-প্রচারে তৃণমূল এবং জোটের প্রার্থী।—নিজস্ব চিত্র।
সারদা, নারদ নাকি সেতু?
পাঁচ বাছরে শাসক দলের বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতি, অপশাসনের অভিযোগ নাকি রাস্তা?
শাসক দলের উন্নয়নের নিনাদ নাকি বন্যা নিয়ন্ত্রণে সদর্থক পদক্ষেপ?
খানাকুলের গ্রামে গ্রামে পা রাখলে এ সব প্রশ্নের উত্তর মিলবে সহজেই। আর সেই উত্তরই ভোট চাইতে তাঁদের দোরে আসা বিভিন্ন দলের প্রার্থীদের কানে তুলে দিচ্ছেন খানাকুলের মানুষ।
কী বলছেন তাঁরা?
খানাকুলের পোল, ঘোষপুর, নতিবপুর, শাবলসিংহপুর, মাড়োখানা, পানশিউলি, চক্রপুর, গণেশপুর গ্রামের শেখ ইসমাইল, কাজল দে, মিনতি সিংহ, শক্তিপদ রায় জানাচ্ছেন, সেতু চাই, রাস্তা চাই। চাই কপালের গেরো বন্যা নিয়ন্ত্রণে সঠিক, উপযুক্ত পদক্ষেপ।
রাজনৈতিক মতপার্থক্যের জন্য সংঘর্ষ, খুনোখুনির দীর্ঘ পরিসংখ্যান রয়েছে হুগলির এই কেন্দ্রে। কিন্তু নদী-নালায় ঘেরা বন্যাপ্রবণ খানাকুলের মানুষ এ বার উন্নয়নের প্রাথমিক শর্তে এককাট্টা। সবারই বক্তব্য, চোর-ডাকাত কে ভোট চাইছে, কাকে ভোট দিচ্ছি—সে সব বিচারের অবস্থায় এখন খানাকুল নেই। খানাকুলের মানুষের চাই উন্নয়ন। চাই সেতু, ভাল রাস্তা। জলদি এ সব শর্ত পূরণের যোগ্যতা যার আছে তাঁদের আশীর্বাদ তার কপালেই।
পোল, ঘোষপুর, নতিবপুর, শাবলসিংহপুর, মাড়োখানা, পানশিউলি, চক্রপুরের মানুষের ক্ষোভ, “বছরের পর বছর বন্যার সঙ্গেই সহবাস। বন্যা দুর্গত খানাকুলের সমস্ত রাস্তা চওড়া করে সংস্কারের দাবি দীর্ঘদিনের, যা আজও পূরণ হয়নি। ৫০ বছরের পুরনো দাবির মধ্যে কাজ বলতে বাম আমলে তৈরি দিগরুইঘাট সেতু আর মুচিঘাটায় বিধানসভা ভোটের দিন ঘোষণার দিন কয়েক আগে একটা সেতুর শিলান্যাস। যা আদৌ হবে না কি ভোট পাওয়ার ছক, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। তবে কাগনানের কলমিজোড় এলাকায় একটি ছোট সেতু করেছে পঞ্চায়েত সমিতি। যে সব রাস্তা চওড়া করে আমূল সংস্কারের দাবি দীর্ঘদিনের তা হল ধরমপোতা-গড়েরঘাট, গৌরহাটি-বন্দর, রামনগর-কয়েদতলা, চক্রপুর-গণেশপুর, সেকেন্দরপুর-মদনপুর, দিগরুইঘাট-রামনগর, দিগরুইঘাট-ছত্রশাল ইত্যাদি। সেই সঙ্গে খান কুড়ি গ্রামে যোগাযোগের সুবিধার জন্য ছোট সেতু নির্মাণের দাবিও রয়েছে। তৃণমূল, জোট বা বিজেপি যে প্রার্থীকেই সামনে পাচ্ছেন তাঁর কাছেই এ সব প্রশ্ন তুলে ধরছেন খানাকুলের মানুষ।
এলাকার মানুষের বক্তব্য, পরিকাঠামো এবং দিনের পর দিন নদীনালা সংস্কার না হওয়ায় বন্যায় তাঁদের দুর্ভোগের সীমা থাকে না। জল নেমে যাওয়ার পরে রাস্তাঘাট নিয়ে যে দুর্ভোগ পোহাতে হয় সে সব সমাধানে কোনও রাজনৈতিক দলেরই সদিচ্ছা তাঁরা দেখতে পাননি। তাঁরা বলছেন, ‘‘আগের বার তৃণমূল প্রার্থী ইকবাল আহমেদ ভোট চাইতে এসে বলেছিলেন, ‘মমতা দিদিই সব। আমার কোনও অস্তিত্ব নেই। মমতাকে মুখ্যমন্ত্রী করলেই সব সমস্যা মিটে যাবে, উন্নয়ন হবে’।’’
গত পাঁচ বছরে খানাকুলের কী সেই উন্নয়ন? ভোটারদেরই বা কী বলছেন তৃণমূল প্রার্থী?
ইকবাল আহমেদের কথায়, ‘‘পাঁচ বছরে অনেক উন্নতি হয়েছে। মুচিঘাটা সেতুর ছাড়পত্র মিলেছে। বৈদ্যুতিক চুল্লি হয়েছে। খানাকুল ক্রমশ সোনাকুল হচ্ছে।’’ তাঁর দাবি, ‘‘এ বার জিতলে আমার লক্ষ্য নতিবপুরে সেতু। একটা পলিটেকনিক কলেজ। যা যা উন্নয়ন দরকার সবই হবে।” বাম ও তৃণমূল জমানায় খানাকুলের মানুষের যে দুর্দশা ঘোচেনি প্রচারে তা মানুষকে বলছেন বিজেপি প্রার্থী বিকাশ দলুই। আর সিপিএম প্রার্থী ইসলাম আলি খাঁ ময়দান কাঁপাচ্ছেন প্রচারে তৃণমূলের দুর্নীতি-অপশাসনকে তুলে ধরে। বলছেন, ক্ষমতায় এলে সংশোধিত নিম্ন দামোদর প্রকল্প রূপায়ণে জোর দেওয়ার কথা। রূপনারায়ণ-দামোদর আর মুণ্ডেশ্বরী নদীর পলি সরালেই যে বন্যাকে মুঠোয় পোরা যাবে, বলছেন সে কথাও।
আর বন্যা নিয়ন্ত্রণ হলেই যে খানাকুলের ৮০ শতাংশ সমস্যা মিটে যাবে তা কে না জানে। কিন্তু সেই সমস্যা কারা মেটাবেন তা তাঁরাই ঠিক করবেন বলে জানিয়ে দিয়েছেন খানাকুলের মানুষ।
আর তাঁদের এই ভাবনাই চিন্তায় রেখেছে সব দলকে।