হামলার ভয়ে ঘর ছাড়লেন প্রতিবাদীরা

The protesters left the house for fear of attacksআতঙ্কে ঝাঁপ ফেলেছে হরিণঘাটার ফতেপুর বাজার। ভয়ে ভয়ে রয়েছেন কল্যাণীর শিবু দাস ও তাঁর স্ত্রী টুলটুলি। গয়েশপুর কাটাগঞ্জের কয়েকটি পরিবার বৃহস্পতিবার দুপুরে বাড়ি ছেড়ে আত্মীয় বাড়িতে গিয়েছেন। ফতেপুর বাজারের ব্যবসায়ীরা হোক, বা শিবু দাস কিংবা গয়েশপুরের খান কয়েক পরিবারের মধ্যে মিল একটাই— ভোট বাজারে ওঁরা সকলেই শাসক দলের সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে কোনও না কোনও সময় প্রতিরোধ গড়েছিলেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

রানাঘাট শেষ আপডেট: ২০ মে ২০১৬ ০১:২১
Share:

আতঙ্কে ঝাঁপ ফেলেছে হরিণঘাটার ফতেপুর বাজার। ভয়ে ভয়ে রয়েছেন কল্যাণীর শিবু দাস ও তাঁর স্ত্রী টুলটুলি। গয়েশপুর কাটাগঞ্জের কয়েকটি পরিবার বৃহস্পতিবার দুপুরে বাড়ি ছেড়ে আত্মীয় বাড়িতে গিয়েছেন। ফতেপুর বাজারের ব্যবসায়ীরা হোক, বা শিবু দাস কিংবা গয়েশপুরের খান কয়েক পরিবারের মধ্যে মিল একটাই— ভোট বাজারে ওঁরা সকলেই শাসক দলের সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে কোনও না কোনও সময় প্রতিরোধ গড়েছিলেন। রুখে দাঁড়িয়েছিলেন শাসকদলের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে। বৃহস্পতিবার তৃণমূলের কার্যত ভূমিধ্বস বিজয়ের পর আপাতত তাঁরা চরম আতঙ্কে রয়েছেন। হামলার আশঙ্কা করছেন ওঁরা। এই বুঝি শাসকদলের বাহুবলীরা ‘উচিৎ শিক্ষা’ দিতে হামলা চালাল।

Advertisement

বর্ধমানের কালনা পলিটেকনিক কলেজের শিক্ষক কল্যাণী বিবেকানন্দ পল্লীর বাসিন্দা শিবু দাসের বাড়িতে ভোটের আগের রাতে শাসক দলের লেকেরা গিয়ে হুমকি দিয়ে এসেছিল, তাঁরা যেন কেউ বুথে না যান। বুথের দিকে পা বাড়ালেই কপালে কষ্ট রয়েছে বলে হমকি দেয় ওই দুষ্কৃতীরা। হুমকিতে অবশ্য থেমে থাকেননি শিবুবাবু। সকালে উঠেই সচিত্র পরিচয়পত্র হাতে পা বাড়িয়েছিলেন ভোটকেন্দ্রের দিকে। সঙ্গে ছিলেন স্ত্রী টুলটুলি। মাঝ রাস্তায় ওই দম্পত্তির পথ আটকায় শাসক দলের লোকেরা। ওই দুষ্কৃতীরা বাঁশপেটা করে শিবুবাবুর দুটি হাত ভেঙে দেয়। বাধা দিতে গিয়ে আক্রান্ত হন টুলটুলিও। সেই অবস্থায় হাসপাতাল থেকে হাত প্লাস্টার করিয়ে ফের বুথে গিয়ে ভোট দেন দাস দম্পতি। তারপর থেকে একের পর এক হুমকি আসছিস দাস দম্পতির উপর।

ভোটের ফল প্রকাশের পর শিবুবাবু বলেন, ‘‘এ রকম বিশাল জয় পেলে ওরা মনে হয় আরও বেপরোয়া হয়ে পড়বে। ওরা সব করতে পারে। জানি না কী বিপদ অপেক্ষা করে রয়েছে।’’ অস্ত্রোপচার হলেও তাঁর দু’হাতই কার্যত অকেজো। তিনি বলেন, ‘‘আমি বা আমার স্ত্রী স্বাভাবিক ভাবেই কিছুটা আতঙ্কে রয়েছি। আমরা না হয় আবারও প্রতিবাদ-প্রতিরোধ করব। কিন্তু আমার কয়েকজন প্রতিবেশী চরম আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। তাঁদেরকে যে কী ভাবে সাহস দেব তা বুঝে উঠতে পারছি না।’’

Advertisement

ফতেপুর বাজারের বেশ কিছু বাসিন্দা ভোটের ঠিক আগে তৃণমূল ছেড়ে সিপিএমে যোগ দিয়েছিলেন। তার পর থেকেই তাঁদের নানা ভাবে হুমকি দেওয়া হচ্ছিল। হরিণঘাটায় তৃণমূল বড় ব্যবধানে জয় পেয়েছে। জিতেছে নীলিমা নাগ মল্লিক। সকাল থেকেই এলাকা ছিল থমথমে। বেলা বাড়তেই ভোটের ফল পরিষ্কার হয়ে যায়। বেলা আরও গড়াতেই বন্ধ হয়ে যায় দোকানপাট। এলাকা কার্যত বনধের চেহারা নেয়। রাস্তাঘাটে লোকজনের সে ভাবে দেখা মিলছিল না। দলবদল করা ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, তাঁরা চরম আতঙ্কে রয়েছেন। যে কোনও সময় তাঁরা আক্রান্ত হতে পারেন বলে মনে করছেন এখানকার বেশ কিছু সিপিএম সমর্থকও।

হরিণঘাটারই পারুলিয়া গ্রামের সুকুর আলি মণ্ডল জোট প্রার্থীর পোলিং এজেন্ট হয়েছিলেন। ভোট মিটতে সেই রাতেই তাঁর বাড়ি আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। তারপর থেকে সুকুর আলি সপরিবারে এলাকা ছাড়া। এই ফলের পর তিনি চরম আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘আর বাড়ি ফিরতে পারব কিনা জানি না। এ বার তো ওরা আমাকে প্রাণেও মেরে ফেলতে পারে।’’

শাসকের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে পুলিশ ডেকে ভোট দিতে গিয়েছিলেন গয়েশপুর কাঁটাগঞ্জের কয়েকটি পরিবারের সদস্যরা। ভোটের পর সেই এলাকায় চরম তাণ্ডব হয়েছে। তৃণমূলের লোকজন এলাকার লোকজনের উপর নানা ভাবে অত্যাচার করেছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে ভোটের ফল বেরোতেই এলাকা ছেড়েছেন তাঁরা। কয়েকটা দিন আত্মীয়ের বাড়িতে কাটিয়ে এলাকা স্বাভাবিক হলে ফিরবেন বলে জানিয়েছেন। ভোটের পরে পরেই কল্যাণী বিধানসভার মদনপুর শিকারপুরে সিপিএমের পার্টি সদস্য রবীন্দ্রনাথ শীলের বাড়িতে সাদা থান আর বোমার সঙ্গে হুমকি চিঠি পাঠিয়ে স্পষ্ট জানানো হয়েছিল, ১৯ তারিখের পর তাঁর পরিবারের সকলকে দেখে নেওয়া হবে। এই জয়ের পর তাঁরা আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন। ভাবছেন, এই বুঝি তৃণমূলের লোকজন কোনও অনিষ্ট করল।

যদিও কল্যাণী শহর তৃণমূলের সভাপতি অরূপ মুখোপাধ্যায় এবং হরিণঘাটা ব্লক সভাপতি চঞ্চল দেবনাথ একযোগে বলছেন, ‘‘এই জয়ের পর দলীয় কর্মীদের সংযত থাকতে বলা হয়েছে। কোনও ভাবেই যাতে ফল-পরবর্তী অশান্তি না ঘটে সে দিকে সব কর্মীদের নজর দিতে বলেছি।’’ যদিও সেটা কতটা বাস্তবায়িত হবে তা নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন