ভরসা সেই সবুজেই

জোটের মুখ রাখল শিল্পাঞ্চল

ধস নামা শুরু হয়েছে সেই পাঁচ বছর আগে। তার পরে যত ভোট হয়েছে, তা যেন গভীর হয়েছে। বর্ধমান জেলায় এ বার সেই ক্ষত আরও বাড়ল বামেদের।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২০ মে ২০১৬ ০২:০২
Share:

জয়ের উল্লাস। পাণ্ডবেশ্বরের বাঁকোলায় সবুজ আবিরে রেঙেছেন তৃণমূল কর্মী-সমর্থকেরা। বৃহস্পতিবার ছবিটি তুলেছেন ওমপ্রকাশ সিংহ।

ধস নামা শুরু হয়েছে সেই পাঁচ বছর আগে। তার পরে যত ভোট হয়েছে, তা যেন গভীর হয়েছে। বর্ধমান জেলায় এ বার সেই ক্ষত আরও বাড়ল বামেদের।

Advertisement

২০১১-র বিধানসভা ভোটে জেলার ২৫টি কেন্দ্রের ১৫টিতে জিতেছিল তৃণমূল। বামেদের দখলে গিয়েছিল ৯টি আসন। কংগ্রেস জিতেছিল একটিতে। সে বার কংগ্রেস-তৃণমূল জোট গড়ে লড়েছিল। এ বার অবশ্য বাম ও কংগ্রেস হাত মিলিয়ে তৃণমূলের সঙ্গে লড়াইয়ে নেমেছিল। কিন্তু তাতেও শেষরক্ষা হল না। ২৫টি আসনের মধ্যে ১৯টি গেল তৃণমূলের ঝুলিতে। পাঁচটি বামেরা ও একটিতে কংগ্রেস জিতল। এর মধ্যে গ্রামীণ এলাকার ১৬টি আসনের মধ্যে ১৪টিতেই ফুটেছে ঘাসফুল। জোটের মুখ রাখল মূলত আসানসোল-দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চল। সেখানে ৯টি আসনের ৪টিতে জিতেছে তারা।

গত বিধানসভা ভোটে গ্রামীণ এলাকায় বামেরা সাতটি আসন পেলেও তাদের আরও ভরাডুবির ইঙ্গিত মিলেছিল দু’বছর আগে লোকসভা ভোটে। গ্রামীণ এলাকায় ১৬টি আসনের সব ক’টিতেই পিছিয়ে পড়েছিল তারা। ১৫টিতে বেশি ভোট পেয়েছিল তৃণমূল। শুধু কাটোয়ায় কংগ্রেস এগিয়ে যায়। দুর্গাপুরে দু’টি আসনেও তখন বেশি ভোট পায় তৃণমূল। তবে আসানসোল লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত সাতটি আসনের পাঁচটিতে এগিয়ে ছিল বিজেপি। গত বছর এপ্রিলে পুরভোটে কালনা, কাটোয়া, মেমারিতে মাথা তুলতে না পারলেও দাঁইহাট দখল করে বামেরা। অক্টোবরে পুরভোটেও আসানসোলে হারানো জমি পুনরুদ্ধার করে তৃণমূল।

Advertisement

এ বার প্রচারপর্বের ছবি অবশ্য আশা জাগিয়েছিল জোটের নেতা-কর্মীদের মনে। বামেদের লড়াইয়ে ফেরার ইঙ্গিত দিচ্ছিল জনসভা, মিছিলে ভিড়। তার সঙ্গে যোগ হয়েছিল নানা কেন্দ্রে তৃণমূলের অন্তর্দ্বন্দ্ব, বহিরাগত প্রার্থী নিয়ে ক্ষোভ, দুর্নীতির অভিযোগ। বৃহস্পতিবার ইভিএম খোলার পরে অবশ্য স্পষ্ট, কোনও কিছুই জোটের পক্ষে যায়নি, অন্তত গ্রামীণ এলাকায়।

গত বার পরিবর্তনের হাওয়ার মাঝেও দখলে রাখা মন্তেশ্বর, গলসি, আউশগ্রাম, বর্ধমান উত্তর, খণ্ডঘোষ, রায়না, মঙ্গলকোট ও পাণ্ডবেশ্বর এ বার হাতছাড়া হল বামেদের। কাটোয়ায় আগের বার জিতেছিল কংগ্রেস। সে বারের জয়ী রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় এ বার জিতলেন তৃণমূলের টিকিটে। আউশগ্রাম প্রায় ৪৯ বছর ও মন্তেশ্বর প্রায় ৩৯ বছর পরে হাতছাড়া হল বামেদের। তবে উলটপুরাণ হয়েছে পাঁচ কেন্দ্রে— জামালপুর, পূর্বস্থলী উত্তর, দুর্গাপুর পূর্ব ও পশ্চিম এবং রানিগঞ্জে। এই আসনগুলি তৃণমূলের হাত থেকে ছিনিয়ে নিয়েছে জোট। কিছু কেন্দ্রে আবার লড়াই হয়েছে হাড্ডাহাড্ডি। রায়না, কাটোয়া ও মন্তেশ্বরে জোট প্রার্থীরা হেরেছেন হাজারেরও কম ভোটে। বর্ধমান দক্ষিণে রবিরঞ্জন চট্টোপাধ্যায়, কালনায় বিশ্বজিৎ কুণ্ডু, পূর্বস্থলী দক্ষিণে স্বপন দেবনাথ, আসানসোল উত্তরে মলয় ঘটকেরা জয় পেয়েছেন বড় ব্যবধানে। তবে সবচেয়ে বড় ব্যবধানে জিতেছেন এক জোট প্রার্থী— দুর্গাপুর পশ্চিমের বিশ্বনাথ পাড়িয়াল, যিনি ভোটের আগেই তৃণমূল ছেড়ে কংগ্রেসে যান। প্রায় ৪৪ হাজার ভোটে তিনি হারিয়েছেন দুর্গাপুরের মেয়র অপূর্ব মুখোপাধ্যায়কে।

সবিস্তার দেখতে ক্লিক করুন।

এ বার বেশি কিছু কেন্দ্রে, বিশেষত শিল্পাঞ্চলে নজর ছিল বিজেপির দিকেও। লোকসভা ভোটের তুলনায় ভোট কমেছে তাদের। কোনও আসনে না জিতলেও জেলা জুড়ে অনেকগুলি কেন্দ্রে ভাল ভোট পেয়েছে তারা। আসানসোল উত্তর ও কুলটিতে জোটকে টপকে দু’নম্বরে বিজেপি। এ ছাড়াও আসানসোল দক্ষিণ, জামুড়িয়া, রানিগঞ্জ, বারাবনি, দুর্গাপুর পূর্ব, পূর্বস্থলী উত্তর, মঙ্গলকোট, গলসিতে ভাল ভোট পেয়েছে গেরুয়া-বাহিনী।

জেলা তৃণমূল সভাপতি (গ্রামীণ) স্বপন দেবনাথ বলেন, ‘‘মানুষ আমাদের ঢেলে আর্শীবাদ করেছেন। জেলায় দারুণ ফল হয়েছে।’’ জেলা শিল্পাঞ্চল (আসানসোল) সভাপতি ভি শিবদাসন বক্তব্য, ‘‘ফল ভাল হয়েছে। যে সব কেন্দ্রে হারলাম সেগুলি নিয়ে দলে পর্যালোচনা হবে।’’ সিপিএমের জেলা সম্পাদক অচিন্ত্য মল্লিকের প্রতিক্রিয়া, ‘‘গোটা রাজ্যে বিপর্যয় হয়েছে। তারই একটি অংশ বিশেষ বর্ধমান। দলের কর্মী-সমর্থকদের হামলার হাত থেকে রক্ষা করাই এখন প্রধান কাজ।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন