গণনা পর্বেও শিরদাঁড়া সোজা রাখার প্রস্তুতিতে লালবাজার

নির্বাচন কমিশনের চাপে মেরুদণ্ড সোজা রেখে ভোট পরিচালনা করেছিল লালবাজার। এ বার গণনা এবং পরবর্তী সময়ে রাজনৈতিক হিংসা আটকাতে মেরুদণ্ড কতটা সোজা থাকবে, সেই পরীক্ষার মুখে লালবাজার।

Advertisement

শিবাজী দে সরকার

শেষ আপডেট: ১৬ মে ২০১৬ ০২:৫৪
Share:

নির্বাচন কমিশনের চাপে মেরুদণ্ড সোজা রেখে ভোট পরিচালনা করেছিল লালবাজার। এ বার গণনা এবং পরবর্তী সময়ে রাজনৈতিক হিংসা আটকাতে মেরুদণ্ড কতটা সোজা থাকবে, সেই পরীক্ষার মুখে লালবাজার।

Advertisement

ভোটের ফলাফল শুনে রাজনৈতিক হিংসায় রাজপথে উন্মত্ত জনতার সংঘর্ষের অভিজ্ঞতা রয়েছে কলকাতা পুলিশের। অভিযোগ, পুলিশের একাংশের নিষ্ক্রিয়তার ফলে এর আগে বারবার শাসকদলের হাতে আক্রান্ত হতে হয়েছে বিরোধী দলের কর্মী-সমর্থকদের। এ বার তার পুনরাবৃত্তি চায় না পুলিশ। তাই চলছে আগাম প্রস্তুতি। গণনার আগের দিন অর্থাৎ, ১৮ মে থেকে শহরের বিভিন্ন রাস্তায় কলকাতা পুলিশের গাড়ি টহল দেবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। পুলিশ সূত্রে খবর, গত কয়েক দিন ধরে কলকাতার পুলিশ কমিশনার সৌমেন মিত্র সব থানার ওসি এবং বিভাগীয় কমিশনারদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। নির্বাচনের ফল ঘোষণার পরে যাতে কোনও ধরনের হিংসার ঘটনা না ঘটে, তা নিয়ে সতর্ক করা হয়েছে সব থানাকে।

কলকাতা পুলিশের এক কর্তা জানান, গণনার তিন দিন আগে, ১৬ মে থেকেই বাহিনীকে প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন কমিশনার। কারণ ওই দিন অন্যান্য রাজ্যের ভোট গ্রহণ শেষ হচ্ছে। তার পরে ‘এগজিট পোল’-এর সমীক্ষা নিয়ে উত্তেজনা সৃষ্টি হতে পারে। তার থেকে কোনও সংঘর্ষ যাতে না হয়, সে দিকে নজর রাখবে পুলিশ। ঠিক হয়েছে, ১৬ মে থেকে আটটি ডিভিশনের ডিসি-দের অধীনস্থ বাহিনীকে তৈরি রাখা হবে। পাশাপাশি, প্রতিটি ডিভিশনকে লালবাজার থেকে দেওয়া হচ্ছে অতিরিক্ত বাহিনী। এক পুলিশকর্তা বলেন, ‘‘ভবানীপুর, পাটুলির মতো গোলমাল প্রবণ কিছু এলাকায় ফল পরবর্তী গোলমাল মোকাবিলায় ১৫ জনের একটি বাহিনী তৈরি রাখা হচ্ছে।’’

Advertisement

শুক্রবার লালবাজারে কলকাতা পুলিশের শীর্ষকর্তাদের নিয়ে বৈঠক করেন পুলিশ কমিশনার। সেখানে ভোট গ্রহণের দিনের মতোই বাহিনীকে নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ মোতাবেক চলতে বলেছেন। লালবাজার সূত্রের খবর, গণনা কেন্দ্রের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে এই প্রথম পুলিশ কমিশনার অফিসারদের নিয়ে চলতি সপ্তাহে আলাদা বৈঠক করেন। ফল পরবর্তী কোনও রাজনৈতিক সংঘর্ষ হলে তা গুরত্ব সহকারে দেখার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। এক থানার আধিকারিকের কথায়, ‘‘কমিশনার আমাদের কাছে জানতে চেয়েছিলেন, কোথায় কোথায় হিংসার আশঙ্কা রয়েছে। এবং সেই মতো নিরাপত্তা ব্যবস্থা করা হয়েছে এ বার।’’

লালবাজার জানিয়েছে, ১৮ মে শহরের রাস্তায় ৪০টির বেশি টহলদারি গাড়ি মোতায়ন করা হবে। এ ছাড়াও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য গুরত্বপূর্ণ এলাকায় ২৩০টির বেশি পুলিশ পিকেট বসানো হচ্ছে। যাতে ছ’জন করে পুলিশকর্মী থাকবেন। পুলিশের অতিরিক্ত মোটরসাইকেল বাহিনী গণনার আগের দিন থেকে রাস্তায় থাকবে বলেও জানিয়েছে লালবাজার।

১৯ মে কলকাতার ন’টি গণনা কেন্দ্রে ত্রিস্তরীয় নিরাপত্তা বলয় তৈরি করা হবে বলে পুলিশ সূত্রে খবর। গণনা কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকবেন দু’জন করে ডেপুটি কমিশনার। গণনা কেন্দ্রের বাইরে ১০০ মিটারের মধ্যে রাজনৈতিক দলের এজেন্ট ছাড়া কাউকে ঢুকতে দেওয়া হবে না। সেখানে বাঁশের ব্যরিকেড করে আটকে দেওয়া হবে রাজনৈতিক দলের কর্মী-সমর্থকদের। গণনা কেন্দ্রের মূল গেটে মোতায়ন করা থাকবে বাহিনী। প্রতিটি গণনা কেন্দ্রের জন্য তৈরি করা হচ্ছে স্পেশ্যাল কন্ট্রোল রুম। তবে যেখানে গণনা হবে, সেই জায়গায় ঢোকার অনুমতি নেই কলকাতা পুলিশের। সেখানে মোতায়ন থাকবে কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানেরা।

লালবাজার সূত্রের খবর, বাহিনীকে সোজা ব্যাটে খেলার কথাই বলেছেন পুলিশ কমিশনার। ফল ঘোষণার পরে কোনও রাজনৈতিক দল বিজয় মিছিল করলে তাতে পুলিশি নিরাপত্তা দিতে হবে বলেও পুলিশ সূত্রের খবর। মিছিলের সমানে এবং শেষে পুলিশ বাহিনী পাহাড়ায় থাকবে। তবে লালবাজারের একাংশ জানিয়েছে, এ বার ১৯ মে আনুষ্ঠানিক ভাবে কোনও রাজনৈতিক দলকে মিছিল করার অনুমতি দেওয়া হবে না। তবে কোনও দল যদি সে দিন মিছিল করে, তাতে বাধাও দেবে না পুলিশ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement