এক সময়ে চলত নৌকো, এখন কচুরিপানায় ভরা যমুনা

ভোটের সময়ে অতি অবশ্য মেলে রাজনৈতিক নেতানেত্রীদের প্রতিশ্রুতি। কিন্তু ভোট মিটলে পরিস্থিতি যে কে সেই। বছরের পর বছর এমনটাই দেখতে অভ্যস্ত মানুষ। খোঁজ নিল আনন্দবাজার। নাব্যতা নেই। নদীর বুকে ফুটে রয়েছে কুচুরিপানার ফুল। শ্যাওলায় ভরা জল। ভোট আসে ভোট যায়। যুমনা নদী সংস্কারের কথা ওঠে। নেতানেত্রীরা এসে সংস্কারের প্রতিশ্রুতিও দেন। কিন্তু তা আর কার্যকর হয় না।

Advertisement

সীমান্ত মৈত্র

গাইঘাটা শেষ আপডেট: ২০ এপ্রিল ২০১৬ ০৩:০৮
Share:

সংস্কারের অভাবে স্রোত হারিয়েছে নদী। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক।

নাব্যতা নেই। নদীর বুকে ফুটে রয়েছে কুচুরিপানার ফুল। শ্যাওলায় ভরা জল। ভোট আসে ভোট যায়। যুমনা নদী সংস্কারের কথা ওঠে। নেতানেত্রীরা এসে সংস্কারের প্রতিশ্রুতিও দেন। কিন্তু তা আর কার্যকর হয় না।

Advertisement

গাইঘাটার আমকোলা গ্রামের বাসিন্দা ষাটোর্ধ্ব বলরাম দেবনাথ করুণ চোখে নদীর দিকে তাকিয়ে ছিলেন। বললেন, “এই নদীর তীরেই জন্মেছি। নদীর টলটলে জলে সাঁতার কেটে বড় হয়েছি। দেখেছি জোয়ার-ভাটা খেলতে। কত নৌকা চলত এক সময়ে এই নদীতে। যাতায়াতের মূল মাধ্যম ছিল নদী। আর এখন কী হাল হয়েছে!’’

গাইঘাটা বিধানসভা এলাকায় প্রত্যেকে ভোটের আগে যমুনা নদী সংস্কারের বিষয়টি উঠে আসে। রাজনৈতিক দলগুলির প্রতিশ্রুতিতে জমে ওঠে ভোটের ময়দান। আর যমুনা মজতে মজতে ঢলে পড়ে মৃত্যুর দিকে। প্রায় পঁচিশ বছর ধরে চলছে এই পরিস্থিতি।

Advertisement

এলাকার বৃদ্ধ হরিদাস দেবনাথ বলেন, ‘‘অতীতে নদীর গভীরতা এতটাই ছিল যে ডুব দিয়ে মাটি তুলে আনতে পারতাম না। আর এখন তো হেঁটেই নদী পারাপার করা যায়।’’ যমুনা নদীর পাড়ের বাসিন্দারা জানালেন, নদী এখন তাদের কাছে আতঙ্কের কারণ। প্রত্যেক বছর বর্ষার সময়ে নদী ছাপিয়ে জল লোকালয়ে ঢুকে পড়ে। বিঘার পর বিঘা ফসল নষ্ট হয়। খেত থেকে ওই জল সরতে সময় লাগে প্রায় চার মাস। যমুনা-সংলগ্ন জমি এখন মূলত এক ফসলি জমিতে পরিণত হয়েছে। নদীর পাড়ের বাসিন্দাদের ঘর ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিতে হয়।

নদীর পাড়ে গিয়ে দেখা গেল, কেউ আর স্নান করেন না। মৎস্যজীবীরা বিকল্প কাজ বেছে নিয়েছেন। কচুরিপানার জন্য মশার উপদ্রব খুব বেশি। দিনের বেলাতেও মশারি টাঙাতে হয়। মহিলারা জানালেন, এই জলে স্নান করলে চুলকানি হয়। ত্বকে র‌্যাশ বেরোয়।

স্থানীয় আমকোলা, বাংলানি, শেরগড়, মাটিকুমড়া, নাইগাছি, গৈপুর, গোবরডাঙা, উত্তর বাগনা-সহ বহু এলাকার মধ্যে দিয়ে বয়ে গিয়েছে যমুনা। প্রবীণেরা জানালেন, এক সময়ে চাষিরা খেতের ফসল নৌকোয় করে হাটে বাজারে নিয়ে আসতেন। তাতে পরিবহণ খরচও কম হত। এখন সে সব পুরোপুরি বন্ধ।

