সবাই তো কাজ সেরে আসবে, একটু বরং বসি

সভা শুরু হতে তখনও প্রায় আধ ঘণ্টা। মাইকে বারবার শোনা যাচ্ছে সৌরভ চক্রবর্তীর গলা, ‘‘আপনারা মাঠে চলে আসুন। হেলিপ্যাডে ভিড় করে লাভ নেই। মুখ্যমন্ত্রী সড়ক পথে আসছেন।’’

Advertisement

নারায়ণ দে

বীরপাড়া (আলিপুরদুয়ার) শেষ আপডেট: ১৮ মার্চ ২০১৬ ০৩:৩৮
Share:

জনসভায় মুখ্যমন্ত্রী। বৃহস্পতিবার বীরপাড়ায়। ছবি: রাজকুমার মোদক।

সভা শুরু হতে তখনও প্রায় আধ ঘণ্টা। মাইকে বারবার শোনা যাচ্ছে সৌরভ চক্রবর্তীর গলা, ‘‘আপনারা মাঠে চলে আসুন। হেলিপ্যাডে ভিড় করে লাভ নেই। মুখ্যমন্ত্রী সড়ক পথে আসছেন।’’

Advertisement

মঞ্চে বসে অন্য নেতারা এ ওঁকে ঠেলছেন। কপালে ভাঁজ। আলোচনায় প্রশ্ন— মুখ্যমন্ত্রী আবার ফিরে যাবেন না তো! সেই কথার টুকরো ছিটকে এসে পড়েছিল মাঠে হাজির গুটি কয়েক লোকজনের মধ্যে। তাঁদের এক জন সামনে এক তৃণমূল কর্মীকে পেয়ে হাত চেপে ধরলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী আসবেন না! তা হলে এত ক্ষণ এখানে বসে আছি কেন?’’

নেতাদের মধ্যে ঠেলাঠেলি তখন তুঙ্গে। এক জন আর এক জনকে বলছেন, আরে ব্যাপারটা দ্যাখো। না হলে তো এই লোকও উঠে চলে যাবে!

Advertisement

অগত্যা কয়েক জন মিলে ছুটতে ছুটতে হাজির পাশের হেলিপ্যাডের কাছে। ‘‘চলুন, চলুন। ওই মাঠে গিয়ে বসবেন। সিএম তো হেলিকপ্টারে আসছেন না। এখানে দাঁড়িয়ে থেকে লাভ কী!’’

আরও কয়েক জন তখন বীরপাড়ার পাড়ায় পাড়ায় ঢুকে পড়েছেন। সামনে যাকে পাচ্ছেন, বলছেন, ‘‘দিদি এসে গেলেন বলে। চলুন, মাঠে চলুন।’’

ঘড়ির কাঁটা সবে সাড়ে ১২টা পেরিয়েছে। আকাশের মুখ ভার থাকায় রোদ কম। তবে তাতে গুমোট যথেষ্ট। রুমালে মুখ মুছতে মুছতে সৌরভবাবু, আলিপুরদুয়ারের প্রার্থী এবং তৃণমূলের জেলা সভাপতি, ছুটলেন মাইকের দিকে। আবার শোনা গেল তাঁর গলা, ‘‘আপনারা সকলে মাঠে চলে আসুন। মুখ্যমন্ত্রী একটু পরেই সড়ক পথে এখানে এসে যাবেন।’’

এবং বলতে বলতেই আকাশে দেখা গেল হেলিকপ্টার। কিছুটা নামতে বোঝা গেল, জানলার ধারে বসে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাই দেখে মাঠের সেই গুটিকয় মানুষ, তাঁদের মধ্যে হাসির হুল্লোড় উঠল।

মঞ্চে আবার শ্বাসরুদ্ধ অপেক্ষা, উনি আসবেন তো মাঠে? নাকি সব দেখে ফিরে যাবেন হেলিকপ্টারে চেপে। এক জন বলেই ফেললেন, ‘‘এ বারেই তো মালদহে উনি খবর পেয়ে দেরি করে এলেন!’’ অন্য জন তাঁকে ইশারায় বললেন, চুপ চুপ।

মুখ্যমন্ত্রী অবশ্য মাঠে এলেন। সৌরভদের বললেন, ‘‘সবাই বাড়ির কাজ সেরে আসবে। আমিই তাড়াতাড়ি চলে এসেছি।’’

স্বস্তির শ্বাস পড়ল সকলের। লোকজনও একে একে জুটছে তখন মাঠে। অনেকেই ব্যারিকেড পেরিয়ে ছুঁতে চাইছেন মুখ্যমন্ত্রীকে। এর মধ্যেই বীরপাড়ার মাহালি বস্তির কয়েক জন চা শ্রমিককে বলতে শোনা গেল, ‘‘নাগরাকাটা, নিমতিতে তো উনি কোনও আশাই দেখাতে পারেননি। বাগান কবে খুলবে, কে জানে! খালি সস্তার চাল দিলে কী হবে! তাই মাঠে আসতে মন চাইছিল না।’’ হাসপাতাল রোডের বাসিন্দা সাকিনা বিবির আবার অন্য কারণ। বলছিলেন, ‘‘একশো দিনের কাজে টাকা বাকি পড়ে আছে। দিদিকে বলতে চেয়েছিলাম। নেতারা মাঝপথেই আটকে দিলেন!’’

সমাবেশের পরে নেতাদের মুখে অনেক ‘ব্যাখ্যা’ শোনা গেল। ফালাকাটার প্রার্থী অনিল অধিকারী বললেন, ‘‘আলু তোলার মরসুম। খেতে কাজ করে তবে তো এখানে আসবে।’’ মাদারিহাটের প্রার্থী পদম লামার ‘যুক্তি’, ‘‘এত চা বাগান বন্ধ। অনেকেই তো বাইরে কাজ করতে গিয়েছে।’’ আর সৌরভবাবুর দাবি, ‘‘মাঠ ছোট। তাই লোক কম মনে হতেই পারে!’’

যাই হোক, হাস্যমুখ নেত্রী অবশ্য সকলকে ‘পাস’ মার্ক দিয়েই কপ্টারে উঠলেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন