সাগরদিঘিতে গোঁজ সামসুল, তোড়জোড় সমশেরগঞ্জেও

সিদ্ধান্তটা গত সপ্তাহেই হয়ে গিয়েছিল সাগরদিঘির পোপাড়ায় বিক্ষুব্ধ তৃণমূল নেতা-কর্মীদের সভায়। জঙ্গিপুর মহকুমাশাসকের অফিসে গিয়ে সোমবার ক্রিকেট ব্যাট চিহ্নে মনোয়নয়ন জমা দিলেন ‘নির্দল প্রার্থী’ সামসুল হোদা। তাঁর সঙ্গে বাইশটি গাড়ি ও তিনটি বাসে হাজার খানেক তৃণমূল কর্মী।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৯ মার্চ ২০১৬ ০১:৫৫
Share:

বাঁ দিকে সামসুল। মনোনয়ন জমা দিলেন হুমায়ুন কবীরও। ছবি: নিজস্ব চিত্র

সিদ্ধান্তটা গত সপ্তাহেই হয়ে গিয়েছিল সাগরদিঘির পোপাড়ায় বিক্ষুব্ধ তৃণমূল নেতা-কর্মীদের সভায়। জঙ্গিপুর মহকুমাশাসকের অফিসে গিয়ে সোমবার ক্রিকেট ব্যাট চিহ্নে মনোয়নয়ন জমা দিলেন ‘নির্দল প্রার্থী’ সামসুল হোদা। তাঁর সঙ্গে বাইশটি গাড়ি ও তিনটি বাসে হাজার খানেক তৃণমূল কর্মী। ভোট তো হবে পরে। আপাতত মনোনয়ন দিতে এসেই শক্তি প্রদর্শন করে গেলেন একদা তৃণমূল থেকে সাগরদিঘি গ্রাম পঞ্চায়েতে নির্বাচিত উপপ্রধান সামসুল। তৃণমূলের দলীয় প্রার্থী সুব্রত সাহার মনোনয়নও এ দিনই জমা পড়েছে। তবে তিনি নিজে আসেননি। তাঁর হয়ে দলের চার নেতা এসে কাগজপত্র জমা করেন।

Advertisement

তৃণমূলের বেলুনে গোঁজের কাঁটা ফুটতে চলেছে সমশেরগঞ্জেও। এ দিন মনোনয়নপত্র তুলেছেন ব্লক তৃণমূল সভাপতি রেজাউল হক ওরফে মন্টু বিশ্বাস। সকালে কংগ্রেস ছেড়ে গিয়ে বিকেলে তৃণমূল প্রার্থী বনে যাওয়া আমিরুল ইসলামের যাত্রাভঙ্গ করাই তাঁর উদ্দেশ্য। কাল, বুধবারই তিনি মনোনয়ন জমা দেবেন বলে খবর। সুব্রতরও সে দিন মনোনয়ন জমা দেওয়ার কথা।

রেজিনগর কেন্দ্রে তিনি ‘নির্দল’ প্রার্থী হিসেবে দাঁড়াচ্ছেন বলে আগেই জানিয়ে দিয়েছিলেন তৃণমূল থেকে বহিষ্কৃত হুমায়ুন কবীর। জোরকদমে দেওয়াল লিখনও শুরু করে দিয়েছেন। এ দিন ১০টি গাড়িতে অনুগামীদের নিয়ে বহরমপুরে প্রশাসনিক ভবনে গিয়ে মনোনয়ন জমা দেন তিনি। ওই কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী সিদ্দিকা বেগম অবশ্য এখনও তা জমা করেননি।

Advertisement

এ দিন বেলা ১১টা নাগাদ মহকুমাশাসকের দফতর থেকে মাইল খানেক দূরে ম্যাকেঞ্জি স্টেডিয়ামে সার দিয়ে গাড়ি ঢোকে। সেখান থেকে মিছিল করে সদলবলে সামসুল পৌঁছন দফতরে। পরে বেরিয়ে প্রাক্তন বিধায়ক সুব্রত সাহার নাম না করেও তিনি অভিযোগ করেন, “এত দিন সাগরদিঘির মানুষকে ক্রীতদাস মনে করেছেন বিধায়ক। তোলাবাজি-লুঠ হয়েছে। শংসাপত্র নিতেও সাগরদিঘির মানুষকে ছুটতে হয়েছে বহরমপুরে বিধায়কের বাড়ি। আমরা এর অবসান চেয়ে নেতাদের কাছে আবেদন করেছিলাম। কিন্তু তা মানা হয়নি।”

২০১১ সালে বিধানসভা ভোটে সুব্রত সাহার পাশে ছিলেন সামসুল ও তার দলবল। সুব্রত জেতেন মাত্র সাড়ে চার হাজার ভোটে। ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে হোদা ও তাঁর অনুগতেরা দলের হয়েই কাজ করেছেন। তৃণমূল এগিয়েছিল প্রায় চোদ্দোশো ভোটের ব্যবধানে। এই যেখানে পরিস্থিতি, সেখানে সামসুল ও তাঁর অনুগামীরা (সাগরদিঘিতে তৃণমূলের ৮২ জন পঞ্চায়েত সদস্যের মধ্যে ৫৭ জন) সরাসরি বিরোধিতায় নামায় ফল কী হতে পারে, তা অনেকটাই অনুমেয়।

তৃণমূল সুব্রতকে ফের প্রার্থী করায় ওই ৫৭ জন লিখিত ভাবে বিরোধিতা করে দল ছেড়েছেন। তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আত্মীয়, যুব তৃণমূলের ব্লক সভাপতি দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ ১১ জন অঞ্চল যুব সভাপতিও দল ছেড়েছেন। সামসুলের ১০ জন প্রস্তাবকের মধ্যে রয়েছেন তৃণমূলের দুই প্রাক্তন ব্লক সভাপতি মহম্মদ আলি মধু এবং রেজাউল্লা।

এত গাড়ি নিয়ে মনোনয়ন জমা করতে আসার খরচ কে জোগাল?

সামসুলের দাবি, “সাগরদিঘির মানুষ জোট বেঁধেছেন। বিভিন্ন এলাকা থেকে কর্মীরাই এই সব গাড়ি নিয়ে এসেছেন আমার মনোনয়ন পেশের খবর পেয়ে। আসা-যাওয়া ও খাওয়ার খরচও তাঁরাই জোগাটড় করেছেন।” সাগরদিঘি পঞ্চায়েত সমিতির প্রাক্তন সভাপতি উত্তম মুখোপাধ্যায় বলেন, “আমি দিয়েছি দু’টি গাড়ির ভাড়া আর খাওয়া-দাওয়ার খরচ বাবদ ১৩০০ টাকা। সামসুলের রাজনৈতিক সঙ্গী হয়ে এটুকু করব না?”

সুব্রত সাহা অবশ্য সামসুলের মনোনয়ন জমা নিয়ে সরাসরি কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তিনি শুধু বলেন, “সাগরদিঘিতে নেত্রীর নির্দেশ মেনে সকলেরই দলের হয়ে কাজ করা উচিত।” মুর্শিদাবাদ জেলা তৃণমূল সভাপতি মান্নান হোসেন দাবি করেন, “দল ছেড়ে কেউ যদি ভোটে লড়েন, বলার কী আছে? আমার মনে হয় না, এতে সাগরদিঘিতে তৃণমূল প্রার্থীর কোনও ক্ষতি হবে।”

নিজের নির্বাচনী প্রতীক হিসেব প্রথমে ‘কাঁচি’ চেয়েছিলেন সামসুল। কিন্তু অন্য কেউ আগেই তা নিয়ে নেওয়ায় পাননি। পরে দ্বিতীয় পছন্দ হিসেবে তিনি বেছে নেন ব্যাট। তৃণমূল প্রার্থীর নাক কাটার কাঁচি যে তাঁর পকেটেই আছে, তা বলা বাহুল্য। এখন কি ব্যাটে ছক্কা হাঁকাবেন ভাবছেন।

সামসুল এই সব বাঁকা অর্থ কবুল করতে রাজি নন। তিনি হাসছেন— ‘‘আরে না না, ওই দু’টি প্রতীকই দেওয়ালে আঁকা সহজ। সাধারণ মানুষকে চেনানোও যায় বেশ সহজে। তাই আর কী।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
আরও পড়ুন