নামল কমিশনের শাস্তির খাঁড়া, বদলি হুগলির জেলাশাসক

মাস কয়েক আগে গোঘাটে প্রশাসনিক সভায় সরকারি নানা প্রকল্পের কথা বলছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁকে কথার সূত্র ধরিয়ে দিতে দেখা যায় হুগলির জেলাশাসক সঞ্জয় বনশলকে। এ দৃশ্য সে দিন অনেকেই দেখেছিলেন। বিরোধীরা অবশ্য এটাকে কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে ভাবতে রাজি ছিলেন না।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৮ মার্চ ২০১৬ ০৩:০৩
Share:

মাস কয়েক আগে গোঘাটে প্রশাসনিক সভায় সরকারি নানা প্রকল্পের কথা বলছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁকে কথার সূত্র ধরিয়ে দিতে দেখা যায় হুগলির জেলাশাসক সঞ্জয় বনশলকে। এ দৃশ্য সে দিন অনেকেই দেখেছিলেন। বিরোধীরা অবশ্য এটাকে কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে ভাবতে রাজি ছিলেন না। বেশ কিছু দিন ধরেই জেলাশাসকের বিরুদ্ধে পক্ষপাতের অভিযোগ তুলছিলেন তারা। এ বার ভোটের মুখে হুগলির জেলাশাসককেই বদলিই করে দিল নির্বাচন কমিশন। এই সিদ্ধান্তে বিরোধী শিবির স্বভাবতই খুশির হাওয়া। শাসকদলের দাবি, দল উন্নয়ন দিয়েই ক্ষমতায় ফিরবে। কে জেলাশাসক থাকলেন তা গৌণ ব্যাপার। প্রসঙ্গত, এর আগে ২০১৪ সালে লোকসভা নির্বাচনের সময় পক্ষপাতের অভিযোগে ভোটের কাজ থেকে তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল।

Advertisement

বস্তুত, নির্বাচনী বিধি লাগু হওয়ার পর জেলার ১৮টি বিধানসভা এলাকা থেকেই শাসকদলের বিরুদ্ধে কমবেশি নানা অভিযোগ উঠছিল। তার মধ্যে মারধর, দেওয়াল দখল, বাইক-বাহিনীর দাপট, প্রচারে বাধা তো ছিলই। কিন্তু সেই সব অভিযোগের সাপেক্ষে জেলা নির্বাচনী অফিসার হিসেবে ‘মুখ্যমন্ত্রী ঘনিষ্ঠ’ জেলাশাসককে সে ভাবে ভূমিকা পালন করতে দেখা যাচ্ছিল না বলে অভিযোগ তুলেছিলেন বিরোধীরা। গত কয়েকদিন ধরে সিপিএমের তারকেশ্বর জোনাল কার্যালয়ের সামনে দিয়ে শাসকদলের বাইক-বাহিনী টহল দিচ্ছিল। তাতে আতঙ্কিত দলীয় কর্মী-সমর্থকেরা নির্বাচনের কাজে নামতে ভয় পাচ্ছিলেন বলে জেলা সিপিএম নেতৃত্বের অভিযোগ। এ ব্যাপারে চলতি মাসের ৯, ১০ এবং ১২ তারিখে পর পর অভিযোগ জানানো হয় জেলাশাসকের দফতরে। কিন্তু সেই অভিযোগের কোনও সুরাহা হয়নি বলে সিপিএমের দাবি। একই ভাবে সিপিএমের ‘সিঙ্গুর থেকে শালবনি পদযাত্রা’র পর গোঘাটে তাদের কর্মীদের মারধরের ঘটনা বেড়ে গিয়েছিল বলেও অভিযোগ। বিরোধীরা এ সব নিয়ে নির্বাচন কমিশনেও অভিযোগ জানান। তার পরিণতিতেই জেলাশাসককে সরানো হল বলে রাজনৈতিক শিবিরের অভিমত।

কমিশনের নির্দেশ নিয়ে জেলাশাসক কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তবে, সিপিএমের জেলা সম্পাদক সুদর্শন রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘হুগলির জেলাশাসকের কাছে অভিযোগ জানানোর সুযোগ মিলত না। তিনি সময়ই দিতেন না। তবে যিনিই দায়িত্বে থাকুন, আমরা সব সময়ই চাই নির্বাচনবিধিকে যথাযত মান্যতা দিয়ে যেন কাজ হয়। মানুষ তাঁর অধিকার নিয়মমাফিক প্রয়োগের সুযোগটুকু যেন পান।’’ প্রদেশ কংগ্রেস নেতা আব্দুল মান্নান বলেন, ‘‘আমরা তো কবেই হুগলির জেলাশাসকের কাছে যাওয়া ছেড়েছি। ওঁর অফিসে সব সময় তৃণমূলের লোকজন বসে থাকে। নির্বাচন কমিশনের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত।’’ সিপিআইএমএল নেতা সজল অধিকারী বলেন,‘‘আধাসেনা দেখে আমরা বল পেয়েছিলাম। নানা অভিযোগ জানাচ্ছিলাম জেলাশাসকের কাছে। কিন্তু কোনও লাভ হচ্ছিল না। ধনেখালি, জাঙ্গিপাড়া, পাণ্ডুয়ার মতো উপদ্রুত এলাকাতে তো সে ভাবে রুটমার্চই শুরু হয়নি। কমিশন সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’’

Advertisement

জেলাশাসকের বদলিকে অবশ্য ‘তড়িঘড়ি সিদ্ধান্ত’ বলে মনে করছেন জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব। দলের জেলা সভাপতি তপন দাশগুপ্ত বলেন, ‘‘বিরোধীরা জেলার অনেক আসনে এখনও প্রার্থীই দিতে পারেনি। দেওয়াল লিখনও শুরু করতে পারেনি। প্রচারও শুরু করতে পারেনি ওরা। সেখানে নির্বাচন কমিশন জেলাশাসকের ভূমিকা দেখল কী ভাবে? আমাদের মনে হয়ে এটা তড়িঘড়ি সিদ্ধান্ত।’’

হুগলিতে সঞ্জয়বাবু প্রায় দেড় বছর জেলাশাসকের দায়িত্ব সামলেছেন। এখানে আসার আগে তিনি ছিলেন উত্তর ২৪ পরগনার জেলাশাসক। তখনও তাঁর বিরুদ্ধে শাসকদলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার অভিযোগ উঠেছিল। প্রদেশ কংগ্রেসের তরফে নির্বাচন কমিশনকে ইতিমধ্যেই শাসক-ঘনিষ্ঠ প্রশাসকদের একটি তালিকা দেওয়া হয়। তাতে একেবারে উপর দিকে নাম ছিল সঞ্জয়বাবুর।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement