খাসতালুকেই থামল রথ, হাতছাড়া তিন

দলনেত্রীর সামনেই জোর গলায় দাবি করেছিলেন জেলায় ১৬-০ উপহার দেবেন তিনি। অধিকারী গড়ে সে ফল এমন কিছু অপ্রত্যাশিতও ছিল না। কিন্তু হল না। ১৬ আসনে জয়লাভ তো দূর অস্ত্। সাংসদ শুভেন্দু অধিকারীর সংসদ এলাকার মধ্যে হলদিয়া, তমলুক ও পূর্ব পাঁশকুড়ার মতো তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বিধানসভা হারিয়েছে তৃণমূল। গড় রক্ষায় ব্যর্থ শুভেন্দু।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২০ মে ২০১৬ ০১:৩১
Share:

কোলাঘাটে গণনাকেন্দ্রের বাইরে। ছবি: পার্থপ্রতিম দাস।

দলনেত্রীর সামনেই জোর গলায় দাবি করেছিলেন জেলায় ১৬-০ উপহার দেবেন তিনি। অধিকারী গড়ে সে ফল এমন কিছু অপ্রত্যাশিতও ছিল না। কিন্তু হল না। ১৬ আসনে জয়লাভ তো দূর অস্ত্। সাংসদ শুভেন্দু অধিকারীর সংসদ এলাকার মধ্যে হলদিয়া, তমলুক ও পূর্ব পাঁশকুড়ার মতো তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বিধানসভা হারিয়েছে তৃণমূল। গড় রক্ষায় ব্যর্থ শুভেন্দু।

Advertisement

যদিও দিদির দেওয়া দায়িত্ব তিনি পালন করেছেন। ‘অধীরগড়’-এ ফাটল ধরিয়ে মুর্শিদাবাদ থেকে ছিনিয়ে নিয়েছেন তিনটি অতিরিক্ত আসন।

বৃহস্পতিবার সকালে ভোট গণনার শুরু থেকেই হলদিয়া বিধানসভা কেন্দ্রে ক্রমশ পিছোতে শুরু করেন তৃণমূল প্রার্থী তথা পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পরিষদের সভাধিপতি মধুরিমা মণ্ডল। শেষ পর্যন্ত সিপিএম প্রার্থী তাপসী মণ্ডলের কাছে পরাজিত হন ২১৪৯৩ ভোটে। গত বিধানসভা ভোটে এই কেন্দ্রে জয়ী হয়েছিলেন তৃণমূলের শিউলি সাহা। শুভেন্দুর দাবি মেনেই শিউলিকে এ বার হলদিয়া থেকে সরিয়ে পশ্চিম মেদিনীপুরের কেশপুরে প্রার্থী করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখান থেকে শিউলি এ বার এক লক্ষের বেশি ভোটে জিতেছেন। আর হলদিয়ায় পরাজিত হয়েছেন শুভেন্দুর পছন্দের প্রার্থী মধুরিমা।

Advertisement

একই ভাবে শুভেন্দুর ইচ্ছায় জেলা সদর তমলুকের বিদায়ী বিধায়ক তথা রাজ্যের জলসম্পদ মন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্রকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। তিনি পশ্চিম মেদিনীপুরের পিংলা থেকে জয়ী হয়েছেন। তৃণমূল হারিয়েছে তমলুক বিধানসভাটি। দলের হেভিওয়েট নেতা নির্বেদ রায় হেরেছেন সিপিআই প্রার্থী অশোক দিন্দার কাছে। তবে মাত্র ৫২০ ভোটে।

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের অনেকেই বলছেন, দলে বিরোধী গোষ্ঠীর বিধায়কদের সরিয়ে দিয়ে প্রাথমিকভাবে জেলায় নিজের আধিপত্য বজায় রেখেছিলেন শুভেন্দু। কিন্তু শেষমেশ ওই দু’টি আসনের পরাজয় আসলে তাঁরই।

এই দু’টি কেন্দ্র ছাড়াও জেলার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ শিল্পাঞ্চল কোলাঘাট এলাকার পূর্ব পাঁশকুড়া বিধানসভায় পরাজিত হয়েছে তৃণমূলের বিদায়ী বিধায়ক বিপ্লব রায়চৌধুরী। শুভেন্দুর নিজের জয়ের ব্যবধানও কমেছে। ২০১৪ লোকসভা নির্বাচনে নন্দীগ্রাম বিধানসভা কেন্দ্রে এগিয়েছিলেন ৮৭৬৮৩ ভোটে। সেখানে এ বার তাঁর জয়ের ব্যবধান ৮১২৩০।

রাজ্য জুড়ে তৃণমূলের দাপট বেড়েছে গত বিধানসভা এবং লোকসভা নির্বাচনের নিরিখেও। কিন্তু অধিকারীগড়ে যে ভাবে তৃণমূল গুরুত্বপূর্ণ তিনটি আসন খুইয়েছে তাতে শুভেন্দুর আধিপত্য নিয়ে প্রশ্ন উঠে গেল। এ দিন সকাল থেকেই চাপা উদ্বেগে ছিলেন শুভেন্দু অধিকারী। বারবার ফোন করে খোঁজ নিয়েছেন কেমন হচ্ছে ফল। তবে গণনাকেন্দ্রে বা অন্য কোথাও তাঁকে দেখা যায়নি।

হলদিয়া গণনাকেন্দ্রের বাইরে সুদর্শন ঘোষদস্তিদার ও শুভেন্দু অধিকারী। —নিজস্ব চিত্র

বেলা সাড়ে ৩টে নাগাদ হলদিয়ার বাসুদেবপুর গণনাকেন্দ্রে যান তিনি। জয়ের শংসাপত্র গ্রহণ করেন। তারপর সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বলেন, ‘‘কেন এমন হার হল, তা খতিয়ে দেখা হবে। আগামী ছ’মাসের মধ্যেই আবার নির্বাচন। কারণ আমাকে তো সাংসদ পদ ছাড়তেই হবে। তখন সব মিলিয়ে দেখতে হবে।’’ তবে হলদিয়া প্রসঙ্গে শুভেন্দু টেনে আনেন শিল্প প্রসঙ্গ। তাঁর দাবি, ‘‘হলদিয়ার মানুষের হয়তো অন্য কিছু প্রত্যাশা ছিল। তবে অন্তর্ঘাতও হয়েছে। আগামী ছ’মাসে সাংগঠনিক রদবদল করে পদক্ষেপ করা হবে।’’

শুভেন্দু জানাতে ভোলেননি মুর্শিদাবাদে দলের সাফল্যের কথা। তিনি জানান, ১৮ শতাংশ থেকে বেড়ে তৃণমূলের ভোট হয়েছে ৩৪ শতাংশ। তাঁর দাবি, ‘‘দিদি আমাকে যে দায়িত্ব দিয়েছিলেন, সে দায়িত্ব অনেকটাই সাফল্যের সঙ্গে পালন করেছি।’’

প্রসঙ্গত, ২০১১ বিধানসভা নির্বাচনে গোটা মুর্শিদাবাদে একটিমাত্র আসন ছিল তৃণমূলের। সাগরদিঘি থেকে জিতেছিলেন সুব্রত সাহা। এ বার সুব্রত সাহার আসনটি ধরে রাখতে পেরেছে দল। সঙ্গে যোগ হয়েছে, হরিহরপাড়া, সামশেরগঞ্জ এবং জঙ্গিপুর। সে জেলার নেতারা বলছেন, এই জয়ের পিছনে শুভেন্দু অধিকারীর ভূমিকা অনেকখানি।

হরিহরপাড়ায় তৃণমূল প্রার্থী নিয়ামত হোসেন জিতেছেন পাঁচ হাজারেরও বেশি ভোটে। সুব্রত সাহা সাগরদিঘিতে জিতেছেন, ৫২০০ ভোটে। জঙ্গিপুরে জাকির হোসেন জিতেছেন ২০,৬৩৩ ভোটে। সব থেকে বড় জয়টি বলা যায় সামশেরগঞ্জে। সেখানকার কংগ্রেস ব্লক সভাপতি আমিরুল হোসেনকে রাতারাতি প্রার্থী ঘোষণা করেন শুভেন্দু। ফলে কংগ্রেসের ভোট সহজকেটেছেন তিনি।

কিন্তু গড় রক্ষা যে হল না!

গত লোকসভা নির্বাচনে শুভেন্দু অধিকারীর কাছে পরাজিত সিপিএমের ইব্রাহিম আলি এ বার জিতেছেন পূর্ব পাঁশকুড়া বিধানসভা কেন্দ্র থেকে। জয় ঘোষণার পর কোলাঘাটের গণনা কেন্দ্রে দাঁড়িয়ে ইব্রাহিম বলেন, ‘‘হলদিয়া ও কোলাঘাট জেলার দুই শিল্পাঞ্চলে তৃণমূলকে হারিয়ে মানুষ মুখ্যমন্ত্রীর শিল্পবিরোধী নীতিকে প্রত্যাখান করেছেন। শুভেন্দুবাবু জেলার মানুষকে দমিয়ে রাখার রাজনীতি করেন তাঁরও জবাব দিয়েছেন তাঁরা। আমাদের এই জয় তাই জেলাবাসীর পক্ষ থেকে তৃণমূল নেত্রী ও শুভেন্দুবাবুদের কাছে সতর্কবার্তা।’’

কোলাঘাটে গণনাকেন্দ্রের বাইরে। ছবি: পার্থপ্রতিম দাস।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন