বীরপাড়ার সভায় দিদি-র সঙ্গে হাত মেলানোরে ব্যস্ততা। ছবি: রাজকুমার মোদক।
সভা চলাকালীন বিবাদমান দুই নেতাকে মঞ্চের সামনে ডেকে এবং সভার শেষে প্রচার কমিটি গড়ে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব সামাল দেওয়ার চেষ্টা করলেন তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
বৃহস্পতিবার ময়নাগুড়ির চূড়াভান্ডারের প্রচার সভায় প্রার্থী অনন্তদেব অধিকারীর সঙ্গে মঞ্চের সামনে শশাঙ্ক বাসুনিয়াকে ডেকে নিয়ে একসঙ্গে সকলে মিলে কাজ করতে বলে গেলেন তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়. সভার শেষে জেলার সাত বিধানসভার জন্য পৃথক প্রচার কমিটি গড়ে দলের সাংসদকে মাথায় বসানোর নির্দেশও দিলেন তিনি।
এ দিনের সভায় ময়নাগুড়িতে দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব ঠেকাতে কী বার্তা নেত্রী দেন, তা নিয়ে উৎসুক ছিলেন তৃণূমূলের নেতা-কর্মীদের অনেকেই। দু’হাজার এগারো সালে জেতা ময়নাগুড়ির আরএসপি বিধায়ক তৃণমূলে যোগ দিয়েছিল গত রাজ্যসভা ভোটের সময়। পরে তিনি তৃণমূলের টিকিটে উপনির্বাচনেও জেতেন। যদিও, এ বারের বিধানসভায় দল যাতে ফের তাঁকে প্রার্থী না করে তার দাবিতে তৃণমূলেরই একাংশ কর্মী সমর্থক পতাকা ব্যানার নিয়ে মিছিল করেছিল। অভিযোগ উঠেছিল ময়নাগুড়ির ব্লক সভাপতি শশাঙ্ক বাসুনিয়ার কর্মী সমর্থকরাই সেই মিছিল করেছিলেন। শশাঙ্কবাবুর ছেলেও ময়নাগুড়ির টিকিটের দাবিদার ছিলেন বলে তৃণমূলের একাংশ নেতা-কর্মীর দাবি। অনন্তবাবু প্রার্থী হওয়ার পরে, দুই নেতাকে একসঙ্গে বিশেষ দেখাও যায়নি। এ দিন সভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সব প্রার্থীদের পরিচয় করিয়ে দেওয়ার পরে, মঞ্চে থাকা জনপ্রতিনিধিদেরও সামনে ডেকে নেন। জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে ডাক পড়ে শশাঙ্কবাবুরও। কয়েকজনের নাম বলার পরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে মাইকে বলতে শোনা যায়, ‘‘বাসুনিয়া এসো। সবাই মিলে আমাদের কাজ করতে হবে।’’
নেত্রীর মুখে এই কথা শুনে মঞ্চের সামনে ভিড় করে থাকা ময়নাগুড়ির তৃণমূল নেতা-কর্মীরা হাততালিও দিয়েছেন। তবে নেত্রীর বার্তায় কতটা কাজ হবে, তা নিয়ে ধন্ধ রয়েছে তৃণমূল কর্মীদের অনেকেরই।
তৃণমূল সূত্রের খবর, প্রায় ৪৫ মিনিট বক্তৃতার শেষে মঞ্চ থেকে নেমে দলের নেতাদের ডেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁদের বলেছেন ময়নাগুড়ি আসন জিততেই হবে। মঞ্চের নীচে ফের সকলকে এক সঙ্গে চলার জন্য সকলকে মিলে কাজ করার কথা বলেছেন। সে সময় নেত্রীর সঙ্গে ছিলেন জলপাইগুড়ি জেলা তৃণমূল সভাপতি সৌরভ চক্রবর্তী, জেলা যুব তৃণমূল সভাপতি সৈকত চট্টোপাধ্যায়, জলপাইগুড়ির সাংসদ বিজয় চন্দ্র বর্মন সহ অন্য নেতারা.
ময়নাগুড়ির মতো জলপাইগুড়ি বিধানসভাতেও দলের প্রার্থীর প্রচারের ভার কোন গোষ্ঠীর ওপর থাকবে তা নিয়ে প্রকাশ্যে মতবিরোধ চলে আসে। জেলা যুব সভাপতি সৈকতবাবু সাংবাদিক বৈঠক করে দাবি করেন, দলের প্রার্থীর হয়ে প্রচার চালানোর দায়িত্ব যুব সংগঠনের উপরেই। তারপরই সৌরভবাবু সাংবাদিক বৈঠক করে জানিয়ে দেন, দলের নিয়ম অনুযায়ী ব্লক সভাপতি সহ অন্য পদাধিকারীরা প্রচারের খুঁটিনাটি ঠিক করবেন। তৃণমূল সূত্রের খবর, এই খবরও দলের শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে পৌঁছেছে। সে কারণেই মুখ্যমন্ত্রী এ দিন জলপাইগুড়ি জেলার সাত বিধানসভা কেন্দ্রের নির্বাচনী প্রচার কমিটি গড়ে সাংসদ বিজয়চন্দ্র বর্মনকে চেয়ারম্যান করার নির্দেশ দিয়েছেন। আলিপুরদুয়ার জেলার প্রচার কমিটির চেয়ারম্যান করা হয়েছে মোহন শর্মাকে। জেলা সভাপতি সৌরভবাবু বলেন, ‘‘দলনেত্রী দুই জেলার প্রচার কমিটি গড়ার জন্য আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন। খুব শীঘ্রই সেই কমিটি কাজ শুরু করবে। এর ফলে সুসংহত ভাবে প্রচার চালানো সম্ভব হবে।’’
বক্তৃতায় সকলে মিলে এক সঙ্গে কাজ করার কথা বলা অথবা প্রচার কমিটি গড়ে দেওয়া হলেও ভোটের মাঠে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব কতটা সামলানো যাবে তা নিয়ে অবশ্য তৃণমূলের সাধারণ কর্মী-সমর্থকদের অনেকেরই সংশয় কাটছে না।