নারদ-ভিডিও

৫ তৃণমূল সাংসদকে নোটিস নীতি কমিটির

বাংলা নববর্ষটা খারাপ খবর দিয়েই শুরু হল দিদির! ভোটের উত্তাপ যখন মধ্যগগনে, তখন নারদ-কাণ্ডে অভিযুক্ত তৃণমূলের পাঁচ সাংসদকে নোটিস ধরাল লোকসভার নীতি (এথিক্স) কমিটি। নারদ নিউজের ফুটেজে দেখা গিয়েছে, তৃণমূলের সাংসদ, বিধায়ক, মন্ত্রীরা তাড়া তাড়া টাকা নিচ্ছেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৫ এপ্রিল ২০১৬ ০৩:৫০
Share:

বাংলা নববর্ষটা খারাপ খবর দিয়েই শুরু হল দিদির! ভোটের উত্তাপ যখন মধ্যগগনে, তখন নারদ-কাণ্ডে অভিযুক্ত তৃণমূলের পাঁচ সাংসদকে নোটিস ধরাল লোকসভার নীতি (এথিক্স) কমিটি। নারদ নিউজের ফুটেজে দেখা গিয়েছে, তৃণমূলের সাংসদ, বিধায়ক, মন্ত্রীরা তাড়া তাড়া টাকা নিচ্ছেন। এঁদের মধ্যে যাঁরা লোকসভার সাংসদ, ফুটেজের ভিত্তিতে কেবল তাঁদের কাছেই ব্যাখ্যা চেয়েছে লালকৃষ্ণ আডবাণীর নেতৃত্বাধীন এই সংসদীয় কমিটি।

Advertisement

তৃণমূল সাংসদদের বিরুদ্ধে নীতি কমিটি কতটা সক্রিয় হবে, তা নিয়ে মতান্তর ছিল বিজেপি-তে। আডবাণী ঢিলে দিতে চাননি। তিনি নিয়ম মেনে এগোতে চেয়েছিলেন। ঘরোয়া আলোচনায় এ-ও বলেছিলেন, দীনেশ ত্রিবেদীর মতো তৃণমূল সাংসদ যখন জৈন হাওয়ালা কাণ্ডে তাঁর সত্যনিষ্ঠ অবস্থানের প্রশংসা করছেন, তখন তাঁর হাত গুটিয়ে থাকা শোভা পায় না। কিন্তু সংসদীয় রাজনীতির স্বার্থে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চটাতে চাননি অরুণ জেটলি-রাজনাথ সিংহরা। তাঁদের মত ছিল, ধীরে চলুন আডবাণী। অন্য কাউকে চেয়ারম্যান করারও প্রস্তাব উঠেছিল দলে। সূত্রের দাবি, সেই কারণেই নারদ কাণ্ডের পর-পর জেটলির সঙ্গে দেখা করে আশ্বস্ত হয়েছিলেন মুকুল রায়রা। লোকসভার নেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে দিয়ে সাংবাদিক বৈঠক করিয়ে এই তদন্তকে স্বাগতও জানায় তৃণমূল। কারণ তারা ধরে নিয়েছিল, আঠারো মাসে বুঝি বছর হবে। কিন্তু দ্রুত তদন্ত এগোনোর পক্ষে সওয়াল করেন অমিত শাহ-সিদ্ধার্থনাথ সিংহেরা। রাজ্য নেতাদের প্রবল চাপ ছিল তাঁদের উপরে। ফলে আখেরে আডবাণীর পক্ষে এগোনোটা সহজ হয়ে যায়।

স্টিং অপারেশনের ফুটেজ ইতিমধ্যেই সংসদে জমা দিয়েছেন নারদ নিউজের কর্তা ম্যাথু স্যামুয়েল। নীতি কমিটির এক সদস্য জানান, এ ব্যাপারে অভিযুক্ত সাংসদদের ব্যাখ্যা শোনার পরে ফুটেজটি ফরেন্সিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হবে। সাংসদরা যদি টাকা নেওয়ার কথা স্বীকার করে নেন, তা হলে ফুটেজটি ‘সত্যি’ বলে ধরা হবে। তখন ফরেন্সিক পরীক্ষার বিশেষ প্রয়োজন হবে না। কিন্তু তাঁরা অস্বীকার করলে প্রথমে ফরেন্সিক পরীক্ষা হবে। তার পর পৃথক ভাবে প্রত্যেক সাংসদকে ডেকে পাঠিয়ে কৈফিয়ৎ চাইবে কমিটি। ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ প্রমাণ হলে ওই পাঁচ সাংসদের সাংসদ পদ খারিজ হওয়া অনিবার্য। এমন দৃষ্টান্ত অতীতে রয়েছে। চতুর্দশ লোকসভায় ঘুষের বিনিময়ে প্রশ্ন করার অভিযোগ ওঠে ১১ জন সাংসদের বিরুদ্ধে। তদন্তের পর তাঁদের সদস্যপদ খারিজের সুপারিশ করে নীতি কমিটি। সংসদ তাতে সায় দেয়। সেই সিদ্ধান্তে মাথা গলাতে রাজি হয়নি সুপ্রিম কোর্টও।

Advertisement

নারদের প্রথম ফুটেজে লোকসভায় তৃণমূলের পাঁচ সাংসদকে দেখা গিয়েছিল। তাঁরা হলেন, কাকলি ঘোষদস্তিদার, সুলতান আহমেদ, শুভেন্দু অধিকারী, সৌগত রায় এবং প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়। বিরোধীদের দাবিতে বিষয়টি যখন নীতি কমিটিতে পাঠানো হয়েছিল, তখনও দ্বিতীয় ফুটেজ ফাঁস হয়নি। পরে তা প্রকাশ হলে দেখা যায়, টাকা নিয়েছেন তৃণমূল সাংসদ অপরূপা পোদ্দারও। কমিটি সূত্রে আজ বলা হয়েছে, এখনও পর্যন্ত প্রথম পাঁচ জনকে নোটিস ধরানো হলেও অপরূপার কাছেও শীঘ্রই চিঠি যাবে। যদিও কাকলি ও শুভেন্দু আজ দাবি করেন, তাঁরা কোনও নোটিসই পাননি। সৌগত মন্তব্য করতে চাননি। একমাত্র সুলতান বলেছেন, ‘‘দিল্লির বাড়িতে চিঠি এসেছে শুনেছি। এখন প্রচারে। তাই উত্তর দিতে পারিনি।’’

নীতি কমিটির অন্যতম সদস্য ভ্রত্রুহরি মহতাব বলেন, ‘‘দশ দিন আগেই দিল্লিতে ওই পাঁচ সাংসদের সরকারি বাসভবনে নোটিস পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।’’ তিনি জানান, উত্তর দেওয়ার কোনও সময় বেঁধে দেওয়া হয়নি। তবে ঘুষ নিয়ে প্রশ্ন করার তদন্তের সময় কমিটি যে নিয়ম নিয়ে চলেছিল, সেটাই মেনে চলা হবে। দু’সপ্তাহের মধ্যে (মানে আর চার দিনের মধ্যে) ওই সাংসদদের জবাব না পেলে ফের চিঠি পাঠাবে কমিটি।’’

একান্তে এক বিজেপি নেতার মন্তব্য, ‘‘দিদিকে নারদ নিয়ে যে ভাবে আক্রমণ করেছেন নরেন্দ্র মোদী, তাতে জবাবদিহির দায় এখন তাঁরও। আর ঢিলে দিলে চলে?’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement