস্তবে’ প্রথম দফার নির্বাচনে ভোট পড়েছে তার থেকে ৩.৩০% বেশি!

Advertisement

নির্বাচন কমিশনের এই দু’দিন দেওয়া দু’টি তথ্যের ফারাক নিয়ে যথেষ্ট বিতর্কের অবকাশ রয়েছে। প্রসঙ্গত, উল্লেখ করা যেতে পারে কলকাতা সমেত ৯২টি পুরসভা নির্বাচনের সময় রাজ্য নির্বাচন কমিশনের দেওয়া প্রাথমিক ভোটের শতাংশের তথ্যের সঙ্গে ইভিএম-এ প্রদত্ত ভোটের যথেষ্ট পার্থক্য ছিল। শুধু তাই নয়, ভোট শেষ হয়ে যাওয়ার পর কলকাতা পুরসভায় যত শতাংশ ভোট পড়েছে বলে মুখ্য নির্বাচন কমিশন জানিয়েছিলেন, দু’দিন পরে আবার রাজ্য নির্বাচন কমিশনের তরফ থেকে জানানো হয় আদতে ভোট পড়েছে তারও ৭% বেশি। সেই সময় এর কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে দেখা যায়, ভোট শেষ হওয়ার মুখে নির্বাচন কমিশনের দফতরে প্রিসাইডিং অফিসারদের এসএমএসের মাধ্যমে আসা ভোটের শতাংশের হারের হিসেবে আচমকাই বৃদ্ধি হয়েছে। বিরোধী দলের থেকে অভিযোগ করা হয়, ভোট গ্রহণের শেষ পর্যায়ে শাসক দলের কর্মীরা নাকি একের পর এক বুথ দখল করে ব্যপক ছাপ্পা ভোট দিয়েছেন। ইভিএম জমা দেওয়ার পর জেলা নির্বাচন অফিসে সেই সমস্ত ‘ফল্স’ ভোট অন্তর্ভুক্ত করে যখন রাজ্য নির্বাচন কমিশনের কাছে ভোটদানের পূর্ণাঙ্গ চিত্র আসে, তাতে নির্বাচন কমিশনের প্রাথমিক তথ্যের সঙ্গে দু’দিন পরের দেওয়া তথ্যের বিশাল পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়।

আরও পড়ুন-প্রথম দফার ভোট বাড়ল সাড়ে তিন শতাংশ, ভূতের উপদ্রব?

সম্প্রতি ঘটে যাওয়া কলকাতা পুর নির্বাচনের অভিজ্ঞতা থেকে কোনও কোনও মহলে আশঙ্কা করা হচ্ছে, জঙ্গলমহলেও সেই একই ট্যাকটিক্স কাজে লাগাননি তো শাসক দলের নেতা-কর্মীরা?

পাশাপাশি উঠছে আরও একটি প্রশ্ন। ভোট গ্রহণ শেষের আধ ঘণ্টা পর মুখ্য নির্বাচন কমিশনের দেওয়া ভোট দানের হারের তথ্যের সঙ্গে দু’দিন পরে দেওয়া তাঁরই দফতরের তথ্যে এত অসঙ্গতি কেন? বিগত কয়েকটি লোকসভা এবং বিধানসভা নির্বাচনের অভিজ্ঞতার নিরিখে বলা যায়, ভোট শেষ হয়ে যাওয়ার পর নির্বাচন কমিশনের দেওয়া প্রাথমিক তথ্যে এবং চূড়ান্ত তথ্যের মধ্যে পার্থক্য সর্বাধিক ১%। এ ক্ষেত্রে এমন কী ঘটল যে প্রাথমিক এবং চূড়ান্ত তথ্যের মধ্যে ফারাকটা এতটা হল? বিষয়টি অস্বাভাবিক। হয় ভোট শেষের তথ্যে ব্যপক কোনও গরমিল ছিল অথবা নির্বাচন কমিশনের এই ভোটের শতাংশ জানার পদ্ধতিতে বড় রকমের গাফিলতি রয়েছে। উল্লেখিত দু’টি ক্ষেত্রে ত্রুটি থাকলে তা শুধরে নেওয়ার অবকাশ আছে। কিন্তু ২০১৫ সালের কলকাতা পুরসভা নির্বাচনের অভিজ্ঞতার ছোঁয়ায় যদি ভোট দানের হার বেড়ে থাকে তবে গণতন্ত্র আবারও সঙ্কটের মধ্যে বৈকি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন