-হাবরার মঞ্চে তৃণমূল নেত্রী।ছবি: শান্তনু হালদার
অশোকনগরে শাসক দলের গোষ্ঠী কোন্দল নতুন কোনও ঘটনা নয়। সাম্প্রতিক নানা ঘটনায় তা বার বার প্রকাশ্যেও এসেছে। শনিবার হাবরায় নির্বাচনী সভায় এসে ওই কোন্দলের প্রসঙ্গ টেনে আনলেন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই।
এ দিন বাণীপুরে হাবরার বিদায়ী বিধায়ক তথা এ বারের প্রার্থী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের সমর্থনে জনসভা করতে এসেছিলেন তিনি। বক্তব্যের শুরুতেই স্বভাবসিদ্ধ ঢঙে মঞ্চে উপস্থিত নেতানেত্রীদের নাম ধরে সম্বোধন করছিলেন মমতা। হঠাৎ বলে বসেন, ‘‘সমীর কোথায়, এখানে আছে? নাকি ঝগড়া করছে?’’ জানতে চান, ‘‘সমীর তুমি আছো?’’
‘সমীর’ হলেন অশোকনগর-কল্যাণগড়ের প্রাক্তন পুরপ্রধান, অধুনা উপ পুরপ্রধান সমীর দত্ত। দলনেত্রীর মুখে ওই কথা শুনেই মঞ্চে উপস্থিত সমীরবাবু পিছন থেকে সামনে এসে দলনেত্রীকে পায়ে ঢিপ করে প্রণাম সারলেন। দলনেত্রী অবশ্য নিজেই বিষয়টিকে হালকা করতে মাইকে বললেন, ‘‘মাঝে মধ্যে একটু ইয়ার্কি মারতে হয়। সব সময় কি গম্ভীর থাকা যায়?’’
দলনেত্রী বিষয়টিকে যতই হালকা করার চেষ্টা করুন না কেন, ভোটের কয়েক দিন আগে মুখ্যমন্ত্রীর ওই মন্তব্যে অশোকনগরে বিরোধীদের হাতে অস্ত্র তুলে দিল বলেই মনে করছেন রাজনীতির কারবারিরা।
অশোকনগরে শাসকদলের কোন্দল মূলত বিদায়ী বিধায়ক ধীমান রায় ও সমীরবাবুকে কেন্দ্র করেই। যা এ বারের ভোটেও প্রভাব ফেলতে পারে বলে আশঙ্কা দলেরই একটি অংশের। গত পুরভোটের আগে প্রার্থী বাছাই থেকে শুরু করে প্রচার— সব কিছুতেই দুই হেভিওয়েট নেতার কোন্দল প্রকাশ্যে এসেছিল। প্রার্থী বাছাই নিয়ে সভা চলাকালীন দু’পক্ষের অনুগামীদের মধ্যে মারপিটও বাধে। পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।
ভোটের পরে ধীমানবাবুর ঘনিষ্ঠ প্রবোধ সরকারকে পুরপ্রধান করা হয়। সমীরবাবুকে ওই পদ থেকে সরিয়ে উপ পুরপ্রধান করার পিছনে ধীমানবাবুর সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের আকচাআকচিকেই দায়ী করেন দলের স্থানীয় কর্মী-সমর্থকদের একাংশ।
এখানেই শেষ নয়। বিধানসভা ভোটের আগে দলনেত্রী যখন জেলার নেতা, জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে কালীঘাটের বাড়িতে বৈঠক করেছিলেন, তখন সমীরবাবু উঠে দাঁড়িয়ে ধীমানবাবুর বিরুদ্ধে নালিশ জানিয়েছিলেন। দলের একটি সূত্র জানাচ্ছ, সে দিনের রুদ্ধদ্বার বৈঠকে দলনেত্রী তাঁকে বলেছিলেন, ‘‘তুই চেয়ারম্যান হতে পারিসনি বলে অভিযোগ করছিস।’’
দলীয় সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, ধীমানবাবুর প্রার্থিপদ আটকাতে স্মারকলিপিও দেওয়া হয়েছিল দলের ঊর্ধ্বতন নেতৃত্বের কাছে। যদিও মুখ্যমন্ত্রীর ‘স্নেহধন্য’ ফের টিকিট পাওয়া তাতে আটকায়নি ধীমানবাবুর। দলের মধ্যে কানাঘুষো শোনা যাচ্ছে, এ বার প্রচারে সমীরবাবুর অনুগামীরা আন্তরিক ভাবে প্রচারে ঘা ঘামাচ্ছেন না। যদিও গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন দুই নেতাই। সমীরবাবুর কথায়, ‘‘আমাদের মধ্যে কোনও কোন্দল নেই। গোটাটাই বিরোধীদের অপপ্রচার। আমরা সকলে মিলেই প্রচারে ঝাঁপিয়ে পড়েছি। কোনও ভুল বোঝাবুঝি নেই।’’ ধীমানবাবুও বলেন, ‘‘সকলেই একজোট হয়ে প্রচারের ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। কোনও কোন্দল নেই।’’
অশোকনগরের এ বারের জোট প্রার্থী সিপিএমের সত্যসেবী কর বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী মন্তব্যটি মোটেই হালকা নয়। ওটা হল আর্তনাদ। গোটা রাজ্যের মতো অশোকনগরেও শাসকদলের কোন্দলের জেরে বহু তৃণমূল কর্মী-সমর্থক আমাদের সঙ্গে চলে এসেছেন।’’
প্রসঙ্গত, এ দিন হাড়োয়াতেও দলীয় প্রার্থী নুরুল ইসলামের হয়ে প্রচার সেরেছেন মমতা।