সাংবাদিক বৈঠকে কলকাতার নতুন সিপি সৌমেন মিত্র। বুধবার লালবাজারে। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক।
বিধানসভা ভোটে নির্বাচন কমিশনের নির্দেশিকা অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলতে চান কলকাতার নতুন পুলিশ কমিশনার সৌমেন মিত্র। বুধবার দায়িত্ব নেওয়ার পর লালবাজারের অন্য শীর্ষ কর্তাদের সঙ্গে এক বৈঠকে তিনি সরাসরি এই কথা জানিয়ে দেন বলে সূত্রের খবর। পরে সাংবাদিক বৈঠকে সৌমেনবাবু জানান, ‘কঠিন পরিস্থিতি’র মধ্যে কলকাতায় ভোট হতে চলেছে। নতুন দায়িত্বকে চ্যালেঞ্জ হিসেবেই নিচ্ছেন তিনি।
কলকাতায় ভোট ২১ ও ৩০ এপ্রিল। সেই হিসেবে প্রথম দফায় ‘চ্যালেঞ্জে’র মুখোমুখি হতে আট দিন সময় পাচ্ছেন নতুন সিপি। মঙ্গলবারই সৌমেনবাবুর পূর্বসূরি রাজীব কুমারকে সরিয়ে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। রাজীবের বিরুদ্ধে এককাট্টা হয়ে কমিশনে অভিযোগ জানিয়েছিল বিরোধী দলগুলি। তাদের বক্তব্য ছিল, রাজীব শাসক দলের আজ্ঞাবহ হিসেবে পরিচিত। তিনি সিপি থাকলে কলকাতায় বিধানসভা ভোট অবাধ ও সুষ্ঠু হওয়া সম্ভব নয়। ওই অভিযোগ খতিয়ে দেখে মঙ্গলবার কমিশন শুধু রাজীবকে সরিয়েছে তা-ই নয়, রাজ্য সরকারের মতামতের কোনও তোয়াক্কা না করে সৌমেনবাবুকে সিপি পদে নিয়োগের নির্দেশও দিয়েছে। লালবাজার সূত্রের বক্তব্য, এ দিন অতিরিক্ত ও যুগ্ম কমিশনারদের সঙ্গে বৈঠকে নতুন সিপি বুঝিয়ে দিয়েছেন, কমিশনের আস্থার মর্যাদা রাখতে তিনি বদ্ধপরিকর।
আজ বৃহস্পতিবারই কলকাতায় আসছে কমিশনের ফুল বেঞ্চ। এবং আজই বিভিন্ন ডিভিশনের ডিসি-দের সঙ্গে নতুন সিপি-র বৈঠক করার কথা। ভোটের দিন রাস্তায় নামা বাহিনীর নেতৃত্বে থাকেন এই ডিসি-রা। পুলিশ সূত্রের খবর, এ দিন লর্ড সিনহা রোডের বাড়ি থেকে বেরিয়ে সৌমেনবাবু প্রথমে ভবানী ভবনে সিআইডি-র সদর দফতরে যান। কলকাতার সিপি হওয়ার আগে তিনি ছিলেন সিআইডি-র এডিজি। ভবানী ভবন থেকে তিনি যান নবান্নে। তার পর লালবাজারে পৌঁছন বেলা সওয়া তিনটে নাগাদ।
সেখানেই সাংবাদিক বৈঠকে নতুন সিপি বলেন, ‘‘কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে কলকাতায় নির্বাচন হতে চলেছে। তবে আমি কলকাতা পুলিশের অফিসার ও বাহিনীর ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী। আমাদের বাহিনী পেশাদার। এই পুলিশ বাহিনী নিয়ে আমরা সুষ্ঠু ভাবে নির্বাচন পরিচালনা করতে পারব।’’ প্রশ্ন করা হয়, ‘কঠিন সময়’ কেন বলছেন? নতুন সিপি বলেন, ‘‘নির্বাচন একেবারে দোরগোড়ায়। সময় বেশি নেই। সুতরাং, পুলিশের কমিশনার হিসেবে আমার কাছে এটা বড় চ্যালেঞ্জ।’’
গত বছর কলকাতা পুরভোটের দিন গিরিশ পার্ক থানার এক এসআই গুলিবিদ্ধ হন। ২০১৪-য় লোকসভা ভোটের সময়ে প্রবল গণ্ডগোল হয় কাশীপুরে। দু’টি ঘটনাতেই নাম জড়ায় শাসক দলের, অভিযোগ ওঠে পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার। লালবাজারের এক কর্তা বলেন, ‘‘এই অবস্থায় ভোটের মুখে দায়িত্ব নিয়ে তাঁর কাজ কতটা কঠিন, সৌমেনবাবু তা জানেন। সেই জন্যই কঠিন চ্যালেঞ্জের কথা বলেছেন তিনি।’’
আগের সিপি-র উপরে অনাস্থার জন্যই কমিশন তাঁকে দায়িত্ব দিল কি না জানতে চাওয়া হলে সৌমেনবাবু বলেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গ সরকার মারফত আমার পোস্টিং হয়েছে। সরকারি চাকুরে এবং আমলা হিসেবে আমাদের পোস্টিং যখন-তখন যে কোনও জায়গায় হতে পারে।’’
তবে রাজীব কুমারকে সিপি-র পদ থেকে সরানো হলেও তাঁর গতিবিধির উপরে যেন নজর রাখা হয়, নির্বাচন কমিশনকে সেই অনুরোধ করেছেন কংগ্রেস নেতা মানস ভুঁইয়া। বুধবার মুখ্য নির্বাচন কমিশনার নসীম জৈদীকে লেখা চিঠিতে তাঁর অভিযোগ, পশ্চিম মেদিনীপুরের প্রাক্তন এসপি ভারতী ঘোষকে বদলি করা হলেও ১১ এপ্রিল ভোটের দিন সেই মেদিনীপুরের পুলিশ লাইনে বসেই তিনি জেলার ভোট নিয়ন্ত্রণ করেছেন। রাজীব যাতে তেমন কিছু করতে না পারেন, সেই ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে কমিশনকে অনুরোধ জানিয়েছেন মানসবাবু।