‘অগ্নিকন্যা’ হতে চাইছেন টিভির দ্রৌপদী

উত্তর হাওড়ার ঘিঞ্জি পথেঘাটে রাত একটায় স্টিয়ারিংয়ে রূপা গঙ্গোপাধ্যায়। দলের দেওয়া তিন দশাসই হরিয়ানভি বডিগার্ডকে তফাতে রেখে স্থানীয় ‘গাইড’কে সঙ্গে নিয়ে চলছে নৈশ-অভিযান। দিনভর তেড়েফুঁড়ে প্রচারের পরে রাত তিনটে অবধি তাঁর কেন্দ্র চেনার ‘হোমওয়ার্ক’।

Advertisement

ঋজু বসু

শেষ আপডেট: ২৪ এপ্রিল ২০১৬ ০১:০৫
Share:

নিজেই নিজের সারথি। উত্তর হাওড়ায় প্রচারে রূপা গঙ্গোপাধ্যায়। শনিবার দীপঙ্কর মজুমদারের তোলা ছবি।

গোটা মহল্লা ঘুমিয়ে পড়ার পরেও ঘুম নেই তাঁর চোখে।

Advertisement

উত্তর হাওড়ার ঘিঞ্জি পথেঘাটে রাত একটায় স্টিয়ারিংয়ে রূপা গঙ্গোপাধ্যায়। দলের দেওয়া তিন দশাসই হরিয়ানভি বডিগার্ডকে তফাতে রেখে স্থানীয় ‘গাইড’কে সঙ্গে নিয়ে চলছে নৈশ-অভিযান। দিনভর তেড়েফুঁড়ে প্রচারের পরে রাত তিনটে অবধি তাঁর কেন্দ্র চেনার ‘হোমওয়ার্ক’। ‘ক্র্যাশ কোর্স’ করার ঢঙে চিনে নিচ্ছেন সাবেক শহরের অলি-গলি-মন্দির-বাজার। পরের দিন ‘মর্নিংওয়াকার’দের পাকড়াও করে প্রচার থাকলেও রাতের ‘পড়াশোনা’য় ফাঁকি নেই। ‘‘গঙ্গাপারের এই এলাকার ‘সেবা’য় এখানেই ফ্ল্যাট কিনে থাকব আমি’’, — প্রচারে ফলাও করে বলছেন বিজেপি-প্রার্থী।

জীবনের প্রথম ভোটযুদ্ধে উত্তর হাওড়া কেন্দ্র থেকে লড়তে অবশ্য নিজেও চেয়েছিলেন রূপা। দলের স্থানীয় একটা প্রভাবশালী অংশ তাতে খুশি হতে পারেনি। গোড়ায় বিজেপি-র কর্মিসভায় সেই গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের আঁচ মালুম হয়। তবে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের ভরসা এ কুরুক্ষেত্রে ‘দ্রৌপদী’র হাত শক্ত করেছে। রূপার ‘পথের কাঁটা’রা দল থেকে বহিষ্কৃত হয়েছেন। খোদ প্রধানমন্ত্রী নিজে এ তল্লাটে সভা করেছেন। বিভিন্ন মিটিংয়ে বলা হচ্ছে, মোদীজিই রূপা-র ‘দামোদর’। আর নিজের ছক-ভাঙা কায়দায় প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন প্রার্থী।

Advertisement

তিন দশক আগের টিভি-র দ্রৌপদী তাই ফের আসরে। মাইক হাতে চোস্ত হিন্দিতে বলছেন, ‘‘আমি সেই অগ্নিকন্যা দ্রৌপদী, এ রাজ্যের দুঃশাসন ঘুচিয়ে দিতেই যাঁর জন্ম হয়েছে।’’ শুনে প্রবল হাততালি। অশিক্ষার অন্ধকার বা কলে জল না-থাকার মতো শত্রু-নিধনে
রূপার অঙ্গীকার।

গত-ভাঙা কিন্তু খাঁটি ‘ভারতীয় এক নারী’ও আবির্ভূত হচ্ছেন। গেরুয়াপাড় সাদা শাড়ি। রোড-শোয়ে নিজেই জিপ চালিয়ে যাচ্ছেন। ঘুপচি গলিতে চকিত হরিণীর ভঙ্গিতে ছুটে আশীর্বাদ চাইছেন। আবার আমজনতার মধ্যে ড্রামের তালে নাচেও তিনি স্বচ্ছন্দ। রূপা যে সেনাবাহিনীর একে-৪৭ চালিয়ে লক্ষ্যভেদ করে এসেছেন, সে-গল্পও শুনছে হাওড়াবাসী।

তবে নিজের চিত্রতারকা ইমেজকে যতটা সম্ভব দূরে সরিয়ে রাখতে চাইছেন। প্রচারের খাটুনিতে রূপা গঙ্গোপাধ্যায় বেশ রোগা হয়েছেন। সেটা বলতে যেতেই বেপরোয়া ভঙ্গি, ‘‘কী আসে-যায়! চেহারা ভাঙবে, চামড়া পুড়বে, দেখতে খারাপ লাগবে! মানুষের জন্য কাজ করতে এসেছি। ও-সব আর ভাবি না।’’ দৃঢ় স্বরে বলছেন, ‘‘যা করছি, বলছি সব বিশ্বাস থেকে করছি।’’ রূপা-শিবিরের শ্লাঘা, তাঁর প্রথম ভোটেই তৃণমূল ও জোট— দুই প্রতিপক্ষই তাঁকে প্রভূত সমীহ করছে। ক্রিকেটার লক্ষ্মীরতন শুক্লকে জেতাতে এ কেন্দ্রে প্রচারে এসেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কংগ্রেসের সন্তোষ পাঠকের জন্য রাহুল গাঁধীও সভা করে গিয়েছেন।

শিবানী সিনেমা-হলের কাছে একটি বাড়িতে রূপা এখন মাটি কামড়ে রয়েছেন। সেখানে মাছ-মাংসের প্রবেশ নিষেধ। রূপার তাতে সমস্যা নেই। মাঝে কয়েক বার বাড়ি থেকে ধোকার ডালনা, আলুপোস্ত আসছিল বটে! কিন্তু প্রবল গরমে রূপা দই-ভাতের শরণ নিয়েছেন।

দুঃশাসনদের খতম করা ইস্তক চুল খোলা রাখার শপথ নিয়েছিলেন দ্রৌপদী। ভোটের যুদ্ধে এটুকু ‘কৃচ্ছ্রসাধন’ যেন জল-ভাত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন