তিন বুথেই শুধু পুরুষ, থাকব কোথায়

ভোটের চিঠি হাতে পাওয়ার পর থেকেই আশেপাশে সকলের কাছে শুনছিলাম আমাদের পুরোপুরি মহিলা পরিচালিত বুথেরই দায়িত্ব দেওয়া হবে। শুধু তাই নয়, নিরাপত্তার দায়িত্বেও থাকবেন মহিলা পুলিশকর্মীরা। নিয়মমতো নির্বাচন কমিশনের জেলাভিত্তিক প্রশিক্ষণে ডাক পড়ল। সেখানে আমাকে নির্বাচনী আধিকারিকেরা জানালেন, ভোটের আগের দিন সেক্টর অফিসে থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এই সব ‘আশ্বাস’ আর ‘শোনা কথা’য় ভর করেই এগিয়ে গেলাম ভোটের দায়িত্ব সামলাতে।

Advertisement

ঋত্বিকা দত্ত (মাইক্রো অবসার্ভার)

শেষ আপডেট: ০৪ মে ২০১৬ ০৩:০০
Share:

ভোটের চিঠি হাতে পাওয়ার পর থেকেই আশেপাশে সকলের কাছে শুনছিলাম আমাদের পুরোপুরি মহিলা পরিচালিত বুথেরই দায়িত্ব দেওয়া হবে। শুধু তাই নয়, নিরাপত্তার দায়িত্বেও থাকবেন মহিলা পুলিশকর্মীরা। নিয়মমতো নির্বাচন কমিশনের জেলাভিত্তিক প্রশিক্ষণে ডাক পড়ল। সেখানে আমাকে নির্বাচনী আধিকারিকেরা জানালেন, ভোটের আগের দিন সেক্টর অফিসে থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এই সব ‘আশ্বাস’ আর ‘শোনা কথা’য় ভর করেই এগিয়ে গেলাম ভোটের দায়িত্ব সামলাতে।

Advertisement

মাননীয় নির্বাচনী আধিকারিকদের নির্দেশ অনুযায়ী ভোটের আগের দিন পৌঁছে গেলাম জিনিসপত্র বিলি ও গ্রহণ কেন্দ্র (ডিসিআরসি) গুসকরা কলেজে। সেখান থেকেই জানতে পারি আমাকে শিবদা জুনিয়র স্কুলের ৩টি বুথে মাইক্রো অবসার্ভারের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সেখানেই সংশয় দানা বাঁধে— বুথগুলো কি মহিলা পরিচালিত? শুরু করি খোঁজখবর নেওয়া। জানতে পারি স্কুলের ৩টি বুথই পুরষ ভোটকর্মীদের দ্বারা পরিচালিত হবে। মহিলা পুলিশকর্মী নয়, নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবেন কেন্দ্রীয় বাহিনীর ৫-৬ জন জওয়ান। এরপরই নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তা শুরু হয়। ভোটের আগের রাতটা কাটাব কোথায়? জানতে পারি ওই স্কুলেই থাকার ব্যবস্থা হয়েছে। মহিলা ভোটকর্মী হিসেবে আলাদা কোনও থাকার জায়গা নেই। শুধু তাই নয়, ওই স্কুল চত্বরে আলাদা মহিলা শৌচাগার পর্যন্ত নেই।

এই পরিস্থিতিতে অত্যন্ত ভয় পেয়ে যাই। অসহায় লাগে নিজেকে। কী করব বুঝতে না পেরে বাড়িতে ফোন করি। ফোন পেয়ে কলকাতা থেকে আমার ৬৬ বছরের বাবা পড়িমরি করে কলকাতা থেকে গুসকরা পৌঁছন। বাবা গুসকরায় তাঁর পরিচিত এক জনের সঙ্গে দেখা করেন। কোনও ক্রমে রাতে মাথা গোঁজার একটা জায়গাও পেলাম বাবা আর পরিচিত মানুষটির সৌজন্যে। ভোটের দিন, ২১ এপ্রিল বাবার পরিচিত ভদ্রলোক মোটরবাইকে করে ভোর ৬টার মধ্যে বুথে পৌঁছে দেন। ভোটের দিনভর অবশ্য কোনও সমস্যা হয়নি। ভীষণ সহযোগিতা করেন বুথের দায়িত্বে থাকা অন্যান্য ভোটকর্মী ও জওয়ানরা।

Advertisement

তবে ভোটের কাজ মেটার পরে এখনও ওই দিনের অভিজ্ঞতার কথা ভাবলে শিউরে উঠছি। বাবা কোনও ভাবে যদি কলকাতা থেকে আসতে না পারতেন তাহলে বোধহয় বুথের ভিতরেই রাত কাটাতে হতো! এই অবস্থায় আরও এক অব্যবস্থার কথা শুনতে পেলাম। আমারই এক জন পুরুষ সহকর্মীকে নাকি ২টি মহিলা বুথে মাইক্রো অবজার্ভার হিসেবে নিয়োগ করা হয়। কারণ হিসেবে বলা হয়, মহিলা মাইক্রো অবজার্ভার নাকি পাওয়া যাচ্ছে না।

দায়িত্ব সামলাতে আপত্তি নেই, কিন্তু কর্তাদের কাছে অনুরোধ, পরের বার আশ্বাস দেওয়ার আগে এক বার ভাববেন প্লিজ।

(লেখক একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের বর্ধমানের সেহারাবাজার শাখার আধিকারিক।)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন