চায়ের দোকানে সঙ্গীদের সঙ্গে খোশমেজাজে শঙ্কর। নিজস্ব চিত্র।
উন্নয়নেই মজে আছেন। আবার বিরোধীদের সমালোচনারও জবাব দিচ্ছেন। এক মাস আগে ভোট শেষ হয়ে ফল প্রকাশের দিন ঘাড়ে নিশ্বাস ফেলছে। অথচ হেলদোল নেই দক্ষিণ দিনাজপুরের বালুরঘাটের তৃণমূল প্রার্থী তথা পূর্তমন্ত্রী শঙ্কর চক্রবর্তীর। ভোটের পরেও যেন তার অঙ্ক কষার ভোট চলছে।
গ্রাম থেকে শুরু করে নিজের শহর সামলে ক’দিন আগে কলকাতায় গিয়ে পূর্ত দফতরের কাজের দেখভাল করছেন। আবার নিজ ভূমে ফিরে এসে চলমান প্রকল্পের তদারকিতেই দিনের অনেকটা সময় কাটিয়ে দিয়েছেন। মাত্র ২৪ ঘন্টার অপেক্ষা। সত্তরোর্ধ্ব সটান চেহারা তখন আত্মবিশ্বাসে ভরপুর। শঙ্করবাবু বলেন, কর্মীদের অক্লান্ত পরিশ্রম ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়ন বিফলে যাবে না।
বালুরঘাটের কংগ্রেস পাড়ায় দলের কেন্দ্রীয় পার্টি অফিসে বসে খোস মেজাজে শঙ্করবাবু বলেন, ‘‘কাজটাই আগে। মুখ্যমন্ত্রী পূর্ত দফতরের মতো গুরুত্বপূর্ণ দফতরে কাজের দায়িত্ব অর্পণ করেছেন। তা নিষ্ঠা ভরে পালন করাই আমার প্রথম লক্ষ্য ছিল।’’
জেলায় ভোট প্রচারে এসে খোদ মুখ্যমন্ত্রী কুমারগঞ্জের সভামঞ্চ থেকে জেলা অন্যান্য নেতানেত্রীর সামনে জনতার উদ্দেশ্যে শঙ্করবাবুকে দরাজ-সার্টিফিকেট দিয়ে আস্থা পোষণ করেছেন। তাঁর জয় সম্পর্কে নিশ্চিন্ত হয়ে জেলা ছেড়েছেন।
মাত্র সাড়ে তিন বছর আগে পূর্ত দফতরের দায়িত্ব পেয়েই তিনি প্রথমে গ্রামের রাস্তাঘাট, পানীয় জল ও সেতু তৈরির কাজে গুরুত্ব দেন বলে দাবি করেন। তাঁর নির্বাচনী এলাকায় ১০টি কংক্রিটের সেতু তৈরি হয়েছে। রাস্তা উন্নয়নের কাজে প্রথমে গঙ্গারামপুর। তারপরে নজর দেন নিজের শহর বালুরঘাটের রাস্তা চওড়া করা থেকে নিকাশি নালা তৈরির উপরে। রেকর্ড সময়ে শহরের আত্রেয়ী খাঁড়ির উপর সেতু তৈরি করার সময় অ্যাপ্রোচ রোড কিছু জায়গায় বসে যাওয়ায় ইদানিং বিরোধী জোট প্রার্থী সমালোচনায় সরব হয়েছেন। জবাবও তাঁকে দিতে হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রীর ইচ্ছায় নামাঙ্কিত ওই ‘আন্দোলন’ সেতুর অ্যাপ্রোচ-রোডে এখনও চূড়ান্ত ভাবে পিচ-পাথর হয়নি। কিছু জায়গায় বসে গিয়েছে। অ্যাপ্রোচ রাস্তায় বিভিন্ন জায়গা থেকে আলগা মাটি ফেলে তৈরি করা হয় বলে একটি বর্ষার জলের জন্য অপেক্ষা করতে হয়। তারপরেই চূড়ান্ত হয় কাজ—সমালোচনার জবাব দিচ্ছেন শঙ্করবাবু। ভোটের পরেও।
গত ৩৪ বছরে বালুরঘাটে ভোট হারানোর ভয়ে বামেরা যা করেননি বলে অভিযোগ, তাতেও হাত দিয়েছেন শঙ্করবাবু। গত তিন বছরে ব্যবসায়ীদের উচ্ছেদ না করেও রাস্তা চওড়া করে ফুটপাত তৈরি থেকে শহরে পরিকাঠামো উন্নয়নের সাফল্যকে ভোটের হাতিয়ার করে শঙ্করবাবু মাত্র দু’জনকে সেনাপতি করে ভোট ময়দানের দায়িত্ব সঁপেছিলেন। এক জন তার এগজিকিউটিভ অ্যাসিস্ট্যান্ট (পার্সোন্যাল) দেবপ্রিয় সমাজদার। অন্য জন শঙ্কবাবুর আইনজীবী ছেলে ঋতব্রত চক্রবর্তী। ওই দু’জনে মিলে হিলির পাঁচটি এবং বালুরঘাটের তিনটি অঞ্চল এবং বালুরঘাট পুরসভায় টিম সাজিয়ে সমানে ব্যাটিং করেছেন।
তাতে গোষ্ঠীকাজিয়া রুখে বিরোধী জোটের বিরুদ্ধে কত রান ঝুলিতে এলো? বিদায়ী পূর্তমন্ত্রী চায়ের কাপ হাতে মুচকি হেসে বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী যদি আবারও মন্ত্রিসভায় স্থান দিয়ে নবান্নে কাজ করার সুযোগ দেন, তা হলে উন্নয়নের ধারাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে নিষ্ঠার কোনও অভাব হবে না।’’