প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, গাইঘাটায় যমুনা নদী রয়েছে প্রায় ১২ কিলোমিটার। গাইঘাটা বিধানসভা এলাকার মধ্যে রয়েছে গোবরডাঙা পুরসভা। এখানে নদী প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটার। স্বরূপনগরের মধ্যে দিয়ে যমুনা ইছামতীতে মিশেছে। অতীতে গোবরডাঙা এলাকায় যমুনা থেকে পলি তোলা হয়েছিল। অভিযোগ, নদীর পলি পাড়ে রাখায় বর্ষায় ফের তা নদীর মধ্যে চলে গিয়েছিল।

পুরসভা সূত্রের খবর, বর্ষার সময় পুরসভার ৩, ৮, ১১, ও ১৫ নম্বর ওয়ার্ড জলমগ্ন হয়। পুরপ্রধান সুভাষ দত্ত বলেন, ‘‘রাজ্য সরকারের কাছে যমুনা নদী সংস্কারের জন্য বহুবার দাবি করা হয়েছে। নদীর সংস্কার করতে বিশাল অঙ্কের টাকার দরকার। সরকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ভোটের পর কাজ শুরু হবে।’’

রাজনৈতিক দলগুলিও যমুনা নিয়ে চিন্তিত। গাইঘাটা কেন্দ্রের এ বারের তৃণমূল প্রার্থী পুলিনবিহারী রায় বলেন, ‘‘বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে যমুনা নদী সংস্কারে সচেষ্ট হব। নদীর নাব্যতা ফেরাতেই হবে।’’ ওই কেন্দ্রের সিপিআই প্রার্থী কপিলকৃষ্ণ ঠাকুরের কথায়, ‘‘আমি নিজে যমুনার পাড়ে বহুকাল কাটিয়েছি। ফলে নদীর জন্য আশপাশের এলাকার মানুষের সমস্যাটা বুঝি। দ্রুত নদী সংস্কারের মাধ্যমে নাব্যতা ফেরানো প্রয়োজন। শুধু বন্যা প্রতিরোধ নয়, প্রাকৃতিক ভারসাম্য বজায় রাখতেও তা জরুরি।’’রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে যমুনা নদী সংস্কারের বিষয়ে কিছু পদক্ষেপ অবশ্য করা হয়েছে। এখন স্বরূপনগরের টিপি থেকে চারঘাটা পর্যন্ত নদীর ৯ কিলোমিটার অংশে পলি তুলে সংস্কারের কাজ চলছে। বিদ্যাধরী ড্রেনেজ ডিভিশনের নির্বাহী বাস্তুকার সোমেন মিশ্র বলেন, ‘‘নদীর ওই এলাকায় সাত কিলোমিটার অংশে পলি তোলার কাজ শেষ হয়ে গিয়েছে। ওই কাজে খরচ পড়ছে প্রায় ১০ কোটি টাকা। তিন মিটার গভীর করে পলি তোলা হচ্ছে। এর ফলে এ বার বর্ষায় সাধারণ মানুষ উপকৃত হবেন।’’ তবে নদীর গাইঘাটা অংশে কবে সংস্কারের কাজ শুরু হবে, তা তিনি জানাতে পারেননি।

এই পরিস্থিতিতে ফের এসে গিয়েছে ভোট। স্থানীয় মানুষ জানেন, আবার বইবে প্রতিশ্রুতির বন্যা। আর নদী নষ্ট হতেই থাকবে তিলে তিলে।

খুনের নালিশ, গ্রেফতার স্বামী। রবিবার নামখানা থানার মদনগঞ্জ গ্রামের একটি মাঠ থেকে সায়েরা বিবি নামে এক বধূর দেহ উদ্ধার করা হয়েছিল। মঙ্গলবার তাঁকে খুনের অভিযোগে গ্রেফতার হল স্বামী আবদুল্লা খানকে। এ দিন তাঁকে কাকদ্বীপ এসিজেএম আদালতে তোলা হলে ৭ দিনের পুলিশি হেফাজত মঞ্জুর করেন বিচারক। মৃতার শ্বশুর এবং শাশুড়ি আগেই গ্রেফতার হয়েছিল। মাত্র দু’মাস হল বিয়ে হয়েছিল সায়েরার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন