পুলিশের ঘুষের পিছনে আঁতাঁতই দেখছে বিরোধীরা

নারদ তদন্ত নিয়ে মোদী-দিদি আঁতাঁতের অভিযোগে এমনিতেই সরগরম রাজ্য রাজনীতি। বিজেপি নেতা রাহুল সিংহের বিরুদ্ধে পুলিশের দুই কর্মীর ‘অপারেশন’-এর পরে সোমবার সেই অভিযোগই আরও জোরালো ভাবে তুললেন বিরোধীরা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ মার্চ ২০১৬ ০৪:২৩
Share:

নারদ তদন্ত নিয়ে মোদী-দিদি আঁতাঁতের অভিযোগে এমনিতেই সরগরম রাজ্য রাজনীতি। বিজেপি নেতা রাহুল সিংহের বিরুদ্ধে পুলিশের দুই কর্মীর ‘অপারেশন’-এর পরে সোমবার সেই অভিযোগই আরও জোরালো ভাবে তুললেন বিরোধীরা।

Advertisement

রবিবার নারদ প্রসঙ্গে নরেন্দ্র মোদী যখন দিদিকে ঝাঁঝালো আক্রমণ শাণাচ্ছেন, তৃণমূল নেতৃত্ব জানিয়েছিলেন, সবুর করুন। সোমবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জবাব দেবেন। কিন্তু কোথায় কী! তৃণমূলকেই এ দিন হতাশ করেছেন তৃণমূলনেত্রী! পুরুলিয়ায় জনসভা মঞ্চের এ মাথা থেকে ওমাথা হাঁটতে হাঁটতে কেন্দ্রের বঞ্চনার প্রসঙ্গ বার কয়েক তুলেছেন বটে মমতা, কিন্তু অতি সাদামাটা সেই আক্রমণে মোদীর বিরুদ্ধে পুরনো ঝাঁঝ উধাও! মোদীর কোমরে দড়ি পরানোর হুমকি দিয়ে যেমনটা লোকসভা ভোটের সময় করেছিলেন।

কেন এমন করলেন মমতা? তৃণমূলের একটি অংশের ব্যাখ্যা, সারদা থেকে নারদ— সব মিলিয়ে এতটা চাপে রয়েছে দল, যে এখন আগের মতো মোদীর বিরুদ্ধে সুর চড়ানো কঠিন নেত্রীর। কারণ, এই সব তদন্তের সুতোই তো এখন কেন্দ্রের হাতে। দলের অন্দরে আর একটি যুক্তিও উঠে আসছে। তা হল— সোমবার পুরুলিয়ার মঞ্চে যখন মমতা উঠেছেন, ততক্ষণে অন্য এক ‘অপারেশন’ নিয়ে সরগরম রাজ্য! রাহুল সিংহ অভিযোগ করেছেন, তাঁকে ঘুষ দিতে গিয়ে ধরা পড়েছেন দুই পুলিশ কর্মী! আর সে জন্য শাসক দলের বিরুদ্ধেই আঙুল তুলেছেন তিনি। পুলিশ দফতর মুখ্যমন্ত্রীর অধীনে। হয়তো সে কারণেই দমে গিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী।

Advertisement

কিন্তু বিরোধীদের এই যুক্তি হজম হচ্ছে না। বরং তাঁরা মনে করেছেন, গোটা ঘটনার মধ্যে রহস্য রয়েছে।

সিপিএম নেতারা তাই দাবি করেছেন, নারদ কাণ্ডের যেমন ফৌজদারি তদন্ত হওয়া উচিত, তেমনই আজকের ঘটনা নিয়েও তদন্ত করুক সরকার। সিপিএম নেতা মহম্মদ সেলিম বলেন, ‘‘ঘটনা খুবই রহস্যজনক! তা ছাড়া এটা তো কোনও স্টিং অপারেশন নয়। ঘুষ-প্রস্তাব মাত্র। এর মধ্যে বিজেপিকে ফায়দা পাইয়ে দেওয়ার চেষ্টা যে নেই, তাই বা কে বলতে পারে? নারদ কাণ্ড থেকে দৃষ্টি ঘোরানোর জন্য এমন কাণ্ড ঘটানো হয়েছে বলে আমাদের মনে হচ্ছে।’’

বিজেপি-তৃণমূল আঁতাঁতের গন্ধ পাচ্ছেন কংগ্রেস নেতারাও। অধীর চৌধুরী বলেন, ‘‘রবিবার প্রধানমন্ত্রী তৃণমূলের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ করলেন। তার পর সোমবারই সাজানো হুল কাণ্ডের মাধ্যমে দেখানো হল, কেন্দ্রের শাসক দল রাজ্য সরকারের ষড়যন্ত্রের শিকার? রাহুল সিংহ সৎ নেতা। যার অর্থ, ভোট বাজারে ‘বুস্টার ডোজ’ দেওয়া হল বিজেপিকে! যাতে বিজেপি ভোট বাড়িয়ে তৃণমূলকে সাহায্য করতে পারে।’’

অধীরের কথায়, ‘‘আমার তো মনে হচ্ছে এখানেও দিদিভাই-মোদীভাই আঁতাঁত রয়েছে! এক স্বৈরাচারী নেতার সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন আর এক স্বৈরাচারী নেত্রী!’’ নারদ তদন্তেও প্রধানমন্ত্রী-মুখ্যমন্ত্রী সমঝোতা নিয়ে সোমবার প্রশ্নের মুখে পড়তে হয় রাজ্য বিজেপি নেতৃত্বকে। রবিবার খড়্গপুরের সভায় সারদা থেকে ‘নারদা’ নিয়ে সরব হয়েছিলেন মোদী। এ দিন রাহুল সিংহকে প্রশ্ন করা হয়, সারদা তদন্ত হঠাৎ গতি হারাল কেন? কেনই বা নারদ কাণ্ডে তদন্তের নির্দেশ দিচ্ছে না কেন্দ্র? উত্তরাখণ্ডে বিধায়ক ঘুষ কাণ্ডের সিডি যদি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক পরীক্ষা করাতে পারে, তা হলে নারদা নিয়ে তেমন তদন্ত করছে না কেন? নারদ-কাণ্ড নিয়ে এথিক্স কমিটির তদন্তে গতি নেই কেন, সে প্রশ্নও করা হয় রাহুলকে। এবং কোনও প্রশ্নেরই জোরালো যুক্তিযুক্ত জবাব দিতে পারেননি রাহুল! এমনকী তাঁর এ-ও দাবি, উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হরিশ রাওয়াত নিজেই তাঁর বিরুদ্ধে ফাঁস হওয়া সিডি পরীক্ষার দাবি জানিয়েছিলেন।

নারদ নিয়ে কেন্দ্রের উদাসীনতার জবাব দিতে গিয়ে বিজেপি হিমশিম খেয়েছে। ল্যাজেগোবরে তৃণমূলও! দু’দিন আগে নারদ-কাণ্ড নিয়ে দলকেই হুল বিঁধিয়েছিলেন দীনেশ ত্রিবেদী। সোমবার আবার সুজাপুরের তৃণমূল প্রার্থী আবু নাসের খান চৌধুরী তথা লেবুবাবু বলেন, ‘‘নারদ কাণ্ডের তদন্ত হওয়া উচিত।’’ এই পরিস্থিতিতে মরিয়া তৃণমূল নেতৃত্ব এ দিন পাল্টা হিসেবে সিপিএম রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্রের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছেন। দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সূর্যবাবুরা মাটি, ট্রেজারি কেলেঙ্কারির কথা মনে রাখেন না! মনে রাখেন না, তাঁর স্ত্রী-র এনজিও কেলেঙ্কারির কথা! আমাদের দিকে একটা আঙুল তুললে ওঁদের দিকেও তিনটে আঙুল উঠবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন