গোষ্ঠীদ্বন্দ্বেই কি মজুত বোমা

বৈষ্ণবনগরে ছ’জনের মৃত্যুর পর উঠছে প্রশ্ন

নব নির্মিত বাড়ির মধ্যে বোমা ফেটে মৃত্যু হল তৃণমূলের এক গ্রামপঞ্চায়েত সদস্য সহ চারজনের। এই ঘটনায় আরও তিনজন আহত হয়েছেন বলে স্থানীয়দের দাবি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মালদহ শেষ আপডেট: ০৩ মে ২০১৬ ০২:২৯
Share:

মালদহ মেডিক্যালে আনা হচ্ছে বিস্ফোরণে আহত বম্ব স্কোয়াডের কনস্টেবল সুব্রত চৌধুরীকে। পরে তিনি মারা যান। ছবি: মনোজ মুখোপাধ্যায়

নব নির্মিত বাড়ির মধ্যে বোমা ফেটে মৃত্যু হল তৃণমূলের এক গ্রামপঞ্চায়েত সদস্য সহ চারজনের। এই ঘটনায় আরও তিনজন আহত হয়েছেন বলে স্থানীয়দের দাবি। রবিবার গভীর রাতে মালদহের বৈষ্ণবনগর থানার ভগবানপুর গ্রামপঞ্চায়েতের ঘেরা মহব্বতপুর গ্রামে বোমা বিষ্ফোরণে নবনির্মিত ওই বাড়িটির একাংশ ভেঙে গুড়িয়ে গিয়েছে।

Advertisement

পুলিশ জানিয়েছে, মৃত তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্যের নাম কালাম শেখ(৩৮)। তিনি পার্শ্ববতী কুম্ভীরা গ্রামপঞ্চায়েতের জয়েনপুরের বাসিন্দা। বাকিরা হল সিমু শেখ(২৩), সুকু শেখ(৪৫) ও ইসরাইল শেখ(৪২)। তাঁদের প্রত্যেকের বাড়ি জয়েনপুর এলাকায়। মৃতদের মধ্যে সিমু ও সুকু কাকা ভাইপো। সিমু সাউথ মালদহ কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিল। এদিনের ঘটনায় আহতদের মধ্যে সাদাম শেখ নামে এক যুবক আশঙ্কাজনক অবস্থায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন মালদহ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে।

বোমা বাঁধার ঘটনায় দলের নাম জড়িয়ে যাওয়ায় অস্বস্তিতে পড়েছে তৃণমূল নেতৃত্ব। তাঁদের দাবি, কংগ্রেস আশ্রিত দুষ্কৃতীদের ছোঁড়া বোমার আঘাতে ঘটনাটি ঘটেছে। যদিও অভিযোগ অস্বীকার করে পাল্টা তৃণমূলের সমালোচনা করেছে জেলা কংগ্রেস নেতৃত্ব। এই বিষয়ে মালদহের পুলিশ সুপার সৈয়দ ওয়াকার রেজা বলেন, ‘‘প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে বোমা বাঁধাতে গিয়েই ঘটনাটি ঘটেছে। ঘটনায় চারজনের মৃত্যু হয়েছে এবং তিনজন আহত হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। কি কারণে বোমা বাঁধার কাজ চলছিল তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’

Advertisement

জানা গিয়েছে, এলাকায় প্রভাব বিস্তার নিয়ে বৈষ্ণবনগরের ভগবানপুর ও কুম্ভীরা গ্রামপঞ্চায়েতে দীর্ঘদিন ধরে দুই গোষ্ঠীর মধ্যে লড়াই রয়েছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই দুই গোষ্ঠীই তৃণমূল সমর্থিত। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ভগবানপুর গ্রামপঞ্চায়েতের ঘেরা মহব্বতপুরের বাসিন্দা গিয়াসু শেখের বাড়িতে এ দিন বোমা বাঁধার কাজ চলছিল। গিয়াসু দিন মজুরের কাজ করেন। সপ্তাহ খানেক ধরে তিনি ধান কাটার কাজে জেলার বাইরে গিয়েছেন। বাড়িতে তাঁর স্ত্রী ফয়িজা বিবি এক ছেলেকে নিয়ে থাকতেন। এ দিন ফয়িজা বিবিও বাড়িতে ছিলেন না বলে দাবি। সেই সুযোগে কুম্ভীরা গ্রামপঞ্চায়েতের জয়েনপুরের বাসিন্দা তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্য কালাম শেখের নেতৃত্বে ওই বাড়িতে বোমা বাঁধার কাজ চলছিল। তাঁর সঙ্গে ছিলেন আরও সাত জন তৃণমূল সমর্থক। গিয়াসুর বাড়ি থেকে কালামের বাড়ি ১০০ মিটার দুরে।

গভীর রাতে আচমকা গ্রামবাসীরা বিস্ফোরনের শব্দ পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে গিয়ে দেখেন ওই নব নির্মিত বাড়ি়টি ভেঙে লন্ডভন্ড হয়ে রয়েছে। আর জখম অবস্থায় সাতজন মাটিতে লুটিয়ে পড়ে রয়েছে। স্থানীয়েরা তাঁদের উদ্ধার করে নিয়ে যান কুম্ভীরা প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে। তবে প্রত্যেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক থাকায় রাতেই তাদের মালদহ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। হাসপাতালেই মৃত্যু হয় তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্য কালাম শেখ সহ তিনজনের। বাকিরা চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

এদিন সকাল থেকেই ঘটনাস্থলে ডিএসপি দিলীপ হাজার নেতৃত্বে অভিযান শুরু হয়। পরে ঘটনাস্থলে যান পুলিশ সুপার সৈয়দ ওয়াকার রেজা। তিনি ঘটনাস্থল ঘুরে দেখার সময় উদ্ধার করে বস্তা ভর্তি বোমা তৈরির দুই ধরনের বিষ্ফোরক। এছাড়া ঘটনাস্থল থেকেই উদ্ধার হয় প্লাস্টিক বলের কিছু অংশ। এছাড়া গিয়াসু শেখের বাড়ির ১০ মিটারের মধ্যে খড়ের গাদা থেকে উদ্ধার হয় আরও দশটি বল বোমা। পরে সিআইডির বম্ব স্কোয়াডের কর্মীরা ঘটনাস্থলে যান।

তাঁরা বোমা গুলি নিষ্ক্রিয় করার সময় ফের বিস্ফোরণ হয়। উপযুক্ত সতর্কতা না নেওয়ায় গুরুতর ভাবে জখম হন সিআইডির দুই এএসআই বিষুদানন্দ মিশ্র, মনিরুজ্জামান শেখ ও কনস্টেবল সুব্রত চৌধুরী। রাতে মৃত্যু হয় বিষুদানন্দবাবু ও সুব্রতবাবুর। এই বিস্ফোরণের ঘটনায় তুঙ্গে উঠেছে রাজনৈতিক টানাপড়েন। তৃণমূলের জেলা সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, ‘‘স্থানীয় সূত্রে জানতে পেরেছি কংগ্রেস আশ্রিত দুষ্কৃতীরা এই ঘটনাটি ঘটিয়েছে।’’ তৃণমূলের পাল্টা সমালোচনা করেছেন কংগ্রেসের জেলা সভানেত্রী মৌসম নূর। তিনি বলেন, ‘‘তৃণমূল কর্মীরা ঘরে ঘরে বোমা তৈরির কাজ করে। এ দিনের ঘটনায় তা স্পষ্ট। পুলিশ নিয়ম করে ওই এলাকার তৃণমূল কর্মীদের বাড়িতে তল্লাশি করলে প্রচুর বোমা উদ্ধার হবে।’’ পুলিশ সুপার সৈয়দ ওয়াকার রেজা জানান, ওই এলাকায় নিয়মিত তল্লাশি চালানো হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন