Raj Chakraborty

বহিরাগত-ক্ষোভ কমলেও মাথায় ‘রাজমুকুট’ ওঠা নিয়ে ধোঁয়াশাই

জল যে ক্রমশ নাক ছাড়িয়ে উপরে উঠতে পারে, আঁচ করেই সেলিব্রিটি প্রার্থীর হয়ে ময়দানে নামেন দলের তাবড় নেতারা।

Advertisement

সুপ্রকাশ মণ্ডল

শেষ আপডেট: ০৮ মার্চ ২০২১ ০৭:২৮
Share:

ব্যাট-ম্যান: প্রচারে বেরিয়ে ক্রিকেট ব্যাট হাতে খেলতে নেমে পড়লেন তৃণমূল প্রার্থী রাজ চক্রবর্তী। রবিবার, ব্যারাকপুরে। ছবি: মাসুম আখতার

ব্যাট হাতে ক্রিজে নামলেন তিনি। আপাতত ওইটুকুই।

Advertisement


পিচে বাউন্স আছে কি না, তা মাপা অবশ্য এখনও বাকি। আপাতত তাঁকে ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে, দলের ফিল্ডারদের হাত গলে বিপক্ষের বল যেন সীমানা না ছাড়ায়। ফলে ব্যারাকপুরের ভোটারেরা রাজের কপালে চক্রবর্তী-লক্ষণ চিহ্ন এঁকে দিতে পারবেন কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন অমীমাংসিতই রয়ে গেল। তবে দলের নেতৃত্বের আশ্বাসে বহিরাগত প্রার্থী নিয়ে বিক্ষুব্ধদের ক্ষোভের আঁচ কিছুটা কমল বলেই মনে করছেন স্থানীয় নেতৃত্ব।


ব্যারাকপুরের তৃণমূল প্রার্থী হিসেবে চলচ্চিত্র পরিচালক রাজ চক্রবর্তীর নাম ঘোষণার পরে কার্যত বিদ্রোহ করেছিলেন এলাকার বিদায়ী পুরপ্রধান উত্তম দাস। দল তাঁদের ‘যোগ্য মনে করে না’ থেকে শুরু করে ‘আবার কোন মীরজ়াফরকে প্রার্থী করা হল’— এমন হাজারো অভিযোগ করেছিলেন তিনি। সেটা ছিল শুক্রবার।

Advertisement


রবিবার নোনাচন্দনপুকুরে উত্তমের ক্লাবেই রাজকে নিয়ে বৈঠকে বসেন পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, জেলা তৃণমূলের সভাপতি তথা খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, পর্যবেক্ষক নির্মল ঘোষ। বৈঠক শেষে উত্তমবাবু জানান, তৃণমূল এবং তিনি যেমন ছিলেন, তেমনই আছেন। থাকবেনও। তার পরেই ‘লে ছক্কা’র রাজের ব্যাট হাতে ক্রিজে গমন।


ব্যারাকপুরের বিদায়ী বিধায়ক শীলভদ্র দত্ত বর্তমানে পদ্ম-শিবিরে। এই আসনে বিজেপি তাঁকে প্রার্থী করছে না বলেই শোনা যাচ্ছে। বিজেপি এখানে স্থানীয় এক চিকিৎসককে দাঁড় করাতে চায়। গত লোকসভা ভোটে এই বিধানসভা কেন্দ্রে তৃণমূলের ফল ভাল হয়নি। এই আসন জিততে মরিয়া বিজেপি। এই অবস্থায় শক্ত লড়াই তৃণমূলের সামনে। সেই লড়াইয়ের শুরুতে প্রকাশ্যেই বেসুরে বেজে দলকে অস্বস্তিতে ফেলে দিয়েছিলেন দু’বারের পুরপ্রধান উত্তম।


জল যে ক্রমশ নাক ছাড়িয়ে উপরে উঠতে পারে, আঁচ করেই সেলিব্রিটি প্রার্থীর হয়ে ময়দানে নামেন দলের তাবড় নেতারা। ফিরহাদ এবং জ্যোতিপ্রিয় এ দিন বিকেলে রাজকে নিয়ে ব্যারাকপুরে পৌঁছন। পরিচয়-পর্ব তথা শুভেচ্ছা বিনিময়ের নামে উত্তম এবং তাঁর অনুগামীদের নিয়ে বৈঠকে বসেন। দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিনও উত্তমবাবু তাঁর ক্ষোভের কথা বলেন। তবে সুর ছিল অনেকটাই নরম।


এ দিন উত্তমবাবু দলীয় নেতৃত্বকে জানান, অতীতে শীলভদ্র দত্ত বা দীনেশ ত্রিবেদীর মতো বহিরাগতকে প্রার্থী করা হয়েছিল ব্যারাকপুরে। তাঁদের জেতাতে প্রাণপাত করেছিলেন নিচুতলার নেতা-কর্মীরা। কিন্তু অভিযোগ, জেতার পরে কেউ এলাকায় আসেননি। পরে তাঁরা পদ্মবনে ভিড়েছেন। ফের বহিরাগতকে প্রার্থী করায় তাই উত্তমেরা ক্ষোভ জানিয়েছেন। এ দিন বৈঠক শেষে রাজ অবশ্য বললেন, “ব্যারাকপুর তো আমার আর একটা বাড়ি। এখানে বহু নাটক করেছি।”


বৈঠকের পর ফিরহাদ বলেন, “রাজ অনেক বড় ব্যবধানে জিতবে। এটা অর্জুন বা অন্য কারও গড় নয়। সব মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। অর্জুন নিজের পুকুরে লম্ফঝম্ফ করা ব্যাঙ।” অর্জুন অবশ্য পাল্টা বলছেন, “ভোটের ফলই বলে দেবে, কে আসলে কী।” বৈঠকের পরে উত্তম বলেন, “তৃণমূলের জন্মলগ্ন থেকে আমরা দল করছি। ফলে নিজেদের কোনও সমস্যা থাকলে প্রকাশ্যে বলব। এটা দলীয় নেতৃত্ব মেনে নিয়েছেন। ব্যারাকপুরে দলে কোনও সমস্যা নেই।”


নতুন হলেও পোড়খাওয়া রাজনীতিকদের মতোই পরিস্থিতি সামলালেন রাজ। স্থানীয় নেতাদের ক্ষোভ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “ওঁদের ক্ষোভ তো স্বাভাবিক। প্রাণপাত করে যাঁদের তারা জেতালেন, তাঁরাই বিশ্বাসঘাতকতা করলেন। আমি তা করব না। দেখুন না..।” রাজ প্রশ্ন করলেন, ‘হবে তো’? কর্মীরা স্লোগান দিলেন—‘খেলা হবে।’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন