সভার আগেই দলত্যাগ

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শিলিগুড়িতে জনসভার কয়েক ঘণ্টা আগে ভাঙন ধরল দার্জিলিং জেলা তৃণমূলে। সোমবার সকালে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী এবং রাজ্যের দায়িত্বপ্রাপ্ত এআইসিসি-র সাধারণ সম্পাদক সিপি জোশীর উপস্থিতিতে কংগ্রেসে যোগ দিলেন তৃণমূলের অলোক চক্রবর্তী, জ্যোতি তিরকে-সহ সাত জন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ১২ এপ্রিল ২০১৬ ০১:৩৭
Share:

অধীরের উপস্থিতিতে কংগ্রেসে যোগদান। — নিজস্ব চিত্র

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শিলিগুড়িতে জনসভার কয়েক ঘণ্টা আগে ভাঙন ধরল দার্জিলিং জেলা তৃণমূলে। সোমবার সকালে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী এবং রাজ্যের দায়িত্বপ্রাপ্ত এআইসিসি-র সাধারণ সম্পাদক সিপি জোশীর উপস্থিতিতে কংগ্রেসে যোগ দিলেন তৃণমূলের অলোক চক্রবর্তী, জ্যোতি তিরকে-সহ সাত জন। উত্তরবঙ্গের চা বলয়ে পরিচিত নাম অলোকবাবু জেলা তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি ছিলেন। ভাইচুং ভুটিয়ার নিবার্চনী কমিটির অন্যতম অন্যতম পরামর্শদাতাও ছিলেন তিনি। মহকুমা পরিষদের প্রাক্তন সভাধিপতি জ্যোতি তিরকে জেলা মহিলা তৃণমূলের সভানেত্রী ছিলেন। এ ছাড়াও নকশালবাড়ি, ফাঁসিদেওয়া মিলিয়ে পাঁচ জন ব্লক তৃণমূল এবং শ্রমিক নেতা দল ছাড়লেন। ভোটের আগে দল ভাঙনে অস্বস্তি বাড়ল তৃণমূলে।

Advertisement

জেলা কংগ্রেস অফিসে দলবদলের পর প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীরবাবু বলেন, ‘‘শিলিগুড়ি থেকে তৃণমূল হঠানোর অভিযান শুরু হয়েছে। এ বার সেই শিলিগুড়ি থেকে তৃণমূলে ভাঙন শুরু হল। ধীরে ধীরে তা রাজ্যে ছড়িয়ে পড়বে। আমাদের সঙ্গে আরও অনেকে যোগাযোগ করেছেন। এ দিন যাঁরা দলে এসেছেন, সকলকে যোগ্য সম্মান ও মর্যাদা দেওয়া হবে।’’

অলোকবাবু এবং জ্যোতিদেবী দু’জনেই শাসক দলের বড় নেতা ছিলেন। অলোকবাবু তিন বছর আগেও আইএনটিইউসি-র কেন্দ্র এবং রাজ্য কমিটির পদে ছিলেন। সম্প্রতি ফের তিনি কেন্দ্রীয় কমিটিতে এসেছেন। মূলত চা বাগান শ্রমিক সংগঠনের সঙ্গে জড়িত তিনি। এ ছাড়াও বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা, বাণিজ্যকর-সহ বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের সঙ্গে জড়িত। এক সময়কার সিপিএম নেত্রী জ্যোতিদেবী মহকুমা পরিষদের প্রথমে সহকারী সভাধিপতি ছিলেন। পরে তৃণমূলে যোগ দিয়ে সভাধিপতিও হন। তাঁদের সঙ্গে বিধাননগরের তৃণমূল নেতা সূর্যশীল শর্মা, ফাঁসিদেওয়া পঞ্চায়েত সমিতির প্রাক্তন কর্মাধ্যক্ষ অলোক ঘোষ, নকশালবাড়ি ব্লকের তৃণমূল নেতা নদীন রায়, শ্রমিক নেতা বিশ্বজিৎ বসু এবং বিদ্যুৎ বণ্টন কোম্পানির শ্রমিক সংগঠনের প্রবীণ নেতা অরূপ বসু কংগ্রেসে যোগ দিয়েছেন।

Advertisement

দলীয় সূত্রের খবর, গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে ফাঁসিদেওয়া ব্লকের দায়িত্ব ছিলেন অলোকবাবুই। সেখানেই পরিষদের ৩টির মধ্যে ২টি আসন জেতে তৃণমূল। তার পরে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব’কে সরিয়ে নতুন জেলা সভাপতি হওয়ার দৌড়েও তাঁর নাম ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত শিকে ছেঁড়েনি। সভাপতি হন পুরসভার কাউন্সিলর রঞ্জন সরকার। এর পরেই বিভিন্ন বিষয়ে দলের নেতাদের সঙ্গে অলোকবাবুর মতানৈক্য সামনে আসে। পাশাপাশি, আদিবাসী নেত্রী জ্যোতিদেবীকে দলের মহিলা শাখার মাথায় তৃণমূল নেত্রী বসালেও, তাঁর অভিযোগ ছিল, সংগঠনের কিছু সদস্যর জন্য কাজ করতে পারছিলেন না। মাঝে তিনি পদ থেকে ইস্তফাও দেন। পরে নেত্রীর নির্দেশে ফের কাজ শুরু করেন।

অলোকবাবু বলেন, ‘‘তিন বছরে সাঙ্ঘাতিক অভিজ্ঞতা হল। তৃণমূল নেত্রীর উন্নয়ন, কাজের নানা কথা শুনে তৃণমূলে গিয়েছিলাম। কিন্তু নেত্রী চাইলেও বাকিরা কী চান, তা বুঝতে বুঝতে সময় চলে যাচ্ছিল। আর দেরি না করে, ঘরে বা আমার আদি বাড়িতে ফিরে এলাম।’’ আর জ্যোতিদেবী বলেন, ‘‘ও দলে সম্মান নেই। সব কিছুই একদল লোক ঠিক করে দেন। কারও কথা শোনা হয় না। মাঝে পদ থেকে ইস্তফাও দিতে চেয়েছিলাম। দিদিই ফের কাজ করতে বলেন। কিন্তু পরে একই জিনিস শুরু হল। তাই আর না।’’ আর ব্লক স্তরের নেতাদের হয়ে বিধাননগরের প্রবীণ নেতা সূর্যবাবু বলেছেন, ‘‘ব্লক স্তরে আমরা দীর্ঘ দিন ধরে তৃণমূল করছি। কিন্তু এখন দলের যে সব লোক ঢুকেছে, তা ভাবা যায় না। ব্লকে ব্লকে গরু পাচার, তোলাবাজি, আফিম, স্পিরিট কী না চলছে। মান, সম্মান নিয়ে ও দলে আর থাকা যাবে না।’’

আগামী রবিবার শিলিগুড়ি-সহ উত্তরবঙ্গের অধিকাংশ আসনে ভোট গ্রহণ। তার উপরে এদিনই বিকালে প্রচারে মুখ্যমন্ত্রী শিলিগুড়ি আসেন। তার আগে সকালে দলবদলে অস্বস্তি বাড়ে শাসক দলের অন্দরে। দলের জেলা সভাপতি রঞ্জনবাবু বলেন, ‘‘ওঁরা স্বেচ্ছায় আমাদের দলে ছিলেন। স্বেচ্ছায় দল ছেড়েছেন। আমাদের কিছু জানাননি। তবে দলে প্রভাব পড়বে না। আর ওঁরা যা বলছেন, সেগুলির কোনও ভিত্তি নেই। দল ছাড়লে অনেকে অনেক কথাই বলে।’’ রঞ্জনবাবু জানান, প্রকাশ্যে কংগ্রেস, সিপিএমে জোটে যাঁরা খুব স্বচ্ছন্দ্য তাঁরা তো আর এখন তৃণমূলে থাকতে পারবেন না। ওঁরা খুব ভাল থাকুন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন